Advertisement

Responsive Advertisement

১৬ ফেব্রুয়ারি ২২ দফা দাবি নিয়ে সারা ভারতে গ্রামীণ ও শিল্প ধর্মঘট সংযুক্ত কিষান মোর্চা



আগরতলা, ২৯ জানুয়ারি : বর্তমান সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল সংযুক্তকিষান মোর্চা ও কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলো। সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক জনবিরোধী ও শ্রমিক বিরোধী নীতির তীব্র বিরোধিতা করে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ২২ দফা দাবি নিয়ে সারা ভারতে গ্রামীণ ও শিল্প ধর্মঘট আহ্বান জানিয়েছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা ও কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলো।সাথে বিভিন্ন কর্মচারি ফেডারেশনগুলো ও ছাত্র ও যুবরা থাকবে।
সোমবার সারা ভারত কৃষক সভার ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির অফিসে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা ও কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃত্ব।সাংবাদিক সম্মেলনে সংযুক্ত কিষান মোর্চা ত্রিপুরার আহ্বায়ক পবিত্র কর এই ধর্মঘটের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে বলেন, করপোরেট ও সাম্প্রদায়িক শক্তির আঁতাতের ফলে সরকার যে স্বৈরতান্ত্রিক জনবিরোধী নীতিনিয়ে চলেছে তাতে দেশের স্থায়ী সর্বনাশ রুখতে সংযুক্ত কিষান মোর্চা ও কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলো গত ২৪শে আগস্ট দিল্লিতে একটি কনভেনশন করেছিল। সেখান থেকেই যে দাবি সনদ গৃহীত হয়েছিল তার পরিপেক্ষিতে যৌথভাবে এই গ্রাম ও শিল্প ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যা আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি হবে।ত্রিপুরার ২৩ টি মহকুমাতেই এই ধর্মঘট হবে।যার প্রচার ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।প্রত্যেকটি বাড়ীতে প্রচারপত্র বিলি করা হবে বলে পবিত্র কর জানান। ঐদিন দেশজুড়ে রেলরোকো রাস্তা রোকো,জেল ভরো, গ্রাম ভারত বন্ধের কর্মসূচি ব্যাপকভাবে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন,এই লড়াই ২৬ জানুয়ারি সংযুক্তকিষান মোর্চা ৩৭ হাজার ট্রাকটার,র-৮৫ হাজার দু চাকার যান নামিয়ে দেখিয়েছে। কেন্দ্রের জন বিরোধী নীতিকে প্রতিহত করে দেশের শ্রমিক কৃষক ও সাধারণ মানুষের স্বার্থবাহী নীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই আন্দোলন হবে বলে তিনি জানান।তিনি বলেন, মোদির স্বৈরতান্ত্রিক জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে এই প্রতিরোধের আন্দোলনে ছাত্র যুব মহিলা শিক্ষক সাংস্কৃতিক কর্মী সহ সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষকে অংশ নেবার আহ্বান জানিয়েছি।তিনি বলেন দেশের বেকারত্ব,দারিদ্র্য,মূল্যবৃদ্ধি, চরম আকার ধারণ করেছে।সেদিক থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে সাম্পরদায়িক বিভেদ সৃষ্টির পথ বেছে নিয়েছে বিজেপি দল।গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর নামিয়ে আনা হয়েছে তীব্র আক্রমণ। পবিত্র কর বলেন শ্রমিক কৃষকদের রুটি রুজির ওপর তীব্র আক্রমণ হানা হয়েছে।পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে চলছে দুর্নীতি।তিনি বলেন কোভিডের সময়ে দুর্নীতির বহরের সি এ জির রিপোর্ট পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে নিয়মিত।শ্রমিকদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।প্রায় তিন বছর হয়েছে ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের সময় দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়নি। ।তাঁর দাবি ভারতের সংযুক্ত কিষান মোর্চার ৫০০টি কৃষক সংগঠনের ৩৮৪ দিনের আন্দোলন আমাদের শিখিয়েছে লড়াই।ঐ আন্দোলন স্থগিত হয়েছিল যে লিখিত প্রতিশ্রুতি ও প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা চাওয়ার ভিত্তিতে,তার একটিও নরেন্দ্র মোদি সরকার কার্যকর করেনি।নানাভাবে সরকারের পেটোয়া কয়েকজন কৃষকনেতাকে দিয়ে ভুল বোঝানোর চেষ্টাও করা হয়েছিল।সফল হয়নি। এই ধরনের অপচেষ্টা চলছে গত তিন বছর ধরে।তিনি অভিযোগ করেন দিনের পর দিন নরেন্দ্র মোদী সরকার কৃষকদের ও শ্রমিকদের ধোঁকা দিয়ে গিয়েছেন মিথ্যে বলে এসেছেন।তিনি তথ্য দিয়ে বলেন, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকার আসার পর থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১ লাখ ৪৭৪ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন (সরকারের এন সি আর বির রিপোর্ট)।তিনি বলেন নানাভাবে তথ্য গোপন করেছে এই সরকার।কৃষি ও কৃষক উন্নয়নমন্ত্রক থেকে প্রকাশিত তথ্যে (২২-২৩ পর্যন্ত) স্বীকার করা হয়েছে কৃষকদের কল্যান কার্যে ১লক্ষ ৫৫৪৩ দশমিক ৭১ হাজার কোটি টাকা খরচ না করে ফেরত দেয়া হয়েছে।পবিত্র কর বলেন মিথ্যে আশ্বাসের পর আশ্বাস দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গেছে ঐ মন্ত্রক, বাজেটের টাকা খরচ করতে পারেননি।তিনি বলেন করপোরেট স্বার্থ রক্ষা কারী এই মোদি সরকার করপোরেটদের ১৪দশমিক ৫৬ লক্ষ কোটি টাকা ঋন মকুব করেছে গত দশ বছরে কিন্তু কৃষকদের এক পয়সাও ঋন মকুব করেননি।তিনি আক্ষেপকরে বলেন যদি ঐ টাকা ফেরত না দিয়ে কৃষকদের ঋন মকুব করতে কৃষকদের দেওয়া হতো তাহলে এই কৃষকের প্রাণ বাঁচতো।উললেখ্য ২০১৮-১৯ সালের বাজেটে ৫৪০০০ কোটি কৃষি মন্ত্রকের বাজেটের মধ্যে ২১কোটি ৪৩ লক্ষ ৭৫ হাজার খরচ করতে পেরেছে।এমনভাবে প্রতি বছর বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে কিন্তু কৃষকদের জন্য সেই টাকা খরচ করতে পারেনি যার পরিমাণ ১লাখ ৫৫৪৩ দশমিক ৭১ হাজার কোটি টাকা ।পবিত্র কর বলেন আপনারা শুনলে অবাক হবেন কি ভয়ঙকর বিপদে ফেলে দেয়া হয়েছে উত্তর পূর্বাঞ্চলের কৃষকদের।মোদি সরকার মুখেই উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রতি ও তফশিলি জাতি উপজাতিদের প্রতি প্রীতি দেখান,স্রেফ ভোটের জন্য।লোকসভার সট্যানডিং কমিটির সুপারিশ ছিল কৃষি,পশুপালন,ও খাদ্য সংরক্ষণের জন্য অতিরিক্ত টাকা ব্যয়ের সুপারিশ ছিল।সরকার করেনি। তিনি বলেন ২০১৪ সালে নির্বাচনে জিতে আসার জন্য মোদি কৃষকদের ঋন থেকে মুক্তির কথা বলেছিলেন জিতে ভুলে গেছেন। কিন্তু মনে রেখেছেন বন্ধু করপোরেটদের।তাদের জন্য১৪ দশমিক ৫৬ লাখ কোটি টাকা ঋন মকুব করেছেন।ঐ টাকা সাধারণ মানুষের।তাই সংযুক্ত কিষান মোর্চা ও কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এবার আবার রাস্তায় নেমেছে।সিআইটিইউ ত্রিপুরা রাজ্যে কমিটির সভাপতি মানিক দে বলেন শ্রমিকরা শখে বন্ধ করেনা বাধ্য হয়েই এই রাস্তায় যান।উন্নয়নের কথা বলে যে সরকার সেই দেশের ৮০ কোটি মানুষ খাদ্য যোগার করতে পারেনা।রেগাতে ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাঁটাই করে শ্রমিকদের গলা টিপে ধরেছে এই সরকার।তিনি বলেন মজুরি কমেছে জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া।"হিট এন্ড রান' আইন এনে মোটর শ্রমিকদের কোনঠাসা করা হচ্ছে এতে পরিবহন ব্যবস্থাই আক্রান্ত হয়ে গেছে। তিনি বলেন এবার এই সংকট বুঝতে পেরে শ্রমিকদের পাশে পরিবহন মালিকরাও সামিল হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী।।তিনি বলেন মাটির নিচের সম্পদ যে কাউকে তুলে নেওয়ার অধিকার দিয়ে আইন করে আরও বেশী করে করপোরেট স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে সরকার। আসন্ন নির্বাচনে জয় সম্পর্কে সন্দিহান বলেই প্রধানমন্ত্রী অস্থির হয়ে এই জনবিরোধী নীতি নিয়ে চলেছেন মানিক দে মন্তব্যকরেন।তিনিবলেন ৯১ সালের পর ২২টি ধর্মঘট হয়েছে এবার সরকার সমর্থক ভারতীয় মজদুর সংঘকে আহ্বান জানানো হয়েছে তারা আসেনি,তবে ভেতরের অনেক সংগঠন আলাদা ভাবে এসেছেন।এবারে ৫৬টি পি এস ইউ সক্রিয়ভাবে এই ধর্মঘটে সামিল হচ্ছে বলে জানিয়ে মানিক দে বলেন জাতিয়তাবাদী শ্লোগান তুলে ধরে দেশের মানুষের মধ্যে ভাগাভাগি করে দিতে চাইছেন মিডিয়াকে বাধ্য করা হচ্ছে যার দায়িত্বে প্রধানমন্ত্রী নিজে। কিন্তু মানুষ বিকল্প খুঁজছে তারা পরিত্রাণ দাবি করছেন তাইতিনি এই ধর্মঘটে সকলকে সামিল হতে আহ্বান জানান।বক্তব্য রাখেন রাসবিহারী ঘোষ,শ্যামল দে,রঘুনাথ সরকার ও জয়গোবিনদ দেবরায়।     
২২ দফা দাবিগুলি হল, নূন্যতম সহায়ক মূল্য উৎপাদন খরচের উপর ৫০% দিতে হবে। (C2+50%)
রেগায় ২০০ দিনের কাজও ৬০০ টাকা মজুরী দিতে হবে। শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরী মাসে ২৬০০০/- করতে হবে। বিদ্যুৎ বেসরকারী বিল বাতিল কর। শ্রমকোড আইন বাতিল কর। সরকারী বেসরকারী সমস্থ কৃষি ঋন মুকুব করতে হবে। কাজের অধিকারকে মৌলিক অধিকার দিতে হবে। কৃষক হত্যাকারী মন্ত্রী অজয় মিশ্রকে বরখাস্ত করতে হবে। 
পুরানো পেনশন প্রথা চালু করতে হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ করতে হবে।খাদ্যশস্য ওষুধ কৃষি সামগ্রীর জি এস টি তুলে দিতে হবে।  সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধানের মূল্যবোধের ওপর আক্রমণ বন্ধ করা,মত প্রকাশের অধিকার ,ভাষা,আইনী সমতা ও দেশের যুক্তরাষ্ট্রিয় সত্বার ওপর আক্রমণ বন্ধ করা। ইত্যাদি।
                    

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ