আগরতলা, ২৯ ডিসেম্বর: রাজ্যে গুণগত শিক্ষার প্রসারে বর্তমান রাজ্য সরকার আন্তরিক। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। রাজ্যে একটি এডুকেশন হাব তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখন রাজ্যে আসছে। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে তারা। এর পাশাপাশি রাজ্যে একাধিক কলেজ গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এখন ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি চালু হয়েছে। এর ফলে উপকৃত হবে ছাত্রছাত্রীরা। শুক্রবার আগরতলার ধলেশ্বরের প্রাচ্য ভারতী উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হীরক জয়ন্তী বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত রক্তদান শিবিরের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
উদ্বোধকের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মন্দিরের মতোই। এখান থেকেই আমাদের জীবনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুল ও কলেজের সঙ্গে প্রত্যেকের নিবিড় সম্পর্ক ও নাড়ির টান থেকে যায়। রাজ্য সরকার গুণগত শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে কাজ করে চলছে। রাজ্যের প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে দক্ষতা বিকাশের মাধ্যমে স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীদের গুণগত শিক্ষা প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ডিজিটাল ইন্ডিয়ার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর মার্গ দর্শনে রাজ্যেও স্কুলগুলিতে ডিজিটালের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সেটা করা হচ্ছে। সাহিত্য সংস্কৃতি ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শিক্ষায় পূর্ণতা আসতে পারে। সাহিত্য সংস্কৃতির উন্নতি হলেই গুণগত শিক্ষার বিকাশ ঘটে।
মুখ্যমন্ত্রী ডা: সাহা বলেন, প্রাচ্য ভারতী স্কুলের ৭৫তম বর্ষ পূর্তি উদযাপন নিঃসন্দেহে খুবই একটি স্মরণীয় ঘটনা। এই দীর্ঘ বছরে স্কুলটির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এই স্কুলেরই প্রাক্তন কৃতি ছাত্র অর্জুন পুরস্কার প্রাপ্ত মন্টু দেবনাথ। যিনি খেলার আসরে দেশ ও রাজ্যের নাম উজ্জ্বল করেছেন। এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র নারায়ণ দেবনাথ যিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় ১০০তে ১০০ নম্বর পেয়ে নজির সৃষ্টি করেছিলেন। এছাড়া ২০২০ সালে ত্রিপুরা বোর্ডের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কমার্স বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন এই স্কুলেরই ছাত্রী স্বরূপা বনিক। এই স্কুলের সার্বিক পরীক্ষার ফলাফল খুবই ভালো। এজন্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের বিশেষ অবদান রয়েছে। এর পাশাপাশি স্কুলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সামাজিক কাজ করা হয়। গরীব মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার জন্যও সহযোগিতা করা হয়।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি বা জাতীয় শিক্ষা নীতি চালু করা হয়েছে। এতে লাভবান হবে পড়ুয়ারা। ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে এনসিআরটি পাঠক্রম চালু হয়েছে রাজ্যে। অভিন্ন প্রশ্নপত্র চালু হয়েছে। প্রচুর বাংলা মিডিয়াম স্কুলকে ইংলিশ মিডিয়ামে রূপান্তরিত করা হয়েছে। সুপার থার্টি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মেধা পুরস্কার চালু হয়েছে। ট্যালেন্ট সার্চ এক্সামিনেশনের ব্যবস্থা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য বন্দে ত্রিপুরা টিভি চ্যানেল ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু রয়েছে। বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্প চালুর পাশাপাশি ছাত্রীদের মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ বাই সাইকেল বিতরণ করা হয়েছে। এডিসি এলাকাতেও শিক্ষা সম্প্রসারণে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষার গুণগত উন্নয়নে আরো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা খাদি বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান রাজীব ভট্টাচার্য সহ স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাগণ। অনুষ্ঠানে অংশ নেন স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী যারা বিভিন্ন পেশায় সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। হীরক জয়ন্তী বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত রক্তদান শিবির ঘুরে দেখে রক্তদাতাদের উৎসাহিত করেন মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য অতিথিগণ।
0 মন্তব্যসমূহ