Advertisement

Responsive Advertisement

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সুশৃঙ্খল জীবন-যাপনের বিকল্প নেই

     
              
                                   ড. হৈমন্তী ভট্টাচার্জী

সুশৃঙ্খল জীবন আনবে স্বস্তির ঘুম।
কেউ বিছানায় যাওয়ামাত্রই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছেন। কেউ বা চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারছেন না। বিছানায় এদিক-ওদিক করে রাতের বেশির ভাগ সময় পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, বেশির ভাগ অনিদ্রার ক্ষেত্রে অনিয়মই দায়ী।
সেদিকে খেয়াল না করে আমরা দৌড়াই ডাক্তারের কাছে। আর ডাক্তারের পরামর্শে ঘুমের বড়ি খেয়ে ঘুমাই। অথচ একটু সতর্ক হয়ে নিয়মমাফিক জীবন যাপন করলে অন্যের মতো আপনি স্বাভাবিক ঘুমটাই ঘুমাতে পারেন।
সুস্থ শরীরের জন্য ব্যায়াম জরুরি।
কিন্তু ব্যায়াম হওয়া চাই সঠিক নিয়মে ও সময়ে। অসময়ে ব্যায়াম আপনার স্বাভাবিক ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য যথেষ্ট। কেননা ব্যায়ামের ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় বিপাকপ্রক্রিয়ার গতি।
সুতরাং দিনের বেলায় ব্যায়াম সেরে নেওয়া ভালো। রাতে ব্যায়াম করলে স্বাভাবিক কারণেই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, আজকাল জীবনে মোবাইল শোবার ঘরেও জায়গা করে নিয়েছে। মোবাইল ঘাটতে ঘাটতে সময়ের দিকে খেয়াল থাকে না।
আর এতেই স্বাভাবিক ঘুমের সমস্যা হয়। শুধু প্রিয় ছবি নয়, অনেক সময় ভয়ের ছবি দেখার ফলে মানসিকভাবে সমস্যা তৈরি হয়। এতেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
নির্ধারিত সময়ে অফিসের কাজ না করে অফিস সময়ের পর তা করার অভ্যাস অনেকেরই আছে। আবার কেউ অফিসে কাজ না করে বাসায় নিয়ে যান। রাত জেগে কাজ করেন। এ অভ্যাস শরীরের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয়, এভাবে কাজের ফলে টেনশন বেড়ে ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যায়। আবার সকালে অফিসে যাওয়ার তাড়া থাকায় ঠিকমতো ঘুমও হয় না।
অনেক সময় রাতেই হয় সংসারের কথাবার্তা। স্বামী-স্ত্রীর সংসারের এ আলোচনা যদি তর্কে রূপ নেয়, তাহলে তো হয়েছেই। উচ্চস্বরে কথাবার্তা থেকে ঝগড়া এবং ঘুম মাটি। এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—যা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার সম্ভাবনা, তা দিনেই সেরে নেওয়া ভালো।
শরীর মন দুটোই ফিট থাকলে আপনি নিজেকে ফিট বলতে পারেন। শারীরিক সুস্থ্যতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থ্যতাও অপরিহার্য। অনেকের বেলায় দেখা যায়, শরীর ঠিক থাকলেও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে একেবারেই গুরুত্ব দেন না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন ঠিকমতো চালিয়ে নিতে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়া কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জীবনযাপনে সামান্য কিছু পরিবর্তন এনে সব মানসিক সমস্যা দূরে ঠেলে মনকে ফুরফুরে করে তুলতে পারেন। এ রকম সহজ কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে পারেন।

নিয়মমাফিক চলুন
দৈনিক কাজের একটি নিয়ম দাঁড় করান। সময়ের কাজ সময়ে করুন। নিয়ম মেনে খাওয়া, ঘুম থেকে জাগা বা বিছানায় যাওয়ার বিষয়টি মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য দরকারি। যাঁরা নিয়ম মেনে চলেন, তাঁদের মানসিক ও শারীরিক দিক থেকে সুস্থ থাকার হার বেশি বলেই গবেষণায় দেখা গেছে।

ব্যায়াম করুন
মানসিকভাবে ভালো থাকতে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকাটাও জরুরি। শরীরকে সক্রিয় রাখতে সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম করলে সুখ হরমোন নিঃসৃত হয়। মানসিকভাবে হালকা বোধ করতে বা মন ভালো রাখতে নিয়মিত ব্যায়ামের চর্চা করে যান।


পুষ্টিকর খাবার খান
পুষ্টিমানসম্পন্ন ও সুষম খাবার খাবেন। খাবারের তালিকায় বেশি করে ফল আর সবজি রাখুন। মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত রাখে এমন খাবার, বিশেষ করে বাদাম কিংবা পালংশাকের মতো খাবার খান। সাক-সবজি, মাছ-মাংস আর দেশিয় ফলের প্রাধান্য দিতে হবে।

যন্ত্রের ব্যবহার সীমিত করুন
এখনকার সময় মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন কিংবা মনোযোগ কেড়ে নেওয়া নানা যন্ত্র রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে যতটা সম্ভব যন্ত্রের ব্যবহার সীমিত করুন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে মোবাইল ফোনসহ যন্ত্র ব্যবহার বাদ দিন। রাতে বিছানা থেকে মোবাইল ফোন কমপক্ষে তিনফুট দূরে রাখুন। এমনকি দিনের বেলাতেও যন্ত্র যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
*সক্রিয় থাকুন* সংবাদপত্র পড়া, টিভি দেখা, বই পড়া, পাজল মেলানো, ক্রসওয়ার্ড সমাধান করার মতো নানা কাজে মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখুন। মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকলে স্মৃতিশক্তি উন্নত হবে, এমনকি শেখার দক্ষতা বাড়বে। সাম্প্রতিক বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখলে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ