আগরতলা, ৩ জানুয়ারি: সমস্যা পীড়িত মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি সরকার ও জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্যে 'মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু' কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। 'মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু' কর্মসূচির ২৫তম পর্বে অন্যান্য দিনের মতো বুধবারও মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা জনগণের নানাবিধ সমস্যা, অভাব ও অভিযোগ শুনেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এদের মধ্যে বেশির ভাগই এসেছেন চিকিৎসা সহায়তার আর্জি নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখে সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যার সুরাহা করে দেওয়ার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এই কর্মসূচিতে আসা সবার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন।
আজ মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কর্মসূচিতে মনুবাজারের সাঁতচান্দের মিঠুন বণিক তার ৭ বছর বয়সী ছেলের চিকিৎসা সংক্রান্ত আর্জি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তার ছেলে জন্মের পর থেকেই থ্যালাসেমিয়া ও হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত। পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী মিঠুন বণিক আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য তার ছেলের সঠিক চিকিৎসা করাতে পারছেন না। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তার আর্জি জানান। মুখ্যমন্ত্রী মিঠুন বণিকের ছেলের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে সঙ্গে সঙ্গে জিবি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার ডাঃ শঙ্কর চক্রবর্তীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার মান্দাই-এর আকাশ দেববর্মা তার বাবার চিকিৎসা সংক্রান্ত আর্জি নিয়ে আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তার বাবা দীর্ঘদিন ধরে মেরুদন্ডের সমস্যাজনিত রোগে ভুগছেন। শীঘ্রই তার বাবার অপারেশন করা হবে। কিন্তু তাদের আয়ুষ্মান কার্ডটি পুনর্নবীকরন (রিন্যুয়েল) না করানোর কারণে চিকিৎসা করাতে সমস্যায় পড়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী আকাশ দেববর্মার বাবার চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং আয়ুষ্মান কার্ডটি দেখে সঙ্গে সঙ্গে আয়ুষ্মান কার্ডটি পুননবীকরণ (রিন্যুয়েল) করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে স্বাস্থ্য সচিব ডাঃ সন্দীপ আর রাঠোরকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি আকাশ দেববর্মার বাবার চিকিৎসা সংক্রান্ত অন্যান্য সহায়তা প্রদানের জন্য জিবি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার ডাঃ শঙ্কর চক্রবর্তীকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
আগরতলার জয়নগরের সুনীল চন্দ্র দাস তার চিকিৎসা সংক্রান্ত আর্জি নিয়ে আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। সুনীল চন্দ্র দাস ১০ বছর যাবৎ লিভার সংক্রান্ত রোগে এবং গত ৬ বছর যাবৎ কিডনি সংক্রান্ত রোগে ভুগছেন। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতার কারণে তিনি বর্তমানে কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন। এদিকে প্রতিমাসে তাকে প্রায় ৬ হাজার টাকার ঔষধ কিনতে হয়। ফলে আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য তিনি তার চিকিৎসার খরচ চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন। এই অবস্থায় তিনি আজ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এসেছিলেন প্রয়োজনীয় সহায়তার আর্জি নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী সুনীল চন্দ্র দাসের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে সঙ্গে সঙ্গে জিবি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার ডাঃ শঙ্কর চক্রবর্তীকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করার নির্দেশ দেন।
সিপাহীজলা জেলার যুগল কিশোর নগর এডিসি ভিলেজের সরস্বতী কপালী (বাউল) তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আর্জি নিয়ে আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। সরস্বতী কপালীর স্বামী গত বছরের নভেম্বর মাসে মারা যান। তার স্বামীই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। বর্তমানে সরস্বতী কপালী তার ১০ বছর বয়সী ছেলের পড়াশুনার খরচ ও সংসারের খরচ চালাতে গিয়ে অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে যেকোন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আর্জি জানান। সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে সরস্বতী কপালীকে কোনও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া যায় কিনা বিষয়টি দেখার জন্য মুখ্যমন্ত্রী তৎক্ষনাৎ সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সচিব তাপস রায়কে নির্দেশ দেন।
মেলাঘরের লক্ষ্মণ চন্দ্র সরকার তার মেয়ের চিকিৎসা সংক্রান্ত আর্জি নিয়ে আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরত লক্ষ্মণ চন্দ্র সরকারের মেয়ে বেশ কিছুদিন যাবৎ শ্বাসকষ্ট ও আলসার রোগে ভুগছেন। আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য লক্ষণ চন্দ্র সরকার তার মেয়ের সঠিক চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এই অবস্থায় তিনি আর্থিক সহায়তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানান। মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্মণ চন্দ্র সরকারের মেয়ের চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখে সঙ্গে সঙ্গে জিবি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার ডাঃ শঙ্কর চক্রবতীকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে লক্ষ্মণ চন্দ্র সরকারকে কিভাবে সহায়তা করা যেতে পারে সে বিষয়টি দেখার জন্য মুখ্যমন্ত্রী সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সচিব তাপস রায়কে নির্দেশ দেন।
এছাড়াও আজ মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কর্মসূচিতে আসা বিশালগড়ের নচিকেতা নাগ, হাঁপানিয়ার পূর্ণা দেবনাথ, বড়দোয়ালীর রূপেন শিব, বাধারঘাটের মিঠন ধর, কাঁঠালতলীর স্বপন চক্রবর্তীর মতো অনেকেই পেয়েছেন চিকিৎসায় সহায়তার আশ্বাস। আজ মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রীর সচিব ড. প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী, স্বাস্থ্য সচিব ড. সন্দীপ আর রাঠোর, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সচিব তাপস রায়, জিবি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার ডাঃ শঙ্কর চক্রবর্তী এবং ক্যান্সার হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার ডাঃ এস দেববর্মা উপস্থিত ছিলেন।
0 মন্তব্যসমূহ