আগরতলা, ১২ ফেব্রুয়ারি: ত্রিপুরা পুলিশে মেধার কোন অভাব নেই। ত্রিপুরা পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। সন্ত্রাসবাদীদের নির্মুলীকরণে ত্রিপুরা পুলিশের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি কালার্স সম্মানে ভূষিত ত্রিপুরা পুলিশ রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিরিখে দেশের ২৮টি প্রদেশের মধ্যে নিচের দিক থেকে আগে পঞ্চম স্থানে ছিল ত্রিপুরা। আর এখন তৃতীয় স্থানে চলে এসেছে। ত্রিপুরা পুলিশের ১৫০তম বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সোমবার আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত শিল্প ও কারুশিল্প প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, রাজ্যে প্রতি লক্ষ জনসংখ্যায় সবমিলিয়ে ১১০টি অপরাধের ঘটনা হচ্ছে। যেখানে জাতীয় গড় হচ্ছে ৪২২টি। শারীরিক আক্রমনের ঘটনায় ২৮টি রাজ্যের মধ্যে ত্রিপুরার স্থান অষ্টমে রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতি লক্ষ জনসংখ্যায় ত্রিপুরার গড় ৪৩.৮ শতাংশ। যেখানে জাতীয় গড় ৮৪টি। সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলায় ত্রিপুরা সর্বনিম্ন স্থানে রয়েছে। প্রতি লক্ষ জনসংখ্যায় মাত্র ১১.৯। যেখানে জাতীয় গড় হচ্ছে ২০.৮। নারী সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনায় প্রতি লক্ষ জনসংখ্যায় ত্রিপুরার গড় মাত্র ৩৭। জাতীয় গড় হচ্ছে ৬৬। ২০২২ - ২৩ সালে পণ সংক্রান্ত অপরাধ, খুন, ডাকাতি সহ সার্বিক অপরাধের ঘটনা অনেক কমেছে। ২০২২ সাল থেকে ২০২৩ সালে সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনা ৭ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে আসা অনেক রোহিঙ্গা নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেককে আবার পুশ ব্যাক করা হয়েছে। ২০২৩ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন শান্তিপূর্নভাবে সম্পন্ন হওয়ার পেছনে আরক্ষা দপ্তরের কৃতিত্ব রয়েছে। বক্সনগর ও ধনপুরেও শান্তিপূর্নভাবে উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুর্গাপুজো ও দীপাবলি উৎসব শান্তিপূর্নভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্যও ত্রিপুরা পুলিশের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যুব সমাজকে মাদকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে লাগাতর প্রয়াস জারি রেখেছে ত্রিপুরা পুলিশ। নেশাদ্রব্য বাজেয়াপ্ত করা ও ধ্বংস করার দিক থেকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে এখন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে রাজ্য প্রশাসন। এসকল ঘটনায় অনেক লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অনেকের শাস্তিও হয়েছে। যান দুর্ঘটনা রোধেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে ত্রিপুরা পুলিশ। ২০২২ সালে রাজ্যে যানবাহনের সংখ্যা ছিল ৬ লক্ষ ৮৯ হাজারের অধিক। সেই জায়গায় ২০২৩ সালে যানবাহনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লক্ষ ৪৬ হাজারের অধিক। এত বিশাল সংখ্যায় যানবাহন বাড়লেও ত্রিপুরা পুলিশ দুর্ঘটনা রোধে কাজ করে যাচ্ছে। ২০২৩ সালে প্রয়াস কর্মসূচির মাধ্যমে ৫ হাজার ৯০৩টি সচেতনতা চালানো হয়েছে। এর পাশাপাশি আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের অংশ হিসেবে ত্রিপুরা পুলিশ ও টিএসআর বাহিনী যৌথভাবে রান ফর ইউনিটি, ফুটবল, ভলিবল টুর্নামেন্ট, স্বাস্থ্য শিবির ইত্যাদি কার্যক্রম করেছে। এসমস্ত কার্যক্রমের মাধ্যমে পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ধারণা অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। এধরণের কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের খুব কাছে পৌঁছানো যায়।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর ত্রিপুরা পুলিশের আপদকালীন পরিষেবা (১১২) চালু হয়। যা এখনো চালু রয়েছে। এই ব্যবস্থায় ২০২২ সালে ১০.৫১ মিনিটে এই ব্যবস্থায় রেসপন্স (সাড়া) করা হতো। আর ২০২৩ সালে সেটা কমে ৯.৩৯ মিনিটে রেসপন্স করা হয়। জিপিএস ভিত্তিক ভ্যাহিকেল ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে। অপরাধ মোকাবিলার জন্য ত্রিপুরা পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ বেশ ভালোভাবে কাজ করছে। ৫ বছরে থানার সংখ্যা ৮১ থেকে বাড়িয়ে ১০১টি করা হয়েছে। এই ১০১টির মধ্যে বর্তমানে ৮৭টি থানা চালু রয়েছে। বাকিগুলি খুব সহসাই উদ্বোধন করা হবে। মহিলা স্বশক্তিকরনের লক্ষ্যে রাজ্যের ৮টি জেলায় মহিলা থানা স্থাপন করা হয়েছে। এখন সারা রাজ্যে মহিলা থানার সংখ্যা রয়েছে ৯টি। রাজ্যের কেটিডিএস পুলিশ ট্রেনিং একাডেমি নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। মনিপুর থেকেও তাদের কনস্টেবলদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন সহ আরক্ষা দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ।
0 মন্তব্যসমূহ