কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীন ন্যাশনাল এইডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন কর্তৃক বিশ্ব এইডস দিবস- ২০২৩ উদযাপন। থিম: Let Communities Lead
রাজ্যস্তরীয় আয়োজনেঃ ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি।
রাজ্যস্তরে এইচআইভি/এইডস বিষয়ক কর্মসূচির উল্লেখযোগ্য বিষয়ঃ ১৯৯৯ সালে রাজ্যে এইচআইভি/এইডস কর্মসূচি চালু হয়। এই কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য ২০০০ সাল থেকে রাজ্যে পুরোদমে ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি কাজ করে চলেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ১০০ শতাংশ আর্থিক সহায়তায় এইডস বিষয়ক প্রকল্পটি রাজ্যে এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের দিকটি জারি রেখেছে।
রাজ্যের শিক্ষা দফতর, স্বরাষ্ট্র দফতর, সমাজকল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দফতর, ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতর, পঞ্চায়েত দফতর, নগরোন্নয়ন দফতর, জনজাতি কল্যাণ দফতর, শিল্প ও বাণিজ্য দফতর, পরিবহণ দফতর, শ্রম দফতর সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি এবং বেসরকারী নানা দফতর ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ত্রিপুরা এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি বছরভর বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ত্রিপুরায় মোট এইচআইভি/এইডস আক্রান্তের সংখ্যা ৫২৬৯ । (মহিলা- ১০২২, পুরুষ- ৪২৪৬, ট্রান্স জেণ্ডার-১)। এর মধ্যে ছাত্রছাত্রী ৫৭৬ জন। সাম্প্রতিক তথ্য মোতাবেক, প্রতি মাসেই রাজ্যে প্রায় ১৫০- ২০০ এর মধ্যে নতুন এইচআইভি আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে।
(১) চলতি অর্থ-বছরে (এপ্রিল থেকে অক্টোবর ২০২৩ ইং পর্যন্ত) মোট এইচআইভি পরীক্ষা হয়েছে ১,১৬,৩১৮ জনের। চলতি বছরে (এপ্রিল থেকে অক্টোবর ২০২৩ ইং পর্যন্ত) মোট এইচআইভি সংক্রিমত হয়েছেন ১,১১১ জন।
(২) এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, কাউন্সেলিং এবং টেস্টিং-এর জন্য রাজ্যের ২৪ টি হাসপাতালে ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং এবং টেস্টিং সেন্টার (ICTC), ১৩৩টি হাসপাতালে ফেসিলিটি ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং এবং টেস্টিং সেন্টার (FICTC), তিনটি পিপিপি ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং এবং টেস্টিং সেন্টার (PPP-ICTC) এবং একটি মোবাইল ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং এবং টেস্টিং সেন্টার ভ্যান কাজ করছে।
(৩) মা থেকে শিশুতে এইচআইভি/এইডস সংক্রমণ রোধে আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ এবং জিবি হাসপাতালে একটি প্রিভেনশান অফ পেরেন্ট টু চাইল্ড ট্রান্সমিশন (PPTCT) সেন্টার চালু করা হয়েছে।
(৪) এবছর মোট ৫,৯২৮ জন মহিলা যৌনকর্মী, ৮৫৩ জন সমকামী, ৬,৪৭৩ জন পরিযায়ী শ্রমিক, ৩,৪৫০ জন ট্রাক চালক, ৯৬ জন ট্রান্স জেণ্ডার এবং ৮,০৭৩ জন শিরাপথে মাদক ব্যবহারকারীদের নিয়ে ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির অধীনে ১৫টি টি আই এনজিও ২টি লিঙ্ক ওয়ার্কার স্কিম কাজ করছে এবং ৪টি ওয়ান স্টপ সেন্টার এর মাধ্যমে (Registered population as on October, 2023)
(৫) শিরা পথে মাদক ব্যবহারকারীদের (Injectable Drug User) মধ্যে October, 2023 পর্যন্ত এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছে ২৫৪৫ জন। গোটা রাজ্যে মোট ৫,২৬৭ জন শিরাপথে মাদক ব্যবহারকারীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য ওপিওড সাবস্টিটিশন থেরাপি সার্ভিস এ অন্তর্ভুক্ত করেছে ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি। তার মধ্যে চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছেন ৪৩০ জন ।
(৬) শিরা পথে মাদক ব্যবহারকারীদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে এবং ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির পরিচালনায় জম্পুই পাহাড়ের ভাঙমুন হাসপাতাল, কুমারঘাট হাসপাতাল, কৈলাসহর জেলা হাসপাতাল, ধলাই জেলা হাসপাতাল, জিরানীয়া CHC, অভয়নগর আর্বান পি এইচ সি এবং দামছড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওপিওড সাবস্টিটিশন থেরাপি ( OPIOD _SUBSTITUTION THERAPY) সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এই ৭ টি Standalone Opioid Substitution Therapy Centre এর মাধ্যমে বিকল্প পদ্ধতিতে ইঞ্জেকশান এর মাধ্যমে ড্রাগ ব্যবহারকারীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার কাজ চলছে।
এছাড়া ও আর ও ১৬ টি Satellite Opioid Substitution Therapy Centres (মনুঘাট হাসপাতাল, কাঞ্চনপুর মহকুমা হাসপাতাল, গন্ডাছড়া মহকুমা হাসপাতাল, ত্রিপুরা সুন্দরী হাসপাতাল, বিশ্রামগঞ্জ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, করবুক মহকুমা হাসপাতাল, অমরপুর হাসপাতাল, সাব্রুম হাসপাতাল, খোয়াই জেলা হাসপাতাল তেলিয়ামুড়া হাসপাতাল, মোহনপুর হাসপাতাল, শান্তিরবাজার জেলা হাসপাতাল, ধর্মনগর জেলা হাস্পাতাল, ওয়ান স্টপ সেন্টার বোরাখা, ওয়ান স্টপ সেন্টার টাকারজলা এবং আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ) এর মাধ্যমে ড্রাগ ব্যবহারকারীদের পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে)।
(৭) এইচআইভি/এইডস আক্রান্তদের চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ এবং জিবি হাসপাতালে অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি প্লাস সেন্টার (Anti-Retroviral Therapy PLUS CENTRE), ধর্মনগরে উত্তর জেলা হাসপাতাল এবং ধলাই জেলা হাসপাতাল, ফেসিলিটি ইন্টিগ্রেটেড এআরটি সেন্টার (Facility Integrated Anti- Retroviral Therapy), কৈলাসহরে ঊনকোটি জেলা হাসপাতাল, উদয়পুরে গোমতী হাসপাতাল, শান্তিরবাজার মহকুমা হাসপাতাল, তেলিয়ামুড়া হাসপাতাল এবং সাব্রুম মহকুমা হাসপাতালে লিঙ্ক এআরটি সেন্টার (Link Anti-Retroviral Therapy Centre) কাজ করছে। এখান থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এইচআইভি/এইডস আক্রান্তদের ভারত সরকার দ্বারা ওষুধ সরবরাহ করা হয়।
(৮) বর্তমানে রাজ্য সরকার দ্বারা ২০৩১ জন এইচআইভি/এইডস আক্রান্তকে মাসিক ২ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
৯) জেলা ভিত্তিক তথ্য:- রাজ্যে পশ্চিম জেলায় এইচআইভি/এইডস রোগীর
আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ১৫৯৪ জন এই জেলায় আক্রান্ত। অন্যদিকে দ্বিতীয় স্থানে ধলাই জেলা। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯০৬ জন এবং তারপরে আছে উত্তর জেলা। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬৩ জন। অন্যদিকে, ঊনকোটি জেলায় ৪১৫, খোয়াই জেলায় ৫৪২, গোমতী জেলায় ৪১২, সিপাহিজলা জেলায় ৩৩৪, দক্ষিণ জেলায় ২৩৮ জন আক্রান্ত রয়েছেন। বহিরাজ্য থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছেন বা বহিরাজ্যের নাগরিক হিসেবে বসবাস করছেন মোট ২৯ জন। ( October,23 এর তথ্য অনুযায়ী)
১০) মোবাইল ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং এবং টেস্টিং সেন্টার ভ্যান এর মাধ্যমে রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিনামূল্যে এইচ আই ভি নির্নায়ক পরীক্ষা করা হয়।
১১) কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এইচ আই ভি / এইডস এবং শীরাপথে মাদক ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারা রাজ্যে ৩১ টি কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয়ে রেড রিবন ক্লাব আছে। যেগুলোর মাধ্যমে বছরভর নানা কর্মসুচী পালন করা হয়।
১২) সোসাইটি বিভিন্ন কর্মশালা, সেমিনার, দিবস উদযাপন খেলাধুলা, এবং অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে যুবসমাজকে এইচ আই ভি/এইডস নিয়ে সচেতন করার লক্ষ্যে।
0 মন্তব্যসমূহ