আগরতলা, ২৫ নভেম্বর: নেশা কারবারিদের বিরুদ্ধে রাজ্যে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সমাজকে ধ্বংসের পথে নেওয়া এই বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নেশা বা মাদক দ্রব্যের উৎস বা সাপ্লাই চেন পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে। সেই দিশা নিয়েই কাজ করছে রাজ্যের বর্তমান সরকার।
শনিবার দক্ষিণ জেলার বিলোনিয়া বিকেআই দ্বাদশ স্কুলের মাঠে আয়োজিত নেশামুক্ত সুপার লিগ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
উদ্বোধকের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নেশার বিরুদ্ধে অভিযান জারি রেখেছে আরক্ষা দপ্তর। রাজ্যের চুরাইবাড়ি, ধর্মনগর সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিনিয়ত পুলিশের অভিযানে প্রচুর পরিমাণ নেশাদ্রব্য ধরা পড়ছে। অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৭০ সালে এই মাঠে স্কুল গেমসে প্রতিযোগী হিসেবে অংশগ্রহণ করি। আবার অনেক বছর পর এই মাঠে এসেছি। খেলা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। তাই খেলতে হবে। খেলার মাধ্যমেই শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ সবল থাকা যায়। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও খেলার বিশাল ভূমিকা রয়েছে। খেলার পাশাপাশি পড়াশুনাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা ও এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত গড়ে তোলার অঙ্গিকার নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী ডা: সাহা বলেন, নেশা আমাদের সর্বনাশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সবসময় নেশামুক্ত ভারত গড়ে তুলতে গুরুত্ব দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও নেশার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করার উপর জোর দিয়েছেন। রাজ্য সরকারের তরফে নেশার বিরুদ্ধে পুলিশকে দিয়ে যা যা কাজ করার সেটা করা হচ্ছে। কিন্তু এরপরেও নেশার বিরুদ্ধে সচেতনতা হিসেবে দক্ষিণ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেশামুক্ত সুপার লিগ ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন প্রশংসার দাবি রাখে। এজন্য জেলাশাসককে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই টুর্নামেন্টে ৮টি ব্লক, ২টি পুর পরিষদ ও ১টি নগর পঞ্চায়েত থেকে বিভিন্ন দল অংশ গ্রহণ করেছে। প্রায় ২৮টি লিগ ম্যাচ এই টুর্নামেন্টে অনুষ্ঠিত হবে। যা চলবে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। দুটি সেমি ফাইন্যাল ও একটি ফাইন্যাল ম্যাচ হবে। সেই সঙ্গে টুর্নামেন্টে বেশকিছু নিয়ম রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, নেশার দরুণ নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি সহ পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। দুই থেকে তিন প্রজন্ম নেশার কবলে পরে শেষ হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের ছেলেমেয়েদের নেশা থেকে বাঁচাতে অভিভাবকরা ছুটে আসেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগে শুধু ছেলেদের নেশায় আসক্ত হতে দেখা যেতো। কিন্তু এখন ছেলেদের সাথে মেয়েরাও নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। যা খুবই উদ্বেগের। তাই এসকল ছেলেমেয়েদের নেশা থেকে বিরত করতে এবারের বাজেটে রাজ্যের ৮টি জেলায় নেশামুক্তি কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য আর্থিক সংস্থান রাখা হয়েছে। নেশাদ্রব্য বাজেয়াপ্ত করা ও ধ্বংস করার দিক থেকে ত্রিপুরা অন্যতম স্থানে রয়েছে। ত্রিপুরাকে করিডোর বানিয়ে মায়ানমার, মিজোরাম হয়ে আসা নেশাদ্রব্য বাংলাদেশে যায়। কিন্তু মাঝপথে ত্রিপুরার ছেলেমেয়েরা নেশায় আসক্ত হয়ে যায়।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মানব শরীরের শিরাপথে ইনজেকশন দিয়ে নেশাদ্রব্য গ্রহণের বিষয়ে ব্যাপক উদ্বেগ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, শিরাপথে ইনজেকশন দিয়ে নেশাদ্রব্য নেওয়ার ফলে এইডস রোগী এবং হেপাটাইটিসের মতো রোগ উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। তাই এই বিষয়ে আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী টিংকু রায়, বিধায়ক মাইলাফ্রু মগ, বিধায়ক স্বপ্না মজুমদার, দক্ষিণ জেলার জেলাশাসক সহ অন্যান্য অতিথিগণ। উদ্বোধনী পর্বে নেশামুক্ত ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান মুখ্যমন্ত্রী। টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে গোটা মহকুমায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা প্রতিফলিত হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ