Advertisement

Responsive Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী চা-শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্পে ২,৩১৯টি চা শ্রমিক পরিবারকে বিনামুল্যে ভূমির বন্দেবস্তু

আগরতলা, ৩ নভেম্বর : মুখ্যমন্ত্রী চা-শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্প'-এর মাধ্যমে রাজ্য সরকার রাজ্যের চা শ্রমিকদের কল্যাণে নানাবিধ উদ্যোগ চালু রেখেছে। মূলত মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহার আন্তরিক প্রচেষ্টাতেই এই প্রকল্পের বিভিন্ন কাজ ত্বরান্বিত হচ্ছে এবং বাগান শ্রমিকরা নানাবিধ সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের আওতায় মোট ৭,২৩০টি চা শ্রমিক পরিবারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২,৩১৯টি চা শ্রমিক পরিবারকে বিনামূল্যে ২ গন্ডা করে ভূমির বন্দেবস্ত দেওয়া হয়েছে। বাকী পরিবারগুলিকেও বিনামূল্যে ২ গন্ডা করে ভূমির বন্দেবস্তা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা এই প্রকল্পের সার্বিক রূপায়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। চা শ্রমিকদের উন্নয়নে এই প্রকল্পে যেসব সুবিধা প্রদানের বিষয়সমূহ রয়েছে সেগুলির সফল বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেবার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন।
ভৌগোলিক কারণে ত্রিপুরা রাজ্য ঐতিহ্যগতভাবে চা উৎপাদনকারী রাজ্য হিসেবে শ্রেণীভুক্ত। এই রাজ্যে মোট ৫৪টি চা বাগান রয়েছে। ২১টি চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা এবং ২৫০০-এর বেশী ক্ষুদ্র চা-পাতা উৎপাদনকারী রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতিবছর প্রায় ৯ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয় আমাদের এই পাহাড়ী রাজ্যে, যা আমাদেরকে দেশের ১৬টি চা উৎপাদনকারী রাজ্যের মধ্যে পঞ্চম স্থানে রেখেছে। শতবর্ষের অধিক পুরোনো এই চা শিল্প ত্রিপুরার এক অন্যতম রাজস্ব উৎপাদনকারী শিল্প।
সহস্রাধিক কর্মী রাজ্যের চা বাগানগুলিতে কাজ করেন, যার মধ্যে ৭৫ শতাংশই মহিলা। এই সমস্ত চা বাগান কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই আমাদের রাজ্য চা শিল্পে সারাদেশের মধ্যে অগ্রণী ভূমিকায় এগিয়ে আসছে। কিন্তু এই চা শ্রমিকদের মধ্যে যারা বহিরাজ্য থেকে এসেছিলেন তাদের জীবনধারণের প্রাথমিক যে ন্যূনতম শর্ত, তা থেকে তারা অনেকক্ষেত্রেই বঞ্চিত ছিলেন । মজুরি খুব কম এবং প্রথাগত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিসেবা তাদের নাগালের বাইরে ছিল। এই কারণে চা শ্রমিকদের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নতির জন্য রাজ্য সরকার ২০২২ সালে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ “মুখ্যমন্ত্রী চা শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্প” নামে একটি প্রকল্প চালু করা করে । এই প্রকল্প চা-বাগান শ্রমিক এবং চা বাগানের উপর নির্ভরশীলদের জন্য একটি উন্নয়নকামী প্রকল্প । গত ২০২২ সালে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহজী।
চা বাগান শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যরক্ষার উপরও মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা আন্তরিকভাবে সচেষ্ট । নিয়মিত স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন ছাড়াও চা-বাগান শ্রমিক পরিবারদেরকে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য সম্পর্কীত বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদানের জন্য মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন । শ্রমিক পরিবারের সন্তানদের শিক্ষা ক্ষেত্রে আরো কিভাবে সুযোগ সুবিধা দেওয়া যায় সেবিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী আন্তরিকতার সাথে বিচার বিশ্লেষণ করছেন।
এই প্রকল্পের মুখ্য উদ্দেশ্য হল চা বাগান শ্রমিকদের আর্থ-সামাজিক - ক্ষমতায়ন, স্বাস্থা এবং শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নয়ণ এবং চা বাগান শ্রমিকদের জন্য রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন স্কিমের সঠিক রূপায়ণ করা। এই প্রকল্পে যে সমস্ত কর্মসূচী রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ব্যক্তিগত মালিকানায় ভূমিহীন পরিবারগুলিকে থাকার জন্য জায়গার ব্যবস্থা করা, নিজের ভিত্তিতে পরিত্যক্ত চা-বাগানগুলির জায়গা সমবায় ভিত্তিতে চা বাগান শ্রমিকদের জন্য বরাদ্ধ করা, ন্যূনতম সুবিধা যেমন আবাসন, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশান, নিরাপদ, পানীয়জল, বিদ্যুৎ এবং সকল ঋতুর উপযোগী রাস্তার সুবিধা দেওয়া, উপযুক্ততা অনুসারে প্রতিটি পরিবারে প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড রেশনকার্ড প্রদান করা, চা- শ্রমিকদের পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার জন্য নানাবিধ সহায়তা প্রদান ইত্যাদি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ