আগরতলা, ৩ নভেম্বর: রাজ্যে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ মোকাবিলায় টিএসআর জওয়ানদের ভূমিকা খুবই উল্লেখযোগ্য। কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী বিএসএফ ও সিআরপিএফ সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে যেভাবে টিএসআর জওয়ানরা কাজ করেছেন সেটা প্রশংসার দাবি রাখে। সন্ত্রাসবাদ দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেও অবদান রেখে চলেছে টিএসআর বাহিনী।
শুক্রবার নরসিংগড়ের কেটিডিএস পুলিশ ট্রেনিং একাডেমিতে টিএসআর ইন্ডিয়ান রিজার্ভ (পুরুষ ও মহিলা) জওয়ানদের পাসিং আউট প্যারেডে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আজ আমাদের রাজ্যের জন্য খুবই একটি গর্বের দিন। এই প্রথমবারের মতো টিএসআর বাহিনীতে যুক্ত হলেন মহিলা কর্মীরা। তিনি বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে যে, দীর্ঘ প্রশিক্ষণ শেষে অর্জন করা সফলতা নিয়ে সততা এবং নিষ্ঠার সাথে জনগণের সেবায় নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন নবনিযুক্ত টিএসআর জওয়ানগণ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, টিএসআর জওয়ানরা রাজ্যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, আইন শৃঙ্খলা রক্ষা সহ বিভিন্ন কাজে বিশেষ অবদান রেখেছেন টিএসআর জওয়ানরা। ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে টিএসআরের দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়ন গড়ে তোলা হয়। বাংলাদেশের সাথে রাজ্যের প্রায় ৮৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত এলাকায় পাহারার জন্য বিএসএফের সাথে নিরাপত্তার দ্বিতীয় স্তর হিসেবে টিএসআর জওয়ানদের সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছিল। ত্রিপুরা পুলিশ রাষ্ট্রপতির কালার্স সম্মানে সম্মানিত হয়েছে।
এর পাশাপাশি টিএসআর জওয়ানরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করা, ভিআইপিদের সুরক্ষা দেওয়া এবং শিল্প এলাকায় নিরাপত্তা প্রদান করে থাকেন। এছাড়া ত্রিপুরাকে মাদক মুক্ত রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্যও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। নয়াদিল্লিতে সংসদ ভবনের নিরাপত্তায় দিল্লি পুলিশের সাথে মোতায়েন থাকেন টিএসআর জওয়ানরা। ছত্তিশগড়েও টিএসআরের একটি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আরো বিভিন্ন রাজ্য থেকে টিএসআর বাহিনী মোতায়েনের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ আসে। নির্বাচনের সময়েও টিএসআর বাহিনী চেয়ে অনুরোধ করা হয়। বিগত নির্বাচনগুলিতেও নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য টিএসআর বাহিনী বিভিন্ন রাজ্যে পাঠানো হয়েছিল।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্য সরকার আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে আগরতলা, উদয়পুর, ধর্মনগর, আমবাসা, কুমারঘাট এবং বিলোনিয়ায় টিএসআরের জন্য আবাসন স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে।
উল্লেখ্য, টিএসআরের ১৪তম এবং ১৫তম ব্যাটেলিয়নের জন্য ১৩৭ জন মহিলা ও ১,২৭৬ জন পুরুষ সহ মোট ১,৪১৩ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। তাদের মোট চারটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পাসিং আউট প্যারেড অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন সহ আরক্ষা প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকগণ। এদিন নরসিংগড়স্থিত কেটিডিএস পুলিশ ট্রেনিং একাডেমিতে অনুষ্ঠিত টিএসআর (আই আর) বাহিনীতে নবনিযুক্ত পুরুষ, মহিলা এবং হাবিলদার ইঞ্জিন ফিটার কর্মীদের পাসিং আউট প্যারেড প্রত্যক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মোট ১০টি প্লাটুন প্যারেডে অংশগ্রহণ করে। প্যারেড প্রদর্শন শেষে জওয়ানদের অভিবাদন গ্রহণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে বিভিন্ন প্ল্যাটুনের নেতৃত্বে থাকা অধিনায়কদের হাতে ট্রফি তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন পাসিং আউট হওয়া টিএসআর জওয়ানদের মধ্যে পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে ৩৩১ জন ছিলেন। অনুষ্ঠানে তাদের সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়।
0 মন্তব্যসমূহ