Advertisement

Responsive Advertisement

বাজি, শব্দ দূষণ পরিবেশ ও শরীরে এর ক্ষতিকর প্রভাব


                                 ড. হৈমন্তী ভট্টাচার্জী

বাজির দূষিত বায়ুর জন্য কমবেশি সকল নাগরিকের নিশ্বাসে বিস্তর অসুবিধা হয়। গৃহপালিত পশুরাও বাজির শব্দে সন্ত্রস্ত হয়।
বাজির সূচনা হয় খ্রিস্টপূর্ব দু’শো বছরেরও আগে। একদা বাজি ব্যবহৃত হত শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইতে ও অশুভ আত্মার দূরীকরণে। দীপাবলির উৎসবে বাজি ব্যবহারের সুদীর্ঘ ইতিহাস তৈরি হয়েছে। মানুষ বাজি নিয়ে মাতামাতি করলেও এর কুফল নিয়ে ভাবছে না। বাজির জ্বলনে নাইট্রাস অক্সাইড দীর্ঘ সময় ধরে বায়ুমণ্ডলে থেকে বায়ু দূষিত করে, যা কেবলমাত্র ভারী বৃষ্টি ও প্রবল ঝড়েই পরিশুদ্ধ হয়। শব্দদূষণের জেরে প্রবীণ নাগরিকদের হার্টের সমস্যা বেড়ে যায়। বাজির বর্জ্য দূষণ ছড়ায়। বাজির জেরে বিশাল অগ্নিকাণ্ডের কথা সুবিদিত। গর্ভবতী নারী ও গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতির কথাও জানা যায়। দূষিত বায়ুর জন্য কমবেশি সকল নাগরিকের নিশ্বাসে বিস্তর অসুবিধা হয়। গৃহপালিত পশুরাও বাজির শব্দে সন্ত্রস্ত হয়।বাজিতে ব্যবহৃত তামা হার্টে প্রদাহ তৈরি করে ও ক্যাডমিয়াম রক্তে অক্সিজেন সরবরাহে বাধা দেয়। জ়িঙ্ক বা দস্তার জন্য বমি ও জ্বর হতে পারে, সিসা স্নায়ুর ক্ষতি করে।
 আজকাল দেখা যাচ্ছে দীর্ঘদিন ১০০ ডেসিমেল শব্দের মধ্যে কাটালে বধিরতা দেখা দেয়। কারণ ১০০ ডেসিমেল শব্দের ফলে অন্তরকর্নের অর্গান অফ কর্টির যা শ্রুতি যন্ত্র হিসেবে পরিচিত তার কোর্সগুলি একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে ১৬০ ডেসিবেল মাত্রার বিকট শব্দের ফলে কানের পর্দা ছিঁড়ে যায়। ফলে মানুষ স্থায়ীভাবে বধির হয়ে পড়ে। এই বোমাবাজির ফলে মানুষ কানে খুব কম শুনতে পায়। অনেকে আবার একেবারে শুনতে পাই না। ফলে পরিবেশে বধিরের প্রভাব বেড়েই চলছে। ফলে বোমাবাজিতে শ্রবণ যন্ত্রের ওপর গভীর প্রভাব বেড়েই চলছে।
*মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব* 
 যন্ত্রণাদায়ক শব্দ মানুষের স্নায়ুতন্ত্র তথা মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ডকে প্রভাবিত করে। অনেক সময় স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়, মানসিক অবসাদ দেখা দেয়। বিকট বোমাবাজির ফলে মাথা ধরে থাকে, শরীরে বিভিন্ন প্রকার উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া কারো কারোর মধ্যে বমিভাব ও খিচুনি ভাব দেখা যায়। বিভিন্ন প্রকার কাজেও একাগ্রতা নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় অনিদ্রা ও শুরু হয়। আতশবাজির শব্দের ফলে স্বয়ংক্রিয় নার্ভ তন্ত্রের ক্রিয়া ও ব্যাহত হয়। বোমার শব্দে মস্তিষ্কের ওপর গভীর প্রভাবের ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়ে যায়। ছাত্র-ছাত্রীরা কিছুই মনে রাখতে পারে না। 
*হৃদযন্ত্রের ওপর প্রভাব* – 
দীর্ঘস্থায়ী বিকট আওয়াজ মানুষের হৃদযন্ত্রের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এতে হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যায় বা কমে যায়। অনেক সময় রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা হাড়স পায়। রক্তে গ্লুকোজ এর মাত্রা হাশ পাই বা রক্তে শ্বেতকণিকার সংখ্যা বেড়ে যায়। শব্দ দূষণের ফলে অনেক সময় ধমনীর রক্তের চাপও বেড়ে যায়। সুতরাং এই বোমা বাজি শব্দ দূষণের ফলে মানুষের হৃদ রোগাক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেছেন।
*চক্ষুর উপর প্রভাব* – বোমাবাজির ফলে আরেকটি বিশেষ ত্রুটিহীন প্রভাব হল চক্ষু। মানুষের অনেক সময় এই শব্দ দূষণের ফলে দৃষ্টিশক্তির ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়। অনেক সময় এই শব্দ দূষণের ফলে চোখের তারারন্দ্রের প্রসারন ঠিকমতো হয় না। এই বাজে পটকা রংবেরঙের আলোর ফলে মানুষের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়। মানুষ তখন পাগলের মতো হয়ে যায়। মানুষ তখন নিজেকে অসহায় মনে করে।
*পরিবেশের ওপর প্রভাব* – শব্দ দূষণের ফলে বহু প্রাণী ও পাখি প্রজননে অংশ নিতে পারেনা। ফলে ওই পাখিও প্রাণীর নতুন অকথ্য পৃথিবীতে আসে না। ফলে পরিবেশের বাস্তরীতির ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। এবং তার প্রভাব মানুষের মধ্যেও পড়ে। শীতের দেশের পাখিরা এ ধরনের দূষণের ফলে খুব কম পরিমাণে বর্তমানে আমাদের দেশে আসে। বিভিন্ন প্রকার বিকট শব্দ মানুষের বাসস্থানে ফাটল ধরায় দরজা জানালার ক্ষতি করে। মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে বাধ্য হয় এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়।
*সামাজিক প্রভাব* – শব্দ দূষণ মানব স্বাস্থ্যের ওপর গভীরভাবে প্রভাব পড়ছে। কোন পূজা পার্বণ বা বিয়ে বাড়ি উপলক্ষে বা কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যখন মাইক বাজানো হয় বা বাজি ফাটানো হয় তখন এই বাজির শব্দ থেকে শব্দ দূষণ হয়।
শব্দ মানুষের প্রয়োজনেই সৃষ্টি। কিন্তু সেই শব্দই আজ দানব হয়ে ধ্বংসের করাল নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তাই এর হাত থেকে রেহাই পেতে হলে প্রত্যেক মানুষকেই আজ সচেতন হয়ে অনর্থক শব্দ সৃষ্টির প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি স্তরে শব্দ দূষণের প্রতিরোধ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। তাহলে এই শব্দ দূষণ জনিত সমস্যা থেকে মানব সভ্যতাকে রক্ষা করা সম্ভবকর হবে।
 শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকার আইনগত উদ্যোগ নিয়েছেন। এই শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট পাঠক্রম রচনা করা হয়েছে। উন্নত ধরনের প্রযুক্তিবিদ্যা ব্যবহারের ফলে শব্দদূষণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ও হয়েছে। এজন্য বিভিন্ন সংস্থা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি ও বিভিন্ন সংস্থা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমাজে বিভিন্ন কমিশন বিশেষ করে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ উদ্যোগ নিয়েছে। 
*সর্বোপরি মানুষের সচেতনতা বোধ না থাকলে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার কিছুতেই সম্ভবপর নয়*।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ