Advertisement

Responsive Advertisement

প্রকৃতি, প্রেম ও গোয়া


                                    ড. শিল্পী ভট্টাচাৰ্য 

অক্টোবরের প্রায় শেষের দিক। ঝকঝকে নীল আকাশে বেশ চড়া রোদ্দুর। যথেষ্ট তাপ। সেই তাপে আমার যদিও বিশেষ কোনো উত্তাপ নেই। রোদ, গরম, শীত, বর্ষা সবটাই তো মনে। তবে কোনো এক গরমের ছুটির কাঁকফাটা রোদের সকালে বাবা যখন মাছ বাজারে বিশু কাকার সাথে তরতাজা ইয়া বড়ো দেশি কাতলা মাছটির উৎপত্তি ও তার যথাযত দর নিয়ে গভীর বাক্যলাপে মগ্ন, আমি তখন বাবার পাশে বাবার অ্যাসিস্ট্যান্ট কম ট্রেনই, সেই আমিই গরমে তখন অতিষ্ট। বাবা বলেছিল "গরমের দিনে তো গরম হবেই, অভ্যেস করো"। 

মাথায় একটা টুপি আর বিচ থেকে কেনা একটি খয়েরি রোদ চশমা আমার সম্বল। যদিও মধ্যে গগনে প্রখর ভাবে রবি বিরাজমান, বইছে হালকা বাতাস, মনের প্রফুল্লতা তখন শীর্ষে।

পায়ের চটি খুলে খালি পায়ে দ্রুত হেঁটে এগিয়ে গেলাম সমুদ্রের জলে পা ডোবাতে। এই বিচটির অনেকটা অংশ লালচে, পাথুরে, যেন গালিচা বিছানো।  
সমুদ্রের ঢেউ পাড়ের পাথরে ধাক্কা খেয়ে জলের সাদা ফেনা তৈরী করছিলো, ব্যালে ডান্সার দের মতো আকাশের দিকে পড়নের সাদা স্কার্ট উড়িয়ে আবার শান্ত হয়ে ফিরছে সীমান্তে।

জলের ছোট বড়ো ছিটে আমায় বারবার ছুঁয়ে যাচ্ছিলো, তার আলতো মিষ্টি চুম্বন কখনো আমার গালে, ঠোঁটে আবার কখনো পায়ে, হাতে, গলায়। ঠান্ডা জল কণার মিষ্টি স্পর্শ সূর্যের তাপ, গরমের অনুভূতি মিলিয়ে দিয়েছিলো কোথায় কে জানে।
ইচ্ছে হয়েছিল বসেই থাকি সারা দুপুর, স্নাত হই তাঁর নির্মল স্নেহের পরশে, তাঁরই সাথে দেখি সূর্য অস্ত যাওয়া নীলিমার লালিমা।

পায়ের দিকে তাকালাম পাশেই লালচে পাথরে সবুজ ফার্ন গজিয়েছে, যত্র তত্র কাঁকড়ার বাসস্থান, এক গর্তে, অসংখ্য ছোট মাঝারি কাঁকড়া খেলে বেড়াচ্ছে গর্তের চারিপাশে।

ওদিকে আমার বরের প্রচন্ড গরম লাগছে, সে লাইম সোডা, শশা, ডাবের জল এসব নিয়ে তৎপর হয়ে পড়েছে। আমিও শেষে গিয়ে পান করলাম পানীয়, কোকাম জুস, গোয়ার বিশেষ ফলের রস।

এই কি সেই অঞ্জুনা বিচ, ভেসে উঠল কামাল হাসান আর রতি অগ্নিহোত্রীর লিপে "তেরে মেরে বিচ মে, কায়সা হ য়ে বন্ধন অঞ্জনা, তুনে নেহি জানা মেনে নেহি জানা", তখনকার মুভির প্লট কত সহজ সরল ছিল, কত্ত ছোটবেলায় দেখেছিলাম আজ ও মনে কোথাও গেথে আছে ওদের ব্যর্থ প্রেমের গল্পটি।

পালোলেম থেকে শুরু করে আরাম্বল, ভ্যাগাটোর থেকে মর্জিম, সবই বিচ তবে ভিন্ন রকমের।

একটি বিদেশিনী যুবতী তাঁর প্রিয়তম কে রোদের ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট রে থেকে রক্ষা করতে লেপে দিচ্ছে সানস্ক্রিন। অন্যদিকে এক যুগল একটি ডাব থেকে দুই স্ট্র দিয়ে শুষে নিচ্ছে জীবনের স্বাশ।
সুখ দুঃখের গল্পে বিভোর বালিতে বসে এক প্রৌঢ় দম্পতি।
অদূরে যখন দিনের শেষের তেজহীন সূর্য সমুদ্রের কোলে মিশে যাওয়ার প্রস্তুতিতে নিমগ্ন, আকাশ হয়ে উঠেছে তখন অদ্ভুত বেগুনি মিশ্রিত গোলাপি রঙে রাঙা, দিন ও রাতের এই সন্ধিক্ষনে দুই প্রেমিক একে অপরের হাত ধরে হেঁটে চলেছে ঢেউয়ের মৃদু লয়ে পায়ে পা মিলিয়ে কোন সুদূরে।

সন্ধে শেষে যখন আঁধার ছেয়েছে আকাশ বাতাস জুড়ে, আসমান পড়েছে চন্দ্রমার চাকচিক্য ভরা রুপালি বসন। 
 স্বপপুরীর মতো পালোলেম বিচ সেজে উঠেছে হাজার মোম বাতির আলোর রোশনাইএ, গিটারে তখন "Welcome to the hotel California", 
 "Baby, I love you to want me, The way that I want you", the way that it should be", 
   মাইক হাতে গাইছে এক তরুণ যুবক।

কথোপকথন আর অনুভবের আবেশের মাঝেই টেবিলে পরিবেশীত হলো Sea food salad, Prawn salad, Kingfish Sizzler, Mackarel fry ইত্যাদি।মকটেল সহযোগে রশিয়ে রশিয়ে উপভোগ করলাম সকলে মিলে।

"Nothing's gonna change my love for you", গুনগুন করতে করতে সেদিনের মতো রিটায়ার করলাম।
ঘড়িতে তখন রাত ১১:৩০।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ