আগরতলা, ১৭ জানুয়ারি: মানুষের নিরাপত্তা প্রদান, শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার অন্যতম গুরুদায়িত্ব যাদের হাতে ন্যস্ত রয়েছে তারাই হচ্ছেন পুলিশ। রাজ্যেও ত্রিপুরা পুলিশ এই দায়দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধ মোকাবিলার ক্ষেত্রে ত্রিপুরা পুলিশের কাজে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য এসেছে। যদিও এতে আত্মতুষ্টির কোন অবকাশ নেই। সমাজের স্বার্থে আরো কাজ করতে হবে পুলিশকে। কারণ কাজের কোন শেষ নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্গ দর্শনে সংকল্প নিতে হবে ও সংকল্পের মাধ্যমে সিদ্ধি অর্জন করতে হবে। তবেই যেকোন কাজে ১০০ শতাংশ সাফল্য আসবে।
বুধবার আগরতলার এডিনগরস্থিত মনোরঞ্জন দেববর্মা স্মৃতি স্টেডিয়ামে পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পুলিশ কর্মীদের শৃঙ্খলাপরায়ন ও দেশাত্মবোধের ভাবনা প্রবল হতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে তাদের। পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা জানান, জনসংখ্যার নিরিখে অপরাধের গড়ে দেশের ২৮টি প্রদেশের মধ্যে নিচের দিক থেকে ত্রিপুরা এখন তৃতীয় স্থানে রয়েছে। যা আগে ছিল পঞ্চম স্থানে। অর্থাৎ প্রতি লক্ষ জনসংখ্যায় রাজ্যে অপরাধের সংখ্যা ১১০। এক্ষেত্রে জাতীয় গড় হচ্ছে ৪২২। সেদিক থেকে বিচার করলে রাজ্য এখন ভালো স্থানে রয়েছে। কিন্তু এতে আত্মতুষ্টির কোন স্থান নেই। শারীরিক অপরাধের মামলায় নিচের দিক থেকে ত্রিপুরার স্থান দেশের মধ্যে অষ্টম। সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলায় ত্রিপুরা সর্বনিম্ন স্থান অর্থাৎ ১ নম্বরে রয়েছে। প্রতি লক্ষ জনসংখ্যায় মাত্র ১১.৯ হারে এই অপরাধ হচ্ছে রাজ্যে। সেখানে জাতীয় গড় ২০.৮। আগে এই অপরাধে তৃতীয় স্থানে ছিল ত্রিপুরা। নারী সংক্রান্ত অপরাধে নিচের দিক থেকে ত্রিপুরা অষ্টম স্থানে রয়েছে। জনসংখ্যার নিরিখে প্রতি লক্ষে ৩৭টি করে নারী সংক্রান্ত অপরাধের মামলা হচ্ছে রাজ্যে। এক্ষেত্রে জাতীয় গড় ৬৬। এই তালিকায় গত বছর নবম স্থানে ছিল ত্রিপুরা। এছাড়া পণ সংক্রান্ত অপরাধ, চুরি, ডাকাতি, খুন ইত্যাদি ঘটনা ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে অনেক কমেছে।
পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ মোকাবিলায় ত্রিপুরা পুলিশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। কিছুদিন আগেও চারজন কট্টর এনএলএফটি সন্ত্রাসবাদীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই বিশেষ সাফল্যের জন্য ত্রিপুরা পুলিশকে ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশি নাগরিকদের পাশাপাশি রাজ্যে এখন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সমস্যা হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রেও রাজ্য পুলিশ বেশ ভাল কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এরআগেও রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু ২০২৩ সালে বিধানসভা নির্বাচনের মতো শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রত্যক্ষ হয় নি। কোন ধরণের অঘটন বা অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এজন্য ত্রিপুরা পুলিশকে ধন্যবাদ। এর পাশাপাশি মাদক দ্রব্য বাজেয়াপ্ত করা ও ধ্বংস করার ক্ষেত্রেও ত্রিপুরা উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী নেশাদ্রব্য বাজেয়াপ্তকরণে উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। একইভাবে নেশাদ্রব্য ধ্বংসের ক্ষেত্রেও বিশেষ সাফল্য পেয়েছে রাজ্য। নেশার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে রাজ্য সরকার। আর সেটা সফল করতে পুলিশকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। নারী সংক্রান্ত অপরাধ মোকাবিলার জন্য রাজ্যের ৮টি জেলায় মহিলা পুলিশ কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত মহিলা থানা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও প্রত্যেকটি থানায় মহিলা হেল্প ডেস্ক খোলা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে যান দুর্ঘটনা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এগিয়ে আসতে হবে সকলকে। প্রতিদিনই যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে চলছে। কিন্তু সেই তুলনায় রাস্তাঘাট বাড়ছে না। ২০২৩ সালে যানবাহনের সংখ্যা ছিল ৭ লক্ষ ৪৬ হাজার ৩১টি। দুর্ঘটনা রোধ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। তবে এরপরও যান দুর্ঘটনা রোধে আরো সচেতনতা সভা, সেমিনার সহ অন্যান্য পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ পুলিশের একার পক্ষে যান দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় করতে পুলিশ প্রয়াস কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে রান ফর ইউনিটি, স্বচ্ছ ভারত অভিযান, ফুটবল ভলিবল টুর্নামেন্ট, স্বাস্থ্য শিবির সহ বিভিন্ন কাজ করে চলছে। এদিন অনুষ্ঠানে টিএসআর বাহিনীর কাজেরও প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, কাজের নিরিখে টিএসআর বাহিনী সারা দেশে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করেছে। বর্তমানে দিল্লি ও ছত্তিশগড়ে নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে টিএসআর জওয়ানরা। রাজ্যের কেটিডিএস পুলিশ ট্রেনিং একাডেমি নিয়েও প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই ট্রেনিং একাডেমিতে পুলিশ কর্মীদের সেরা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এজন্য এই ট্রেনিং সেন্টারে মনিপুর সরকারের পক্ষ থেকেও তাদের পুলিশ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়াও সিবিআই-এর জন্য পশ্চিম, উত্তর, খোয়াই এবং ধলাই জেলায় চারটি ক্যাম্প অফিস স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। সেন্ট্রাল ডিটেকটিভ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের জন্য বোধজংনগরে দশ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। ত্রিপুরা পুলিশ যেসকল পরিকাঠামোগত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে সেটা সমাধানের জন্য কাজ করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন সহ আরক্ষা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ। এর পাশাপাশি অনুষ্ঠানে ২০২৩ সালের সেরা পুলিশ অফিসার, সেরা তদন্তকারী অফিসার, সেরা থানা, সেরা টিএসআর ব্যাটেলিয়ন সহ মোট ১৫টি পুরষ্কার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এছাড়া ডিজি ডিস্ক পরিয়ে দেন পুলিশ প্রধান অমিতাভ রঞ্জন। অনুষ্ঠানে পুলিশ কর্মীদের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে অভিবাদন জ্ঞাপন করা হয়।
0 মন্তব্যসমূহ