ড. হৈমন্তী ভট্টাচার্যী
বর্তমানে একাধিক পুষ্টিবিদরা চিনির বদলে গুড়কে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। কিন্তু কেন? তাহলে কি গুড় চিনির তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর?
ভারতের প্রায় প্রত্যেক রান্নাঘরে চিনি আর গুড় পাওয়া যায়। এই দুটো উপাদানই খাবারে মিষ্টির স্বাদ যোগ করতে ব্যবহার করা হয়। চিনি মূলত সাদা ক্রিস্টালের মত ছোট দানার হয়, অন্য দিকে গুড় বাদামী বর্ণের হয়। দুটোই তৈরি হয় আখের রস থেকে। কিন্তু দুটোর প্রক্রিয়া পদ্ধতি দুটোর থেকে ভিন্ন।
দুটোর স্বাদ মিষ্টি হলেও একে অপরের থেকে আলাদা। এমনকি চিনি অনেক বেশি মিষ্টি এবং নিজস্ব কোনও স্বাদ নেই। বর্তমানে একাধিক পুষ্টিবিদরা চিনির বদলে গুড়কে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। কিন্তু কেন? তাহলে কি গুড় চিনির তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর? তাহলে আসুন জানা যাক, আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কোনটা বেশি উপকারী।
গুড়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান যেমন ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং জিঙ্ক রয়েছে। এই কারণে যাদের রক্তাল্পতা রয়েছে তাদের জন্য গুড় খুব উপকারী। গুড় তৈরিতে কোনও প্রকার ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় না। গুড় অনেক বেশি বিশুদ্ধ হয় চিনির তুলনায়। অন্যদিকে, চিনি তৈরিতে একাধিক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক।চিনি শরীরে দ্রুত মিশে যায়। কিন্তু গুড় রক্তে সরাসরি মেশে না এবং ধীরে ধীরে শোষিত হয়। গুড় চিনির মত দ্রুত রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে না। সুতরাং, ডায়বেটিসের রোগীদের কাছে গুড় অনেক বেশি সুরক্ষিত। গুড় চিনির থেকে অনেক বেশি মিষ্টি এবং উচ্চ গ্লাইসেমিক যুক্ত একটি খাবার। কিন্তু এটি চিনির থেকে অনেক কম ক্যালোরি যুক্ত একটি খাবার।
চিনির মধ্যে কোনও পুষ্টিই নেই। শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ছাড়া চিনি শরীরে কোনও কাজ করে না। চিনির মধ্যে কোনও স্বাস্থ্য উপকারিতা নেই। কিন্তু গুড়ের মধ্যে এক নয় বরং একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা বর্তমান। গুড় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। গুড় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে।
আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে, গুড়কে নিঃশ্বাস জনিত সমস্যা দূর করার কাজে ব্যবহার করা হয়। এর অ্যান্টি অ্যালার্জি বৈশিষ্ট্য শ্বাসযন্ত্রের বাইরের বিষাক্ত পদার্থ এবং যে কোনও শ্লেষ্মা দূর করতে সাহায্য করে। এটি প্যাসেজ পরিষ্কার করে হাঁপানি, কাশি, সর্দি এবং বুকের অন্যান্য চিকিৎসায় সহায়তা করে।
গুড় ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং এর মধ্যে থাকা পটাসিয়াম জল ধরে রাখতে সাহায্য করে যার ফলে আপনি গুড় খেলে ওজন বৃদ্ধি হয় না। কিন্তু চিনি খেলেই তা রক্তে শর্করার সঙ্গে মিশে যায় এবং ওজন বেড়ে যায়। অন্যদিকে গুড় শরীর থেকে টক্সিন পদার্থ দূর করে এবং হজমে সহায়তা করে।
গুড়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা জেনে বুঝতেই পারছেন যে, চিনির তুলনায় গুড় কতটা বেশি কার্যকরী। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে চিনির থেকে বেশি গুড়ই সহায়ক অর্থাৎ গুড় স্বাস্থ্যের জন্য সব সময়ই একটি ভাল বিকল্প।
0 মন্তব্যসমূহ