আগরতলা, ১৪ মার্চ: বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাই আমাদের সমাজ, রাজ্য ও দেশের সম্পদ। তারা যাতে ড্রাগসের নেশায় আসক্ত হয়ে এইচআইভি/ এইডস এর মতো রোগে আক্রান্ত না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের পাশাপাশি অভিভাবকদের আরো সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। ত্রিপুরা রাজ্যেও উদ্বেগজনক হারে এইচআইভি/ এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি মাসে গড়পড়তা ১৫০ থেকে ২০০ জন এইচআইভি আক্রান্ত হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শরীরের শিরা পথে সিরিঞ্জ মারফতে ড্রাগস নেওয়ার ফলে এটা হচ্ছে। তাই এই প্রবনতা রোধ করা শুধু ডাক্তার, পুলিশ, এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি বা শিক্ষকদের দিয়ে সম্ভব নয়। এজন্য সমাজের সকল অংশের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
ত্রিপুরা এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির উদ্যোগে বৃহস্পতিবার আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে এইচআইভি/ এইডস নিয়ে আয়োজিত এক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, একটা সময় ৭০ এর দশকে মনিপুরে সবচাইতে এইডস আক্রান্ত ছিল। মূলত, ইনজেকশনের মাধ্যমে ড্রাগস নেওয়ার কারণে সেখানে ড্রাগস আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়। আর এখন ত্রিপুরা রাজ্যেও সেই প্রবনতা ছড়িয়ে পড়েছে। যা খুবই উদ্বেগের। এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের ক্ষেত্রে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ড্রাগস নেওয়ার প্রবণতা অন্যতম একটি কারণ। এক্ষেত্রে আক্রান্তদের তিরস্কার না করে তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতিশীল হতে হবে। সচেতনতার পাশাপাশি নজরদারি বৃদ্ধির মাধ্যমে যুবশক্তিকে ড্রাগসের কবল থেকে দূরে রাখার অন্যতম উপায়। ছেলেমেয়েদের ড্রাগসের নেশা থেকে দূরে রাখতে অভিভাবক সহ শিক্ষক শিক্ষিকাদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ছেলেমেয়েদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বিশেষ করে তারা কি করছে, তাদের বন্ধুবান্ধব কেমন, তাদের চলন বলন ইত্যাদি বিষয়ে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। স্কুলে থাকাকালীন ছাত্রছাত্রীদের আচার আচরণ, বেশভূষার উপর নজর দিতে হবে শিক্ষক শিক্ষিকাদের। প্রয়োজনে সপ্তাহে একদিন এসকল বিষয় নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সচেতনতামূলক কার্যক্রম করতে হবে শিক্ষক শিক্ষিকাদের।
মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা বলেন, ইনজেকশন ব্যবহারের প্রবণতা নিয়েও স্বাস্থ্য দপ্তরকে আরো সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বিশেষ করে একই সিরিঞ্জ যাতে বার বার ব্যবহার করা না হয় সেদিকটা নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনা মহামারি থেকে ভারত সহ আরো প্রায় ১৫০টির মতো দেশকে রক্ষা করেছেন। সেই জায়গায় আমরা কেন এইডসকে মোকাবিলা করতে পারবো না - সেই প্রশ্নও রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা সবসময় নেশামুক্ত ত্রিপুরা গঠনের কথা বলছি। আর কার্যক্ষেত্রে ফল পাবো না সেটা হয় না। এই ব্যাধি মোকাবিলায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত রাজ্যে মোট এইচআইভি/ এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৩৩০ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৪ হাজার ২৯৫ জন, মহিলার সংখ্যা ১ হাজার ৩৩ জন। ট্রান্সজেন্ডার রয়েছেন ২ জন। আর এইডস আক্রান্ত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫৫৮ জন। এছাড়া রাজ্যে প্রতি মাসে নতুন করে ১৫০ থেকে ২০০ জন এইচআইভি আক্রান্ত হচ্ছেন। এর থেকে উত্তরণের জন্য সবাইকে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, এইডসের ভয়াবহতা থেকে রেহাই পেতে স্কুল থেকে ছেলেমেয়েদের উপর নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। সেসব ছেলেমেয়েদের চিহ্নিত করতে হবে যারা বিপথে পরিচালিত হচ্ছে। কারণ এই নেশা একজনের মাধ্যমে সেটা আরো ১০ জনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। এতে তারা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে। শুধু পুলিশ, আরক্ষা দপ্তর, শিক্ষা দপ্তর, চিকিৎসক, এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি বা অভিভাবকদের দিয়ে এই সামাজিক ব্যাধির মোকাবিলা করা যাবে না। এজন্য সমাজের প্রত্যেক নাগরিককে সচেতনতার বার্তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু আমি বা আমার পরিবার ভালো থাকলে হবে না। এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে প্রতিবেশীদের ভালো থাকার জন্যও এগিয়ে আসতে হবে। তবেই সমাজ সুস্থ থাকবে। এতে সবারই মঙ্গল।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব ব্রম্মিত কৌর, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ সঞ্জীব দেববর্মা, উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা এন সি শর্মা, স্টেট এনএসএস সেলের অফিসার প্রবাল কান্তি দেব, ত্রিপুরা এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির প্রজেক্ট ডিরেক্টর সমর্পিতা দত্ত সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। অনুষ্ঠানে অংশ নেন স্কুল কলেজের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষিকা সহ প্রিন্সিপালগণ ও ছাত্রছাত্রীরা।
0 মন্তব্যসমূহ