রাজ্যবাসীর সার্বিক বিকাশে স্বচ্ছতা ও স্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে : রাজ্যপাল
আগরতলা : ৫ জানুয়ারি: রাজাবাসীর সার্বিক বিকাশে স্বচ্ছতা ও স্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহার নেতৃত্বে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্য অনুসারে রাজ্য সরকার গত বছরের আগস্ট মাসে সাধারণ প্রশাসন (সুশাসন) দপ্তর গঠন করেছে। এই দপ্তরের অধীনে নীতি আয়োগের নির্দেশিকা অনুসারে স্টেট সাপোর্ট মিশনে গঠিত ত্রিপুরা ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফরমেশন নামে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান গড়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান রাজ্যের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় ও সাফল্যের অনুঘটক চিহ্নিত করে আর্থিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে সহায়ক ভূমিকা নেবে। আজ ১৩তম বিধানসভার তৃতীয় অধিবেশনের শুরুতে রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নান্নু বিধানসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন। রাজ্যপাল বলেন, ত্রিপুরার সুশাসন সংক্রান্ত উদ্যোগের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া। সুশাসনের এই উদ্যোগে সরকারি কার্যালয়গুলিকে ডিজিটাইজড্ করার জন্য ই-অফিস চালু করে রাজ্য সরকার এক বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, সমাজের সকল অংশের মানুষের বিকাশ ও দেশের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া, জনকল্যাণে উদ্ভাবনীমূলক প্রযুক্তির ব্যবহার ও পরিকাঠামো উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দক্ষ নেতৃত্বে দেশ ২০২৬-এর মধ্যে ৫ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার মূল্যের অর্থনীতি গড়ে তোলার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে।
বিধানসভায় রাজাপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নান্নু প্রধানমন্ত্রী জনজাতি আদিবাসী ন্যায় মহা অভিযান চালু করার জন্য ভারত সরকারকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মূলতঃ বিশেষভাবে চিহ্নিত দুর্বল শ্রেণীর জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদের আর্থ-সামাজিক মান উন্নয়নের জন্য এই প্রকল্পটি চালু করা হয়েছে। এজন্য কেন্দ্রীয় বাজেটে বায় ধরা হয়েছে প্রায় ২৪,১০৪ কোটি টাকা। রাজ্যপাল আশা প্রকাশ করেন এই প্রকল্প রূপায়িত হলে দুর্বল অংশের জনজাতি পরিবার ও বসতিগুলিতে আবাসন, পরিশ্রুত পানীয়জল, স্বাস্থ্যবিধি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, পুষ্টি, টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্থায়ী জীবিকা অর্জনের সুযোগ সুবিধাসমূহ নিশ্চিত করা যাবে। রাজ্যপাল বলেন, ভারত সরকার নির্বাচিত কিছু মহিলা স্বসহায়ক দলকে ১,২৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ হাজার ড্রোন সরবরাহ করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এই প্রকল্পে 2024 25 থেকে 202৫-২৬ সময়ে কৃষি সংক্রান্ত কাজে ব্যবহারের জন্য এই ড্রোনগুলিকে ভাড়া দেওয়া হবে। এরফলে কৃষিজ উৎপাদন বাড়বে ও কৃষকদের সুবিধার্থে পরিচালনগত বায় হ্রাস পাবে। তেমনি স্বসহায়ক দলগুলির জন্য স্থায়ী ও বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিধানসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যপাল বলেন, দেশের জন্য ২০২৩ সালটি খুবই উল্লেখযোগ্য বছর ছিল। চাদে মিশন পাঠিয়ে এই দেশ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দেশগুলির মধ্যে নিজের নাম লিখিয়েছে। ২০২৩ সালের ১৪ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে পাঠানো চন্দ্রায়ন-৩ মিশন সারা পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ২০২৩'র ২৩ আগস্ট চন্দ্রায়ন-৩-এর মুন ল্যান্ডার ‘বিক্রম? সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ও 'প্রজ্ঞান রোভার' চাঁদের পৃষ্ঠে ঘুরে বেড়ায়।
ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (ইসরো) সফল চন্দ্রায়ন মিশনের এই অভূতপূর্ব সাফল্যের দশদিন পরেই ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইসরোর ‘আদিত্য এল -১' মিশন শুরু হয়। ইসরোর এই সাফল্যে রাজ্যপাল রাজ্যবাসীর পক্ষ থেকে ইসরোর বিজ্ঞানী সহ সকল সদস্যদের অভিনন্দন জানান।
রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যে ধানের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য ২০২৩ সালের
আমন মরশুমে মুখ্যমন্ত্রী ইন্টিগ্রেটেড ক্রপ ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের সূচনা হয়েছে। ৫৩,২০৭ হেক্টর জমিতে বিপণনের উপযুক্ত সুবিধা সহ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ করা হচ্ছে। ‘প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি' প্রকল্পে ২০১৮-১৯ থেকে ২ লক্ষ ৪৬ হাজার ৩৩৯ জন কৃষকের অ্যাকাউন্টে ১৫তম কিস্তি সহ মোট ৬৪০ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার আওতায় কৃষকদের বীমার প্রিমিয়ামের টাকা বাবদ মোট ২১.১৪ কোটি টাকা দিয়েছে। ফলে মোট ১২.৭৬ লক্ষ কৃষকের জমি বীমার আওতায় এসেছে। তাছাড়া ৩লক্ষ ২৯ হাজার ৮৬০টি কিষাণ ক্রেডিট কার্ড কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে এবং ১,৬৪৯কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। পিএম কিষাণ প্রকল্পের আওতায় আসা অবশিষ্ট কৃষকদের কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের আওতাভুক্ত করার লক্ষ্যে ঘর ঘর কেসিসি অভিযান' চলছে। কৃষির বিকাশে রাজ্যে ৩২টি কৃষক বন্ধু কেন্দ্র খোলা হয়েছে, ২৮ হাজার ৮০০টি বিভিন্ন ধরণের কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হয়েছে। গ্রামীণ কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করতে ৩৭৫টি ফার্ম মেশিনারি ব্যাঙ্ক স্থাপন করা হয়েছে।
রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকার ২০১৮ থেকে কৃষকদের কাছ থেকে ন্যূনতম সহায়কমূল্যে ধান ক্রয় করা শুরু করেছে। বর্তমানে বছরে দুবার ধান ক্রয় করা হচ্ছে। ২০২২-২৩ খারিফ বিপণন মরশুমে প্রথম ফসল পর্যন্ত রাজ্যে ১.৭৫ লক্ষ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করা হয়েছে। এজন্য ন্যূনতম সহায়কমূল্য বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩৩৬ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ সালে সহায়কমূল্যে ধান ক্রয়ের মূল্য বৃদ্ধি করে কুইন্টাল প্রতি ২, ১৮৩ টাকা করা হয়েছে।
রাজ্যপাল বলেন, সরকার উদ্যানজাত ফসলের বিপণনে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে। সেই সঙ্গে
কৃষকদের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও বেশি জমি অর্থকরী ফসল চাষের আওতায় নিয়ে আসার উপর গুরুত্ব দিয়েছে। ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৩-২৪ সময়ের মধ্যে আরও ১৩ হাজার ৩৯৪ হেক্টর এলাকাকে ফল চাষের আওতায় আনা হয়েছে। ২০১৮-২৪ সময়ে ১৮ হাজার ৭৬৪ হেক্টর জমি
সংকর জাতীয় সব্জি চাষের আওতায় আনা হয়েছে। একই সময়ে কৃষকদের মধ্যে ১,২২৬টি
পাওয়ার টিলার বিতরণ করা হয়েছে। ৩,৫৬৬ হেক্টর আনারস বাগানে রাসায়নিক প্রয়োগ করে প্রলম্বিত ফসল উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৩-২৪সময়ে ১০৮ হেক্টর এলাকায় কামালাম (ড্রাগন ফ্রুট) চাষ করা হয়েছে। দপ্তর ২০২৬-২৭ এর মধ্যে অয়েল পাম চাষের এলাকা ৭ হাজার হেক্টর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। সরকার ১৪,৮৯৮ মেট্রিকটন বিভিন্ন উদ্যানজাত ফসল বাজারজাত করার ব্যবস্থা করেছে। ভবিষ্যতে ইন্দো-ইজরায়েল ওয়ার্ক প্ল্যান অনুযায়ী তৈদুর বাগানে একটি সেন্টার অব এক্সিলেন্স অন সিস্ট্রাস স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ৯ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা। তাছাড়া ইন্দো-ডাচ প্রকল্পের আওতায় লেম্বুছড়ায় ১১.১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ফুলের সেন্টার অব এক্সিলেন্স স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সরকার রাজ্যকে প্রাণীজাত খাদ্যে স্বয়ম্ভর করার প্রচেষ্টা নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী উন্নত গোধন প্রকল্পে কৃত্রিম প্রজননের জন্য ৪০,৭২৭ ডোজ সেক্স সর্টেড সিমেন প্রয়োগ করা হয়েছে। এনইসি প্রকল্পে রাজ্যে ছোট আকারের পোল্ট্রি ইউনিট খোলা হয়েছে। ১৮০টি ছাগল প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনায় ৪,৩৭৩টি, তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রী প্রাণীসম্পদ বিকাশ যোজনায় ১,১৪৪টি ক্ষুদ্র আকারের হাঁস পালন কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এই যোজনায় মুখ্যমন্ত্রী প্রাণীপালক সম্মাননিধি ও ইন্টারেস্ট সাবভেনশন স্কিম ফর ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। সরকার মাছের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে মৎস্যচাষের জন্য ৬৩,৩৯৭ জন মৎস্যচাষীকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এজন্য ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা। প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনায় মৎস্যচাষের এলাকা সম্প্রসারণে ১১৬ হেক্টর এলাকায় নতুন জলাশয় সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৯.৭৪ কোটি টাকা। রাজ্যপাল বলেন, বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে মৎস্যচাষের জন্য ৪,৫৮১ জন মৎস্যচাষীকে ১৭.৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন সরঞ্জাম ও উপাদান দিয়ে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। উৎপাদিত মৎস্য বাজারজাত করার জন্য এই যোজনায় ৭৫ জন মৎস্যচাষীকে আইস বক্স সম্বলিত মোটরসাইকেল ও ৩৫ জন মৎস্যচাষীকে ত্রিচক্র যান দেওয়া হয়েছে। শূকর ও মৎস্যচাষ সমন্বিতভাবে করার জন্য ৫৫৫ জন জনজাতি সম্প্রদায়ের মৎস্যচাষীকে ১ কোটি ১১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন উপাদান ও সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, গুণগত শিক্ষার বিকাশে সরকার আনন্দনগরে টেকনো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ধর্মনগরে আর্যাবর্ত আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় নামে দু'টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে তিনটি নতুন সরকারি ডিগ্রি কলেজ চালু হয়েছে। এগুলি হল আগরতলার শ্রী অরবিন্দ জেনারেল ডিগ্রি কলেজ (ইংরেজি মিডিয়াম), পানিসাগরে ও পুরাতন আগরতলায় একটি করে সরকারি ডিগ্রি কলেজ। লংতরাইভ্যালি সরকারি ডিগ্রি কলেজটির জন্য এনএএসি-এর স্বীকৃতি পাওয়া গেছে। ত্রিপুরার কলেজ ও ইউনিভার্সিটিগুলিতে ২০২৩-২৪ থেকে জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০২০ বাস্তবায়িত হয়েছে। 2023-24 অর্থবছরে ২৫টি সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। এতে মোট বিদ্যাজ্যোতি বিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৫টি। এই বিদ্যালয়গুলি সিবিএসই'র অন্তর্ভুক্ত। ১২৫টি বিদ্যাজ্যোতি বিদ্যালয়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা ২১ জুলাই, 2023 থেকে ‘বিদ্যাদর্পণ' ড্যাশবোর্ড চালু করেছেন। ২০২৩-২৪ সালে ৮১২টি বিদ্যালয়ে স্মার্ট ক্লাসরুম চালু করা হয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকার ক্রীড়াক্ষেত্রের সার্বিক উন্নয়নেও আগ্রহী। রাজ্যে সিন্থেটিক ফুটবল গ্রাউন্ড ও সুইমিং পুল তৈরি করা হয়েছে। একটি সিন্থেটিক হকি ফিল্ডও নির্মাণাধীন রয়েছে। শান্তিরবাজারে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন স্পোর্টস কমপ্লেক্স। শীঘ্রই এর কাজ শুরু হবে। ক্রীড়াক্ষেত্রের পরিকাঠামো উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট স্কিম নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পে ক্রীড়াবিদদের স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা দেওয়া হবে।
রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকার এখন পর্যন্ত ৬, ১২৫টি বাস্তচ্যুত ব্লু পরিবারকে অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনায় রেশনকার্ড প্রদান করেছে। ‘মুখ্যমন্ত্রী চা শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্পে ১,১৮৮টি চা বাগানের শ্রমিক পরিবারকে এনএফএসএ প্রকল্পের প্রায়োরিটি হাউজহোল্ড শ্রেণীর রেশনকার্ড দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনায় ২ লক্ষ ৮৩ হাজার ৭৫২টি পরিবার উপকৃত হয়েছে। রাজ্য সরকারের ঘোষণা অনুসারে গণবন্টন ব্যবস্থায় ভর্তুকিতে সরিষার তেল দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যপাল বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মাত্র পুষ্টি উপহার প্রকল্পে গর্ভবতী মহিলারা প্রত্যেক অ্যান্টি ন্যাটাল চেক আপের পর ৪টি কিস্তিতে মোট ২ হাজার টাকা পাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৯,৪২৮ জন গর্ভবতী মহিলা উপকৃত হয়েছেন। আমার সরকার মাসিক সামাজিক ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করেছে। বর্তমানে রাজ্য সরকার ৩৩টি সামাজিক পেনশন প্রকল্পে ৩ লক্ষ ৭৭ হাজার ৯৩৬ জন সুবিধাভোগীকে এই পেনশন বা ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।
বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যে মেডিক্যাল শিক্ষার উন্নয়নে রাজ্য সরকার আগ্রহী। আগরতলা সরকারি মেডিক্যাল কলেজ পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য ১০০টি স্নাতকোত্তর আসনের পুনরায় মঞ্জুরী ও স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০২৩-২৪ সেশন থেকে এএমসি রেডিওথ্যারাপিতে ৩টি পিজি আসনের অনুমোদন পেয়েছে। ত্রিপুরা মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিসেসের আওতায় ৯টি সুপার স্পেশালিটি দপ্তরে ১৪৪টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজ এন্ড ড. বি আর আম্বেদকর মেডিক্যাল টিচিং হাসপাতালে ২৩টি কেবিন ও ২০টি অতিরিক্ত আইসিইউ বেড নির্মাণ করা হচ্ছে। নয়াদিল্লির ন্যাশনাল বোর্ড অব এগজামিনেশন ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতালের ৪টি শাখায় ২০টি ডিপ্লোমেট ন্যাশনাল বোর্ড আসন অনুমোদন করেছে যার মধ্যে ৫০ শতাংশ আসন রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। আগরতলার নার্সেস ট্রেনিং ইনস্টিটিউটকে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে আগরতলা সরকারি নার্সিং কলেজে উন্নীত করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে উদয়পুরের অগ্জিলিয়ারি নার্স এন্ড মিডওয়াইফ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটকে জিএনএম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে উন্নীত করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে নর্থ-ইস্ট ইনস্টিটিউট অব নার্সিং সায়েন্সে ৪০ আসনবিশিষ্ট বিএসসি নার্সিং কোর্স চালু করা হয়েছে। আইএলএস নার্সিং ইনস্টিটিউটে ৩০ আসন বিশিষ্ট স্নাতকোত্তর বেসিক বিএসসি নার্সিং কোর্স চালু করা হয়েছে ও ৪০ আসন বিশিষ্ট জিএনএম কোর্স ত্রিপুরা ইনস্টিটিউট অব প্যারামেডিক্যাল সায়েন্সেসে চালু করা হয়েছে।
রাজ্যপাল বলেন, ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতালে আগরতলা সরকারি ডেন্টাল কলেজ চালু হয়েছে। এই কলেজে ডেন্টাল বিভাগের নয়টি স্পেশালিটি শাখা মিলিয়ে ৫০টি আসন রয়েছে। ক্লাসরুমে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন যন্ত্রপাতি বসিয়ে আধুনিক শিক্ষণ-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাইম মিনিস্টার্স ডেভেলপমেন্ট ইনিসিয়েটিভ ফর নর্থ-ইস্ট রিজিওন প্রকল্পে বিল্ডিং কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ভারত সরকার ২০২ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। রাজ্যে ২০০ একরের মত জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই জমিতে নতুন এইমস'র নির্মাণ কাজ শুরু করার লক্ষ্যে পরিদর্শন করে তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে। তাছাড়া কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ধলাইয়ের জেলা হাসপাতালের সঙ্গে এমবিবিএস কোর্সে ১০০ জন ছাত্রছাত্রী পঠন পাঠন করতে পারে এমন একটি নতুন মেডিক্যাল কলেজ গড়ে তোলার বিষয়ে প্রস্তাব রয়েছে। রাজ্যের দূরবর্তী প্রান্তিক এলাকায় সরকার স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ পৌছে দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই লক্ষ্যেই সিপাহীজলা জেলার কাঞ্চনমালায় ১টি নতুন প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ভবন এবং তৈবান্দালে ১০ শয্যার একটি নতুন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন উদ্বোধন করা হয়েছে।
রাজ্যপাল বলেন, ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের এ পর্যন্ত ত্রিপুরা পুলিশ অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। নেশা মুক্তি অভিযানের অঙ্গ হিসাবে ২,৫৪,৭১৩ কেজি গাঁজা, ১০,৯২,৫২৪ বোতল কফ সিরাফ, ৫০,০৫,৩০১টি ইয়াবা ট্যাবলেট, ৩৮, ৭৩১ গ্রাম হেরোইন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং ৫,৮৪,০৬,৭০৯টি গাঁজা গাছের চারা ধ্বংস করা হয়েছে। এ বিষয়ে ২,৪৭৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ৩,৮২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, এই সময়ে ১,০৪,৯৫৪ ই-চালানের মাধ্যমে ৭,২০,৩৫,৬০০ টাকা সংগৃহীত হয়েছে। ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টালে ১৪,৯০,৩৭,৪২৭ টাকার অনলাইন প্রতারণার বিষয় লিপিবদ্ধ হয়েছে এবং ১,২৯,৫৮,৫৭০ টাকার বিষয়ে ত্রিপুরা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট খতিয়ে দেখছে। ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৩-২৪ সময়ে ১,২৬২ জন নতুন স্পেশাল পুলিশ অফিসার (এসপিও) নিয়োগ করা হয়েছে। ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলসের (ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ান) নতুন ২টি বাহিনী গঠন করা হয়েছে। রাজ্য সরকার স্টেট ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে একটি লাই ডিটেকশন ডিভিশন খোলার অনুমোদন দিয়েছে।
বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকার আগরতলায় হাঁপানিয়ায় ১৪০.২০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ইউনিটি মল স্থাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রস্তাবিত এই বহুতলীয় ইউনিটি মলে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী হস্ততাঁত, হস্তকার সামগ্রীর বিক্রয়ের পরিকাঠামো থাকবে। ২০২২-২৩ সালে বাংলাদেশের সাথে ৭৫৮.০৯ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। ২০২২-২৩ সালে প্রাইম মিনিস্টার্স এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম ও স্বাবলম্বনের মতো দুটি ফ্ল্যাগশিপ স্বরোজগারি প্রকল্পে ১,৬২৪ জন যুবক যুবতীকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া যুব ত্রিপুরা, নতুন ত্রিপুরা, আত্মনির্ভর ত্রিপুরা প্রকল্পে রাজ্যের যুবদের শিল্প স্থাপনে আগ্রহ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন জায়গায় সফর করানো হচ্ছে। নর্থ ইস্টার্ন গ্লোবাল ইনভেস্টর্স সামিট ২৩'র অঙ্গ হিসেবে রাজ্যভিত্তিক গোলটেবিল বৈঠক গত বছরের ২ মে আগরতলায় অনুষ্ঠিত হয়। ৫০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের ১৩১টি বিনিয়োগের প্রস্তাব এখন বিবেচনাধীন রয়েছে। তৃতীয় ভারত-জাপান বুদ্ধজীবীস্তরের আলোচনায় উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে জাপানের বিনিয়োগ ও ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
রাজ্যপাল বলেন, তাঁত শিল্পী ও হস্ততাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের উন্নয়নের মাধ্যমে রাজ্য সরকার রাজ্যের তাঁত শিল্পের ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য ক্রমান্বয়ে কাজ করে চলেছে। এখন পর্যন্ত ৩৩০ জন হস্ততাঁত শিল্পীকে সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগুলিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তাছাড়াও রাজ্য সরকার ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সুবর্ণ জয়ন্তী ত্রিপুরা নির্মাণ যোজনার আওতায় আগরতলায় একটি হস্ততাঁত, হস্তকার এবং রেশম ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মুঙ্গিয়াকামী ব্লকে একটি কমন ফেসিলিটি সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। উত্তর ত্রিপুরা ও ঊনকোটি জেলার ‘সিল্ক সমগ্র-২'র আওতায় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প 'সাপোর্ট ফর ডেভেলপমেন্ট অব মালবেরি সেরিকালচার' রূপায়িত হবে। ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ সালের জন্য কেন্দ্ৰীয় সিল্ক বোর্ড এই প্রকল্প খাতে ২১.৬৩ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে।
রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করা ও জাতীয় পর্যায়ে রাজ্যের প্রতিভাবানদের প্রতিভা তুলে ধরা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। আগরতলায় ট্যুরিজম এবং কালচারাল প্রোমোশনাল হাব স্থাপনের বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছ। রাজ্যে 'আজাদি কা অমৃত মহোৎসব', '৭৫ সীমান্ত গ্রাম ক্রান্তি বীরো কে নাম', মেরি মাটি মেরা দেশ ও হর ঘর তিরঙ্গা কর্মসূচি উদযাপিত হয়েছে। গত বছরের ১৫ নভেম্বর কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির যথাযথ রূপায়ণ ও সুবিধাভোগীদের এ সমস্ত প্রকল্পের বিষয় সম্পর্কে অবহিত করতে সমগ্র দেশে বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রার সূচনা হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শুরু হয়েছে প্রতি ঘরে সুশাসন ২০ অভিযান। রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যের পর্যটনকেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন ও পর্যটন ক্ষেত্রে কর্মরতদের আরও দক্ষতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে পর্যটনের বিকাশে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে মেডিক্যাল ট্যুরিজম বিকাশেও সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। স্বদেশ দর্শন ১.০ প্রকল্পে সিপাহীজলা, উদয়পুর, ছবিমুড়া, নীরমহল, উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ, ডম্বুর লেক, জম্পুই পাহাড় ও ঊনকোটির পরিকাঠামো উন্নয়নে কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ৯১.৬৬ কোটি টাকা। উদয়পুরের মাতা ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দিরের উন্নয়নের কাজ এগিয়ে চলছে। পুরাতন রাজভবনের উজ্জয়ন্ত প্যালেস অ্যান্ড দরবারহলকে মহারাজা বীরচন্দ্র কিশোর মাণিক্য মর্ডান আর্ট মিউজিয়াম অ্যান্ড কালচার সেন্টার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় নীরমহল, কসবা কালীবাড়ি মন্দির, চতুর্দশ দেবতাবাড়ি মন্দির, ছবিমুড়া ও ঊনকোটির পরিকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। পর্যটন শিল্পের বিকাশে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীকে ত্রিপুরা পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর মনোনীত করা হয়েছে।
--
বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকার আগরতলায় হাঁপানিয়ায় ১৪০.২০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ইউনিটি মল স্থাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রস্তাবিত এই বহুতলীয় ইউনিটি মলে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী হস্ততাঁত, হস্তকার সামগ্রীর বিক্রয়ের পরিকাঠামো থাকবে। ২০২২-২৩ সালে বাংলাদেশের সাথে ৭৫৮.০৯ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। ২০২২-২৩ সালে প্রাইম মিনিস্টার্স এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম ও স্বাবলম্বনের মতো দুটি ফ্ল্যাগশিপ স্বরোজগারি প্রকল্পে ১,৬২৪ জন যুবক যুবতীকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া যুব ত্রিপুরা, নতুন ত্রিপুরা, আত্মনির্ভর ত্রিপুরা প্রকল্পে রাজ্যের যুবদের শিল্প স্থাপনে আগ্রহ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন জায়গায় সফর করানো হচ্ছে। নর্থ ইস্টার্ন গ্লোবাল ইনভেস্টর্স সামিট ২৩'র অঙ্গ হিসেবে রাজ্যভিত্তিক গোলটেবিল বৈঠক গত বছরের ২ মে আগরতলায় অনুষ্ঠিত হয়। ৫০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের ১৩১টি বিনিয়োগের প্রস্তাব এখন বিবেচনাধীন রয়েছে। তৃতীয় ভারত-জাপান বুদ্ধজীবীস্তরের আলোচনায় উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে জাপানের বিনিয়োগ ও ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
রাজ্যপাল বলেন, তাঁত শিল্পী ও হস্ততাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের উন্নয়নের মাধ্যমে রাজ্য সরকার রাজ্যের তাঁত শিল্পের ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য ক্রমান্বয়ে কাজ করে চলেছে। এখন পর্যন্ত ৩৩০ জন হস্ততাঁত শিল্পীকে সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগুলিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তাছাড়াও রাজ্য সরকার ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সুবর্ণ জয়ন্তী ত্রিপুরা নির্মাণ যোজনার আওতায় আগরতলায় একটি হস্ততাঁত, হস্তকার এবং রেশম ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মুঙ্গিয়াকামী ব্লকে একটি কমন ফেসিলিটি সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। উত্তর ত্রিপুরা ও ঊনকোটি জেলার ‘সিল্ক সমগ্র-২'র আওতায় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প 'সাপোর্ট ফর ডেভেলপমেন্ট অব মালবেরি সেরিকালচার' রূপায়িত হবে। 2022-24 3 2024-২৫ সালের জন্য কেন্দ্ৰীয় সিল্ক বোর্ড এই প্রকল্প খাতে ২১.৬৩ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে।
রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করা ও জাতীয় পর্যায়ে রাজ্যের প্রতিভাবানদের প্রতিভা তুলে ধরা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। আগরতলায় ট্যুরিজম এবং কালচারাল প্রোমোশনাল হাব স্থাপনের বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছ। রাজ্যে 'আজাদি কা অমৃত মহোৎসব', '৭৫ সীমান্ত গ্রাম ক্রান্তি বীরো কে নাম', মেরি মাটি মেরা দেশ ও হর ঘর তিরঙ্গা কর্মসূচি উদযাপিত হয়েছে। গত বছরের ১৫ নভেম্বর কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির যথাযথ রূপায়ণ ও সুবিধাভোগীদের এ সমস্ত প্রকল্পের বিষয় সম্পর্কে অবহিত করতে সমগ্র দেশে বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রার সূচনা হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শুরু হয়েছে প্রতি ঘরে সুশাসন ২০ অভিযান। রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যের পর্যটনকেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন ও পর্যটন ক্ষেত্রে কর্মরতদের আরও দক্ষতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে পর্যটনের বিকাশে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে মেডিক্যাল ট্যুরিজম বিকাশেও সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। স্বদেশ দর্শন ১.০ প্রকল্পে সিপাহীজলা, উদয়পুর, ছবিমুড়া, নীরমহল, উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ, ডম্বুর লেক, জম্পুই পাহাড় ও ঊনকোটির পরিকাঠামো উন্নয়নে কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ৯১.৬৬ কোটি টাকা। উদয়পুরের মাতা ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দিরের উন্নয়নের কাজ এগিয়ে চলছে। পুরাতন রাজভবনের উজ্জয়ন্ত প্যালেস অ্যান্ড দরবারহলকে মহারাজা বীরচন্দ্র কিশোর মাণিক্য মর্ডান আর্ট মিউজিয়াম অ্যান্ড কালচার সেন্টার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় নীরমহল, কসবা কালীবাড়ি মন্দির, চতুর্দশ দেবতাবাড়ি মন্দির, ছবিমুড়া ও ঊনকোটির পরিকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। পর্যটন শিল্পের বিকাশে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীকে ত্রিপুরা পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর মনোনীত করা হয়েছে।
বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকার বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য অবিরাম কাজ করে চলেছে। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে গ্রুপ সি ও মাল্টি টাস্কিং স্টাফ (গ্রুপ ডি) পদে নিয়োগের জন্য কর্মবিনিয়োগ সেবা এবং জনশক্তি পরিকল্পনা দপ্তরের অধীনে জয়েন্ট রিক্রুটমেন্ট বোর্ড অব ত্রিপুরা গঠন করা হয়েছে। গ্রুপ সি পদে এই বোর্ড ১,৯৮০ জন প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে এবং মাল্টি টাস্কিং স্টাফ পদের বাছাই প্রক্রিয়ার কাজ এগিয়ে চলেছে। ন্যাশনাল ক্যারিয়ার সার্ভিস প্রজেক্টের আওতায় প্রাইভেট সেক্টরে বেকার যুবক যুবতীদের নিয়োগের লক্ষ্যে কর্মবিনিয়োগ সেবা এবং জনশক্তি পরিকল্পনা দপ্তর ৭৪টি চাকরি মেলার আয়োজন করেছে। রাজ্য সরকার ব্যবসা বাণিজ্যিক প্রক্রিয়ার সরলীকরণে উদ্যোগ নিয়েছে। 'স্বাগত' পোর্টালের মাধ্যমে পরিকল্পনার নকসা অনুমোদন, কারখানার রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্সিং, ফ্যাক্টরিজ ও বয়লার্স লাইসেন্সের নবীকরণের সুযোগ চালু করা হয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি কারখানার ন্যূনতম শ্রমিকের সংখ্যা ১০ থেকে বাড়িয়ে ২০ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ড্রাগ ও অন্যান্য নেশা সামগ্রীর কবল থেকে সমাজকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে সরকার প্রজেক্ট ‘মুক্তি' শুরু করেছে। লিগ্যাল এইড ডিফেন্স কাউন্সিল স্কিম চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২,১১৮টি মামলা হাতে নেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত রাজ্যে ১,৩৫৬টি আইনি সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে।
বিধানসভায় রাজ্যপাল আরও বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ প্রকল্পে রাজ্য সরকার ৭৪ হাজারটি আবাস নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ করেছে। আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর পরিবারদের জন্য উপার্জনশীল সম্পদ সৃষ্টির উপর গুরুত্ব আরোপ করে ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত এমজিএন রেগা প্রকল্পে ৮১৫.৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩.০৩ কোটি শ্রমদিবস সৃষ্টি করা হয়েছে। ভবিষ্যতের জন্য জল সংরক্ষণের লক্ষ্যে আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের অঙ্গ হিসেবে মিশন অমৃত সরোবর প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা অনুসারে প্রত্যেক জেলায় অন্ততপক্ষে ৭৫টি অমৃত সরোবর নির্মাণ করেছে। তিনি বলেন, দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যোজনা ন্যাশনাল রুরাল লাইভলিহুড মিশন প্রকল্পে গত পাঁচ বছরে রাজ্যে ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশন ৪৭,৬০০টি মহিলা স্বসহায়ক দল গঠন করেছে। রাজ্যের ৪.৬৬ লক্ষের মত গ্রামীণ মহিলা ৫১,২৫৪টি স্বসহায়ক দলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এই স্বসহায়ক দলগুলিকে ২,০৯৪টি ভিলেজ অর্গানাইজেশন এবং ১০২টি ক্লাস্টার লেভেল ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামীণ কৌশল যোজনা প্রকল্পে ১৬, ১৬৯ জন গ্রামীণ যুবক-যুবতীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এরমধ্যে ১২,৮৬৩ জনের প্রশিক্ষণের কাজ শেষ হয়েছে। ৫,৪১৬ জনের বিভিন্ন সংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে এবং নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে তারা তিন মাসের উপর কর্মরত রয়েছেন। রাজ্য সরকার ট্রান্সফরমেশন অব অ্যাসপিরেশনাল ব্লক প্রোগ্রামের আওতায় রাজ্যের ১২টি সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা ব্লকের উন্নয়নে সচেষ্ট। গ্রামীণ জনগণের আর্থ সামাজিক মান উন্নয়নে ‘মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনায়' শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১০,৮৩,৩৬৬টি পরিবার উপকৃত হয়েছে।
রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকারের রূপায়িত কর্মসূচি জাতীয়স্তরেও প্রশংসিত হচ্ছে। কুমারঘাট বিএসি নানাজি দেশমুখ সর্বোত্তম পঞ্চায়েত সতত বিকাশ পুরস্কার, রূপাইছড়ি বিএসি কার্বন নিউট্রাল বিশেষ পঞ্চায়েত পুরস্কার, উত্তর ত্রিপুরা জেলা অবশিষ্ট ৭টি জেলা ভূমি সম্মান পুরস্কার পেয়েছে। গন্ডাতুইসা রাজস্ব সার্কেলকে বিভক্ত করে রইস্যাবাড়ির রাজস্ব সার্কেল নামে একটি নতুন সার্কেল সৃষ্টি করা হয়েছে। তাছাড়াও ধলাই জেলার গন্ডাতুইসা মহকুমায় তুইচাকমা ও রামনগর তহশিল কাছারি নামে দুটি নতুন তহশিল অফিস চালু করা হয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকার বন্য প্রাণীর আক্রমণ ও বনের দাবানলকে রাজ্য বিপর্যয় হিসেবে ঘোষণা করেছে।
বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যে নাগরিকদের জীবনযাত্রা সহজতর করতে সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনায় অনলাইন পরিষেবা চালু করেছে। রাজ্যের নিজস্ব উৎপাদন ও কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো যেমন পিএসইউ (পাবলিক সেক্টর ইউনিট) এবং ওটিপিসি (ওএনজিসি ত্রিপুরা পাওয়ার কোম্পানি), পালাটানা ও নীপকো (নর্থ ইস্টার্ন ইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেড), মনারচক থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে রাজ্যের পিক আওয়ারের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়েছে। চূড়ান্ত সময়ের চাহিদা মেটাতে শুধু স্বল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎ কিনতে হয়। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের ২,২৭৫ কোটি টাকায় ত্রিপুরা পাওয়ার 'ডিস্ট্রিবিউশন স্ট্রেংদেনিং অ্যান্ড জেনারেশন এফিসিয়েন্সি' প্রকল্প রূপায়ণ করা হচ্ছে। বর্তমান বিদ্যুৎ পরিষেবা পরিকাঠামোর আরও উন্নতিতে রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় আর্থিক সহায়তায় ‘রিভ্যাম্পট্ রিফর্মড বেইসড রেজাল্ট লিংকড ডিস্ট্রিবিউশন সেক্টর স্কিম' রূপায়ণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের ১,৮৪০ কোটি টাকায় রাজ্য সরকার নর্থ- ইস্টার্ন রিজিওন্যাল পাওয়ার সিস্টেম ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট রূপায়ণ করছে। রাজ্য সরকার বিদ্যুৎ পরিবহণের জন্য ত্রিপুরা পাওয়ার ট্রান্সমিশন লিমিটেড নামে একটি সংস্থা গঠন করেছে। ৩৩ কেভি পর্যায়ে সাব-ট্রান্সমিশন সিস্টেম সম্বলিত এটাই দেশের মধ্যে প্রথম সংস্থা।
রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকার জল জীবন মিশনে গ্রামীণ এলাকায় ৫.৫১ লক্ষ বাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানীয়জলের সংযোগ দিয়েছে, যা শতাংশের নিরিখে ৭৩.৭৪ শতাংশ। বর্তমানে ত্রিপুরাতে ৬টি জাতীয় সড়ক রয়েছে যার মোট দৈর্ঘ্য ৯২৩৩১ কিলোমিটার। তাছাড়া ৪টি সড়ককে নীতিগতভাবে জাতীয় সড়ক ঘোষণা করা হয়েছে, যার দৈর্ঘ্য ২২৯.২৫ কিলোমিটার। ২০২৩-এর নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৪৮১ কিলোমিটার জাতীয় সড়ককে পেভড সোল্ডার সহ ডবল লেন করা হয়েছে এবং ৭৪.৮৫ কিমি সড়ককে আরও মজবুত করা হয়েছে। আরও ১৪১.২৫৫ কিলোমিটার সড়ক পেভড সোল্ডার সহ দুই লেন করার কাজ চলছে। এরমধ্যে ৮নং জাতীয় সড়কে গোমতী ও মুহুরী নদীর উপর দুটি সেতু তৈরির কাজও রয়েছে। তাছাড়া চম্পকনগর থেকে খয়েরপুর পর্যন্ত ১৯ কিমি চার লেন করার কাজ বিডিং পর্যায়ে রয়েছে। চম্পকনগর-মুঙ্গিয়াকামী-আমবাসা-কুমারঘাট এবং উদয়পুর-শ্রীমন্তপুর বাইপাস তৈরির জন্য ডিপিআর তৈরির কাজ চলছে।
রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ২ লক্ষ ৫৫ হাজার ২৪১ হেক্টর। এরমধ্যে ১,২০,৬২৪ হেক্টর এলাকা জলসেচের আওতায় এসেছে। পূর্ত দপ্তর (জল সম্পদ) ২০২৩-২৪ সাল থেকে শুরু করে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ২১,৩১৯ হেক্টর এলাকায় জলসেচের সুযোগ নিশ্চিত করতে ৫৫টি ক্ষুদ্র সেচ জলাধার, ৫টি ডাইভারশন প্রকল্প, ৫০০টি ডিপ টিউবওয়েল, ১৩টি লিফট ইরিগেশন প্রকল্প এবং ২,৭৬১টি স্থলবোর টিউবওয়েল খননের উদ্যোগ নিয়েছে। চম্পকনগরের কাছে বড়মুড়ায় হাওড়া নদীর ক্যাচমেন্ট এলাকায় এবং চাম্পাবাড়িতে হাওড়া নদীর শাখানদী চাম্পাইছড়াতে দুটি বাঁধ নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকার ত্রিপুরাকে বহুজাতিক বাণিজ্য ও যোগাযোগের ট্রান্সপোর্ট ও লজিস্টিক হাব হিসেবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে পরিবহণ দপ্তর বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ করছে। এরমধ্যে রয়েছে মাল্টি মডেল ট্রান্সপোর্ট হাব, আন্তঃরাজ্য এবং আন্তর্জাতিক বাস পরিষেবা, আন্তঃরাজ্য ও বাংলাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ, বড় বড় নদীগুলিকে নিয়ে জলপথ, হেলিপ্যাড ও গ্রীণফিল্ড এয়ারপোর্ট নির্মাণ ইত্যাদি। নতুন নতুন এক্সপ্রেস ট্রেন এবং মহারাজা বীরবিক্রম বিমানবন্দর থেকে বিমান পরিষেবার মাধ্যমে ত্রিপুরা দেশের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আগরতলা-চট্টগ্রাম-আগরতলা রুটে আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা চালু করার জন্য কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক স্পাইস জেট এয়ারলাইন্সকে অনুমোদন দিয়েছে। এমবিবি বিমানবন্দরকে ইতিমধ্যেই কাস্টমস্ এয়ারপোর্ট ঘোষণা করা হয়েছে।
বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যে শহুরীকরণের সমস্যা মেটাতে আগামী পাঁচ বছরে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আগরতলা, উদয়পুর ও ধর্মনগরে নতুন স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলার জন্য ‘মুখ্যমন্ত্রী স্যাটেলাইট টাউন ডেভেলপমেন্ট স্কিম' চালু করা হয়েছে। জুন ২০২৪-এর মধ্যে আগরতলায় লাইট হাউস প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। রাজ্যে শহুরে পরিকাঠামো গড়ে তুলতে ‘মুখ্যমন্ত্রী নগর উন্নয়ন প্রকল্প' নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করা হয়েছে। পূর্বতন ‘ত্রিপুরা আরবান এমপ্লয়মেন্ট প্রোগ্রাম'-কে অন্তর্ভুক্ত করে আগামী ৫ বছরে এই প্রকল্পে ১,৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে।
রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যের জনজাতিদের উন্নয়নে রাজ্য সরকার দায়বদ্ধ। এই উদ্দেশ্যেই গত ১৫ নভেম্বর ২০২৩ রাজ্যভিত্তিক জনজাতীয় গৌরব দিবস উদযাপন উপলক্ষে 'চিফ মিনিস্টার ট্রাইবেল ডেভেলপমেন্ট মিশন' নামে নতুন এক প্রকল্পের সূচনা হয়েছে। এর মাধ্যমে রাজ্যের জনজাতিদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি, স্বাস্থ্যবিধি, পানীয়জল ও জীবনমান উন্নয়নে জোর দেওয়া হবে। এই প্রকল্পে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে 'প্রধানমন্ত্রী আদি আদর্শ গ্রাম যোজনা'য় ১৯৮টি ভিলেজের উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য মোট ৪০ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্পেশাল ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্যাকেজে বিশ্ব ব্যাঙ্ক ‘ত্রিপুরা রুরাল ইকোনমিক গ্রোথ এন্ড সাস্টেইনেবল ডেলিভারি প্রজেক্ট'-এ ১,৪০০ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ৪টি এসটি হোস্টেল, ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ১টি এসটি হোস্টেল,
অ্যাসপির্যাশন্যাল ব্লকে ১৫টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, ৩টি মার্কেট স্টল, ১টি মাল্টিপারপাস কমিউনিটি
হল, এসটি হোস্টেলের আবাসিকদের জন্য কয়ার ম্যাট্রেস ও কম্বল, ১০টি এসটি হোস্টেলে পাইলট
ভিত্তিতে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট/আয়রণ রিম্যুভাল প্ল্যান্ট বসানো ইত্যাদি কাজের জন্য ভারত সরকারের জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রক ১৮.৪৬ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যের ১০০ জন জনজাতি সুবিধাভোগীকে পাওয়ারটিলার ও ৯০ জন সুবিধাভোগীকে অটোরিক্সা দেওয়া হয়েছে। চিফ মিনিস্টার্স রাবার মিশন ১৭,৮২০ জন সুবিধাভোগীকে ১৪,০১১.৬৬ হেক্টর জমিতে রাবার চাষের আওতায় আনা হয়েছে। তাছাড়াও এই মিশনে জনজাতি সুবিধাভোগীদের রাবার, আগর ও সুপারি চাষে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বন ধন যোজনায় ২৫টি নতুন বন ধন বিকাশ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দেশের ৭৫টি জনজাতি সম্প্রদায়কে আদিম জনজাতি গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে। এরমধ্যে রাজ্যের রিয়াং জনজাতি গোষ্ঠীকে এই আদিম জনজাতি গোষ্ঠীর তালিকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাজ্য সরকার রিয়াং জনগোষ্ঠীর মানুষের আর্থ সামাজিক মান, শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।
রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকার তপশিলি জাতি জনগোষ্ঠী, ওবিসি জনগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের উন্নয়নেও দায়বদ্ধ। রাজ্যে স্পেশাল সেন্ট্রাল অ্যাসিস্টেন্স টু সিডিউল্ড সাব প্ল্যানে প্রধানমন্ত্রী আদর্শ গ্রাম যোজনায় রাজ্যের ৩০টি তপশিলি জাতি অধ্যুষিত গ্রামকে আদর্শ গ্রামে রূপান্তরিত করা হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের আর্থ সামাজিক মান উন্নয়ন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য খেলাধুলার বিকাশে সরকার কাজ করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী জনবিকাশ কার্যক্রমে ৩০ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২২৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষায় তপশিলি জাতি, অন্যান্য পশ্চাদপদ শ্রেণী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করতে সহজ ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যে সমবায় আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে রাজ্যবাসীকে আরও সচেতন করতে সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।
ইতিমধ্যে ৩৯৪টি সমবায় সমিতিকে অনলাইনে নথিভুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে ১২টি ফার্মার প্রডিউসার অর্গানাইজেশন, ২টি প্যাকস ও ল্যাম্পস পেট্রোল ডিজেল বিক্রয় কেন্দ্রের জন্য আবেদন করেছে। রাজ্যের ২৩টি প্যাকস ও ল্যাম্পস প্রধানমন্ত্রী জন ঔষধি কেন্দ্র প্রকল্পে আবেদন করেছে। রাজ্যের ১২৫টি প্যাকস কমন সার্ভিস সেন্টার হিসেবে কাজ শুরু করেছে। ৪২টি প্যাকস ও ল্যাম্পস ভারতীয় বীজ সহকারি সমিতির সদস্য হয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকার দুর্লভ ও বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীর সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির জন্য নির্দিষ্ট প্রজনন ও সংরক্ষণ কর্মসূচি নিয়েছে। রাজ্যে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১২,৬৩১ হেক্টরের বেশি বন এলাকায় বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। তাছাড়া ১,৯৫২ হেক্টর জমিতে ব্যবসায়িক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতির বাঁশ লাগানো হয়েছে। রাজ্যে আগর গাছ রোপণ ও আগর কাঠ প্রক্রিয়াকরণ শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ২০২১ সালে ত্রিপুরা আগর উড পলিসি বিজ্ঞপিত হয়। বন দপ্তর ও এনইসি'র প্রচেষ্টার ফলে মিনিস্ট্রি অব এনভায়রনমেন্ট, ফরেস্ট অ্যান্ড ক্লাইমেন্ট চেঞ্জ প্রথমবারে মতো আগর তেল রপ্তানির জন্য অনুমোদন দেয়। এতে গত ৪ অক্টোবর, ২০২৩ চুরাইবাড়িতে উৎপাদিত আগর গাছের তেল উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দুবাইতে রপ্তানি হয়েছে।
বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকার একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে। এই লক্ষ্যে গত ১৫ জুন, ২০২৩ মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের প্লাস্টিক মুক্ত অভিযানের সূচনা করেন। রাজ্য সরকার ত্রিপুরা সরকারি ছাপাখানার আধুনিকীকরণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রদর্শিত উন্নয়নের দিশায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহার নেতৃত্বে রাজ্য সরকার রাজ্যের উন্নয়ন এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দায়বদ্ধ। সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিকাঠামোগত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে স্বচ্ছ পদ্ধতিতে দ্রুত অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
0 মন্তব্যসমূহ