আগরতলা, ৮ ফেব্রুয়ারি: বর্তমান সরকার খুবই স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও স্বচ্ছতার উপর ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলছেন তিনি চৌকিদার। কাজেই এই সরকারে দুর্নীতির কোন জায়গা নেই। কোন জায়গায় দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। মানুষের আস্থা অর্জন করাই এই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই ভোট হবে। মানুষ যার যার পছন্দে ভোট দেবে। যেখানে যেখানে কমিউনিস্টরা ছিল সেখানেই সমস্যা। ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায় সমস্যা জিইয়ে রেখে শাসন চালিয়েছিল তারা। আর এখন রাজ্যে সত্যিকার অর্থেই শান্তি সম্প্রীতির পরিবেশ কায়েম রয়েছে।
বৃহস্পতিবার আগরতলার এডিনগর পঞ্চায়েত রাজ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ত্রিপুরা ন্যায্য মূল্যের দোকান পরিচালক সমিতির ২৬তম রাজ্য সন্মেলনের সূচনা করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
সম্মেলনের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পূর্বতন সরকার আর বর্তমান সরকারের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আগে শুধু সভা সুন্দরের জন্য চেয়ার ধরে রাখতো। আর এখন মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য সদর্থক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। আজকের সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিরাই ত্রিপুরার জনসাধারণের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকেন। জনগণের খাবার সহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক দ্রব্যাদি নিয়মিত পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। কাজেই তাদের ভূমিকা খুবই উল্লেখযোগ্য। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থীদের জয়ী করতে বিশেষ ভূমিকা নিতে পারেন তারা।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের কাজের মাধ্যমেই দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সফলতার সঙ্গে ৯ বছর অতিক্রম করেছেন তিনি। আগামীতেও আবার মানুষের আস্থা নিয়ে দায়িত্ব সামলাবেন। তিনি বাস্তবিক অর্থে মানুষের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হচ্ছে এবার ভারতীয় জনতা পার্টি চারশোর অধিক আসন নিয়ে পুনরায় সরকার গড়বে। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন সেখানে আগামীতেও তাঁকে দরকার এই দেশের। তিনি থাকলেই দেশ আরো বিকাশের দিশায় যাবে। অথচ ২০১৪ সালের আগে দেশ কোন জায়গায় দাঁড়িয়েছিল! দেশের ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন এসে দাঁড়িয়েছিল। সেই জায়গা থেকে আজ দেশ উন্নত ও শক্তিশালী অবস্থানে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা বলেন, রাজ্য এখন ভালো অবস্থায় রয়েছে। এই সরকারের লক্ষ্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট করা। যেখানে গায়ের জোরের কোন স্থান না থাকে। কিছুদিন আগেও রাজ্যে দুটি উপ নির্বাচন হয়েছে বক্সনগর ও ধনপুরে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ভোট সংঘটিত হয়েছে দুই কেন্দ্রে। বক্সনগরে প্রায় ৩০ হাজারের অধিক ভোটে জয়ী হয়েছেন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী। কাজের নিরিখেই এই সরকার মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সেজন্য মানুষ এই সরকারকে ভোট দিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের গনবন্টন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমানে রাজ্যে ২ হাজার ৬০টি ন্যায্যমূল্যের দোকান রয়েছে। এরমধ্যে মহিলা পরিচালিত ন্যায্যমূল্যের দোকানও রয়েছে। এডিনগর, ধর্মনগর ও উদয়পুরে ৩টি ট্রানজিট ফুড গোডাউন রয়েছে। ৬২টি জায়গায় ১৩৭টির মতো খাদ্য গুদাম রয়েছে। যেগুলির ক্ষমতা ৭৬ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। ৭টি জায়গায় রয়েছে এফসিআইয়ের ডিপো। যেগুলির ক্ষমতা ৪৭ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। ২০১৮ সালের পরে বর্তমানে বছরে দুবার করে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করছে সরকার। সেই হিসেবে এখন পর্যন্ত ১ লক্ষ ৯২ হাজার মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে। এর জন্য খরচ হয়েছে ৩৬৭ কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এক দেশ, এক রেশন কার্ড খুবই গুরুত্বপূর্ন। এর মাধ্যমে পরিযায়ী শ্রমিকরা বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছেন। এছাড়া মহিলা স্বশক্তিকরনের লক্ষ্যে খাদ্য গুদামে ২৬ জন মহিলা ক্লিনার নিয়োগ করা হয়েছে। আগে তারা দৈনিক ১৫০ টাকা হাজিরা পেতেন। আর এখন পান দৈনিক ৩০৬ টাকা।
এদিন সম্মেলনে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, বিশিষ্ট সমাজসেবী রাজীব ভট্টাচার্যী, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, স্থানীয় বিধায়ক মীনা রানী সরকার, ত্রিপুরা ন্যায্য মূল্যের দোকান পরিচালক সমিতি'র কনভেনর প্রদীপ চন্দ সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। এছাড়া সম্মেলনে অংশ নেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও মহকুমার রেশন ডিলারগণ।
0 মন্তব্যসমূহ