আগরতলা, ১৬ ডিসেম্বর: আগরতলাস্থিত বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশন যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস-২০২৩ উদ্যাপন করা হয়েছে শনিবার। সকালে দূতালয় প্রাশনে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পাঠানো লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হয়। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শাহাদাৎ বরণকারী সকল সদস্যসহ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনার বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। সহকারী হাই কমিশনের পক্ষ থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এছাড়াও বাংলাদশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর শহীদ সদস্যবৃদ্ধের সারণে নবনির্মিত অ্যালবার্ট একা ওয়ার মেমোরিয়ালে সহকারী হাই কমিশনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সারণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ত্রিপুরা বিধান সভার ডেপুটি স্পিকার শ্রী রাম প্রসাদ পান। এরপর মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। বিজয় দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার রাম প্রসাদ পাল। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধের মৈত্রী সম্মাননা প্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মিহির দেখ স্বপন ভট্টাচার্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আওয়াল মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিন কালাম, আগরতলা মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল ডা: অনুপ সাহা, ত্রিপুরা বিধান সভার প্রাক্তন স্পিকার রেবতি মোহন দাস।
বক্তারা উল্লেখ করেন যে, একটি অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সু সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং বক্তাগণ জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রারও তুরসী প্রশংসা করেন।
সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মাদ তার সমাপনী বক্তবে মান দিবসে অধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা, ৩০ লাখ শহিদ সপ্তম হারা ২ লাখ মা বোন এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রভার সাথে করেন। তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সবারকভাবে সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন ভারতের জনগণ, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী, তৎকালীন ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ী, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভারতীয় সেনাবাহিনী, ত্রিপুরার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্র লাল সিং সহ ত্রিপুরার সর্বস্তরের জনগণকে যারা নিজেদের সকল সামর্থ্য দিয়ে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে এক অনবদ্য অবদান রচনা করেছিলেন। তিনি আরও বলেন শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে রুপকল্প-২০২১ সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই অর্জন করেছে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে মাংসম্পূর্ণ, ইতিহাসের সর্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে বিগত বছরগুলোতে, দ্রুত গতিতে বাড়ছে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা আজ প্রান্তিক গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রতিটি গ্রামে শহরের নাগরিক সুযোগ- সুবিধা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। সকল গৃহহীন ভূমিহীনদের জন্য ঘর তৈরী করে দেয়া হচ্ছে। শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। ৫২ বছরে মাথাপিছু আয় প্রায় ১০০ মার্কিন ডলার হতে ২৭০৫ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। দেশের কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য সহ আর্থসামাজিক উদ্যানের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে রোল মডেল।
আলোচনা সভা শেষে ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রচিত জাগরণী গানের সংকলন গনজাগরণীর গান" নামক সিভির উদ্বোধন করা হয়। এছাড়াও ত্রিপুরার স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আগত নৃত্যদল তাদের পেশাদারি পরিবেশনার মাধ্যমে মুজিব শতবর্ষের থিম সং "তুমি বাংলার সুবতারা" সহ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও দেশাত্মবোধক বিভিন্ন সংগীত পরিবেশনায় মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশের মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরে, যা অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।
0 মন্তব্যসমূহ