আগরতলা, ১০ডিসেম্বর : প্রকৃত জনজাতি অংশের মানুষের অধিকার রক্ষার আহ্বান এবং ধর্মান্তরিত জনজাতি অংশের মানুষের তফসিল জাতির অধিকার বাতিল করার দাবিতে ২৫ ডিসেম্বর আগরতলায় বিশাল রেলির আয়োজন করা হয়েছে। জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চ ত্রিপুরা প্রান্তের উদ্যোগে হবে এই রেলি।
গত ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চ ত্রিপুরা প্রান্তের উদ্যোগে এক সাংবাদিক সম্মেলন করা হয় এরপর বিভিন্ন সামাজিক ব্যক্তিত্ব জনপ্রতিনিধি ডিলিস্টিং এর পক্ষে এবং বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চ ত্রিপুরা প্রান্তের পক্ষ থেকে তাঁদের প্রত্যেককে এজন্য ধন্যবাদ জানানো হয়। কারণ এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং এর গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন বলে শনিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চ'র ত্রিপুরা প্রান্তের সহ সংযোজক কার্ত্তিক ত্রিপুরা।এদিন আগরতলা প্রেস ক্লাবে তাদের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে এদিন এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এই বৈঠকের উপর সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথাগুলো বলেন তিনি। পাশাপাশি আরো জানান এদিনের এই বৈঠকে রাজ্যের বিভিন্ন জনজাতিগোষ্ঠীর সমাজপতিরাও উপস্থিত ছিলেন।
গত সাংবাদিক সম্মেলনের পর অনেকে তাদের মূল বক্তব্যকে ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করে জনমনে বিভ্রান্ত ছড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। অনেকেই আবার সঠিক ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তবে সাংবাদিক সম্মেলনের পর জনজাতি সমাজের বড় অংশ যেভাবে সমর্থন এবং সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে তাতে তাদের মনে হচ্ছে ২৫ ডিসেম্বরের আগরতলা শহরে যে রেলি এবং জনসভার আয়োজন করা হয়েছে, তাতে জনজাতিদের ঢল নামবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চ হল একটি অরাজনৈতিক সংগঠন এবং কোন রাজনৈতিক দলের মদতপুষ্ট হয়। ডিলিস্টিং এর দাবি এই প্রথম নয়, বলেও জানান কার্তিক ত্রিপুরা। এর আগে ১৯৬৬ - ৬৭ সালে সাংসদ ডঃ কার্ত্তিক ওরাং এর নেতৃত্বে ডিলিস্টিং এর দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু হয় এবং ১৯৭০ সালে ডিলিস্টিং এর দাবি জয়েন্ট পার্লামেন্দ্রী কমিটির সুপারিশ সহ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নিকট (তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়) জমা দেওয়া হয় কিন্তু এখনও কিছু করা হয় নি। ডিলিস্টিং এর দাবি পূরণ না হলে জনজাতিয় কৃষ্টি সংস্কৃতি ও সামাজিক রীতি নীতি হারিয়ে যেতে পারে বলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
কারণ ধর্মান্তরিত ব্যক্তি নিজ সমাজের রীতি নীতি অনুসরণ করে না। তাই তারা শুধু তাদের নিজস্ব জনজাতীয় ধর্ম, সংস্কৃতি ও রীতিনীতিকে আদি রূপে রক্ষা করার জন্য সাংবিধানিক সুরক্ষা অধিকারের দাবি জানাচ্ছেন।
সাংবিধানিক সুরক্ষা বলতে তারা বলতে চাইছেন ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৪১ ধারায় তফসিলি জাতি এবং ৩৪২ ধারাই তফসিলি জনজাতিদের বৈশিষ্ট নিরিখে সাংবিধানিক বিশেষ আরক্ষণের সুবিধা দেওয়া আছে। সংবিধানের ৩৪১ ধারার ব্যাখ্যা অনুযায়ী তফসিলি জাতির কোন ব্যক্তি তার স্বধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হলে সেই ব্যক্তির সাংবিধানিক বিশেষ সুবিধা বাতিল হয়। তাই তাদের দাবি জনজাতীয় ধর্ম, সংস্কৃতি ও রীতিনীতিকে আদি রূপে রক্ষা করার জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে অনুচ্ছেদ ৩৪২ ধারাকেও ৩৪১ ধারার মত করা হোক।
ডিলিস্টিং-এর দাবি নিয়ে সমগ্র ভারত জুড়ে গ্রাম, ব্লক, জেলা স্তরে এবং অন্তত ১৫ টি রাজ্যে সমাবেশ সম্পন্ন হয়েছে এবং আরও কিছু সমাবেশের জন্য কাজ এগিয়ে চলছে। ২৮ লক্ষ জনজাতি জনগণের স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান মন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে বলেও জানিয়েছেন।
ভারতের সুপ্রীম কোর্ট কেরলের একটি মামলায় শুনানির সময় যা বলেছেন তা হল, কোন ব্যক্তি ধর্ম পরিবর্তনের পর তফসিলি জনজাতি সদস্য থাকবে কিনা তা নির্ভর করে ধর্ম পরিবর্তনের পর ঐ ব্যক্তি সামাজিক ভাবে অযোগ্য ও দুর্বল কিনা, সে পরম্পরাগত সারা ট্রেক রীতিনীতি পালন করছে কিনা তার উপর ।
ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতে প্রত্যেকের নিজের পছন্দ মত ধর্মচারনের অধিকার রয়েছে তারা কোন ধর্মের বিরোধী নয়। তবে, ধর্মান্তরনের পর যারা পরম্পরাগত কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও সামাজিক রীতি-নীতি অনুসরণ করে না, এমন কি বিভিন্ন ভাবে এবং বিভিন্ন উপায়ে সরকার প্রদত্ত তফসিলি জনজাতি সুবিধা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিসাবে ডবল সহায়তা লাভ করে আসছেন, তাদের অবশ্যই তফসিলি জনজাতি সুবিধা থেকে বাতিল করা হোক এই দাবী জানান। তাদের দাবীকে সামনে রেখে যে ২৫ ডিসেম্বর যে রেলির ডাক দিয়েছেন তাতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার জন জাতি অংশের মানুষ সামিল হবে বলে জানান।
এদিন প্রেসক্লাবের এই বৈঠকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিটি জনগোষ্ঠীর সমাজপতিরা উপস্থিত হয়েছিলেন।
0 মন্তব্যসমূহ