Advertisement

Responsive Advertisement

জীবনে ব্রাত্য বার্ধক্য, এই বয়সে একা থাকাই কি গুরুজনদের নিয়তি?

                                                  
                                   ড. হৈমন্তী ভট্টাচার্জী

মধ্যবয়স থেকে বার্ধক্যে পদার্পণের সময়টায় সবারই উচিত একটু সতর্ক থাকা। একজন মানুষ একা বাস করলেও তার ক্ষতি হবে না যদি তিনি নিয়মিত পরিবার-পরিজনের সাথে যোগাযোগ রাখেন। আবার নিজের সন্তানের সাথে একই বাড়িতে থেকেও যদি একজন বৃদ্ধ মানুষ অন্যদের সাথে কথা বলার সুযোগ না পান, তবে তার ক্ষতি হয়েই যাবে। কি করে এড়ানো যেতে পারে এসব ক্ষতি? অন্যদের সাথে সব সময় আপনার যোগাযোগ রাখতে হবে। এক্ষেত্রে তারা প্রাক্তন সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারেন, পরিবারের সবার সাথে দেখা করতে একত্র হতে পারেন, আর বন্ধুদের সাথেও দেখা করতে পারেন নিয়মিত। এ সবই আপনাকে রাখবে অনেক বেশি হাসিখুশি, কারণ তখন আপনি নিশ্চিন্ত থাকবেন যে আপনাকে ভালোবাসে এমন অনেক মানুষ আছে। কাছের মানুষদের মাঝে থাকতে পারলে বার্ধক্যের করাল আঘাত সহজে ছুঁতে পারবে না আপনাকে।
বাড়িতে একলা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা,মন জুড়ে অবসাদ,দূরে থাকা বড় খোকাখুকুরা বাবা-মায়ের মনের অসুখ ঠেকাবেন কীভাবে?
ছেলে-মেয়ে যে যার সংসার, কাজ নিয়ে ব্যস্ত। কেউ অন্য শহরে, কেউ বিদেশে। ফোনে কথা হয় দিনে দুই-একবার। কারও কয়েকদিন অন্তর। কারও আবার কেউ খোঁজই নেওয়ার নেই। মহানগর, শহরতলি, গ্রাম সর্বত্রই একা হয়ে পড়ছেন বয়স্করা। সবার সন্তান যে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় ঝেড়ে ফেলে দূর দেশে পালিয়ে যান, তা নয়। সবাই নিজের নতুন সংসারের ব্যস্ততায় মা, বাবাকে ভুলতে বসেছেন, তাও নয় বেপার টা। বিশ্বায়ন, সমাজ পরিবর্তন, আর্থ-সামাজিক ও পারিবারিক পরিস্থিতির জন্য বৃহৎ সংসার থেকে ছিন্ন হয়ে পড়ছেন সমাজে প্রবীণদের একাংশ। অণু পরিবারে থাকলেও বড্ড একলা হয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। যার পরিণতি অবসাদ। একরাশ মানসিক অবসাদ জাপটে ধরে তাঁদের। তবে শুধু ছেলে-মেয়ে দূরে থাকলে বা তাঁদের সঙ্গে কোনও কারণে সম্পর্ক তিক্ত হলেই যে এই একাকীত্বের অবসাদ আসে নয়। বয়সকালীন ডিপ্রেশনের কারণ একাধিক। স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যুর শোক, সাংসারিক অশান্তি, সন্তান যত্ন না নিলে, পরিবারে গুরুত্ব কমলে, শারীরিক অসুস্থতা, অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়ার মতো বহু কারণ রয়েছে
*কীভাবে বুঝবেন অবসাদ?*
বয়স্কদের মানসিক অবসাদের লক্ষণ- সব কিছুতেই হতাশা-দুঃখ পাওয়া, আনন্দের ঘটনাতেও আনন্দিত না হওয়া, ছোটখাটো বিষয়ে মন খারাপ করা, সমাজে কারও সঙ্গে মিশতে না চাওয়া, নিজের শখের কাজেও উৎসাহ না পাওয়া, ওজন কমা, খিদে না পাওয়া, কোনও কাজ করতে ইচ্ছা না করা, নিজেকে উৎসাহিত করার ব্যাপারেও অনীহা, ঘুমের সমস্যা (দিনের বেলায় ঘুম পাওয়া, রাতে ঘুম না হওয়া, অতিরিক্ত ঘুম), কথা কম বলা, হাঁটাচলার গতি কমে যাওয়া, আত্মহত্যার প্রবণতা, মৃত্যুচিন্তা, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া, নিজের প্রতি যত্ন না নেওয়া (খাবার না খাওয়া, ওষুধ খেতে ভুলে যাওয়া, নিজের পুষ্টি ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি নজর না দেওয়া)।
*দূরে থেকেও পাশে-*
বয়স্ক বাবা-মাকে নিজের কাছে রাখতে না পারার কষ্ট পান ছেলেমেয়েরা। তাঁদের অসহায়তার কথা ফোনে শুনলেও বেশিরভাগ সময়ই বিশেষ কিছু করার থাকে না। তবু মনে রাখা দরকার, শুধু মাত্র আর্থিক সচ্ছলতা দিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব, কর্তব্য পালন করাটাই সব নয়। এই সময় তাঁদের মধ্যে একাকীত্বে ভোগার সমস্যা হয় যা থেকে ধীরে ধীরে অবসাদ গ্রাস করে। তাই বিভিন্ন কারণে প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানরা পরিবারের থেকে দূরে থাকলেও দিনে কয়েক বার ফোনে কথা বলুন। সব সময় যে জরুরি কথা বলতে হবে এমন নয়। স্বাস্থ্যের খবর নেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের কথাও মন দিয়ে শুনুন। আর অবসাদের লক্ষণ বুঝতে পারলে প্রথমে নিজে কথোপকথনের মাধ্যমে সমস্যা কাটানোর চেষ্টা করুন।
শুধু নিজের বাবা-মা নয়, একলা হয়ে পড়া প্রবীণ প্রতিবেশী-পরিজনদের পাশেও থাকুন। কাউকে একাকীত্বের মধ্যে ফেলবেন না। একাকীত্ব ভয়ংকর অভিশাপ। মানুষ সমাজবদ্ধ। সবার সঙ্গে থেকে ও গুরুজনদের সান্নিধ্য নিয়েই সমাজযাপন। পাড়া, কমপ্লেক্সের বয়স্ক কাকু, জেঠিমা, ঠাকুমাদেরও একটু খোঁজ রাখুন।
বার্ধক্যে একাকীত্ব হতে পারে মৃত্যুর কারণ

পরামর্শের জন্য যোগাযোগ: 
স্পন্দন সামাজিক সংস্থা
৯৪৩৬৭৬৮৪৭৪

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ