স্মরজিৎ দত্ত
কোর্টে হল ভর্তি লোক। বিচারক উপস্থিত হয়েছেন বিচারের জন্য। বিচার হবে তপতীর মৃত্যুর জন্য সন্দেহভাজন গুটিকয়েক লোকের। তপতির পাড়ার লোকসহ সংবাদ সংস্থা সাংবাদিক সহ সাধারণ লোকের সমাগমে কোট চত্বর গমগম করছে।
তপতী টেলি আর্টিস্ট। খুব অল্প সময়েই সিনেমা পাড়ায় বেশ নাম করেছে। সুদূর ফুলিয়া থেকে কলকাতায় এসে নিউ টাউনের এক পাড়ায় সে বাড়ি করে থাকে। সুন্দর গড়ন, সুন্দর চালচলন তার সঙ্গে উপরী তার সুঠাম ব্যক্তিত্ব। তপতীর এই সৌন্দর্য শুধু সিনেমা পাড়ায় নয়, তার থাকার এলাকায় অনেকেরই নজর কেড়েছে সে। তাতে কিশোর থেকে যুবক, যুবক থেকে বৃদ্ধ, কেউই বাদ যায়নি। চায়ের দোকানের ভিন্ন আলোচনার মধ্যে প্রতিদিনই অন্তত একবার কেউ না কেউ তার প্রসঙ্গে কিছু আলোচনা করবে। তবে তাকে দেখামাত্র কিছু লোকের অন্তরাত্মা অতি প্রখর ভাবে জাগ্রত হয় এমনটা স্বীকার করতেই হবে।
পাড়ার মুখ দিয়ে যাবার সময় তপতী মাথা নিচু করে হাঁটলেও; কেউ না কেউ তাকে ডেকে খেজুরে আলাপ না করে পারে না। স্বভাবতই তপতীকেও তার প্রতি উত্তর দিতে হয়। এই ঘটনার ধারাবাহিকতায় বেশ কয়েকজনই তপতির পরিচয় এর খাতায় লিপিবদ্ধ হয়েছে। কেউ কেউ আবার খাতার বাইরে গিয়ে দিদি সম্বোধনে আরো কিছুটা কাছের হবার চেষ্টায়, কেউ কেউ কিছুটা সফল হয়েছে। দিদি সম্বোধনের তালিকায় যারা আছে, তাদের সাথে গুটিকয় যুবকও ভিরেছে ;তাদের সেবা করার তাগিদ জাগে, অন্তরাত্মার জাগরণের ফলে। তারা কেউ কেউ অতি সজাগ যাতে তপতীর কোন অসুবিধা না হয়।
পরিচিতির বহরটা বেড়ে গেছে বলেই আজকাল তপতী বাড়ি ফেরার আগে পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকানে কিছুক্ষণ আড্ডা মারে। প্রফেশনের তাগিদে কখনো কখনো সাধারণভাবেই সিগারেটের প্যাকেট থেকে দুই একটা সিগারেট বন্ধুদেরকে দিয়ে নিজেও গোটা দুই বেশ আমেজ করেই টান দেয়। সাথে বটুকের চা তার তো লা-জবাব।
চায়ের দোকানের আড্ডায় তার কর্মজীবন নিয়ে যেমন ভিন্ন আলোচনা হয় ; সাথে সামাজিক বিভিন্ন বিষয়, আবার কখনো কখনো বর্তমান যুবক-যুবতীর যৌনতার যথেচ্ছাচার বিষয় নিয়েও ভিন্ন আলোচনা চলে বেশ রাত অবধিই। মাঝেমধ্যে আলোচনার যারা সঙ্গী সাথী তাদের কাউকে কাউকে দেখে তপতী বুঝতে পারে তাদের লালায়ীতো চোখ তার পোশাকে ঢাকা যৌবনকে বেশ তারিফের সঙ্গেই উপভোগ করছে। যদিও তপতী কিশোরের পর্যায়ে পড়ে না। আবার তপতী কখনো কিশোর কিংবা অতি সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে তেমন কোন পোশাক কোনদিনই পড়েনি। তবুও তার যৌবন এলাকার অনেক কিশোর, অনেক যুবক, অনেক বৃদ্ধকেই তাড়িত করে। এই উপলব্ধি তপতীর বোধগম্যতা লাভ করলেও তা নিয়ে কোনদিন বাতুলতা প্রকাশ করতে চায়নি।
শনিবারের সন্ধ্যা রোজের মতো সেদিনও তপতী চায়ের দোকানে এসে হাতের ব্যাগটিকে বেঞ্চিতে রেখে, দোকানদার বকুলকে জিজ্ঞাসা করল কিগো বকুলদা আজ ডেরা এত ফাঁকা কেন? গম্ভীর গলায় বকুলদা বললেন তোমাদের আজ ট্রিট আছে। তুমি জানো না? বিবেক ট্রিট দিচ্ছে। ওদের বাড়িতেই হবে। তোমাকে বলেনি? তপতীর হঠাৎ স্মরণ পড়ায়, ওষ্ঠের আড়ালে লুক্কায়িত তার বৃহদাকার জিভটিকে দাঁতের দ্বারা কেটে বললে, ও মাই গড এক্কেবারে ভুলে গেছি। এই বকুলদা, বিবেকের বাড়িটা ঠিক কোনটা বলতে পারবে? বকুলদা গম্ভীর গলায় বললে, তোমার কি মাল খাওয়ার অভ্যাস আছে? ওখানে আজ খাবারের সাথে মালের ফোয়ারাও ছুটবে। অভ্যাস না থাকলে বরং বাড়ি চলে যাও; কাল এসে জিভটা কে আরও বড় করে কেটে একটা সরি বলে দিও। তপতী বলে ওঠে, বকুলদা তোমার কি এখনো মনে হয় আমি ছোট! ওই মাল টাল খাওয়া নিয়ে আমার কাছে কোন ব্যাপার নয়। দু পেগ মারবো, আর কি রান্না হয়েছে দেখব, তার থেকে কিছু খেয়ে সোজা বাড়িতে হাটা। বকুলদা আবার গুরুগম্ভীর গলায় বললে সেটা তোমার ব্যাপার ; তবে ওই আড্ডায় তুমি একাই মেয়ে, তাই বুঝে এগিও। ভালো মন্দ বিচার করার বয়স তোমার যথেষ্ট।
সিনেমা পাড়ার উঠতি নায়িকা তাপতী সুতরাং ট্রিট কিংবা মদের আড্ডা এমন অনুষ্ঠান লেগেই থাকে তপতীর প্রাত্যহিক জীবনে। তাই আড্ডা নিয়ে তপতীর তেমন কোন রিপার্কেশন জাগে না তাৎক্ষণিকভাবে।
বকুল দার পয়সা মিটিয়ে দুটো দু লিটারের কোলড্রিংস কেনে তপতী; আর সোজা হাটা ধরে বিবেকের বাড়ির উদ্দেশ্যে। অনেক আড্ডাই তপতী তার এই কর্মজীবনে বহু বারই মেরেছে। তাতে মদ কিংবা অতিরিক্ত আন্তরিকতা তার কিছুটা আন্দাজ তপতীর আগেই ছিল। তাই তপতী জানত তাকে কোন জায়গায় সীমা বেঁধে দিতে হবে।
বকুলের দোকান থেকে বেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে বাঁ হাতের গলি ধরে তপতী বিবেকের বাড়ির দিকে এগোলো। খুব সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে বিবেক নয়। তবুও মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে হয়েও ঘরটিকে তার আধুনিক মানসিকতায় আধুনিক করে রাখার চেষ্টা রেখেছে। এই প্রথম তপতী এ পাড়ায় আসার পর বিবেকের বাড়িতে প্রথম প্রবেশ। রান্নাঘরে তখন রান্না চলছে। বসার ঘরে বিবেক সহ চায়ের দোকানের পরিচিত আরো গোটা পাঁচ তারা আসর জমিয়েছে সুরায়। তপতী পর্দা সরিয়ে একটু কেসে সম্মতি নেওয়ার চেষ্টা করল। ঘরে প্রবেশ করা যাবে কিনা? বিবেক পেছনে তাকিয়ে তপতীকে দেখে বেশ উদাত্ত কণ্ঠে বললো তপতী তুমি এসেছ, ওয়েলকাম। তপতী জানত পিকনিক যখন হচ্ছে আর যুবকের যখন সমাবেশ, তাতে "ম" এর আসর হবে না, এটা হতে পারে না। তপতির পরনে উজ্জ্বল কালো প্লাজো, আর ওপরে আরো বেশি উজ্জ্বল লাল টপ। এমনিতেই তপতির গরণ যুবক সম্প্রদায়ের লালসার একক। তার ওপর আকর্ষণীয় পোশাকে মাঝেমধ্যে তপতী সিনেমা পাড়ায় যেমন যুবকদের ঘুম উড়িয়ে দেয়, তেমনি তাদের পাড়াতেও। হাতের ব্যাগটা নামিয়ে তপতী কোন ভূমিকা না করেই বলে বসে, তোমরা অপেক্ষা না করেই শুরু করে দিলে! বিবেক ইতিমধ্যেই তপতির জন্য পেগ রেডি করে, তার হাতে তুলে দেয়। তপতীও বেশ পেশাদারী কায়দায় তা তুলে, পেশাদারী কায়দাতেই শেষও করে দেয় গ্লাস। এবার তার সাথে চলল দেদার গান। হঠাৎই লাস্যময়ী তপতী বলে উঠলো একটু নাচ হলে ভালো হয় না। এক বাক্যে সবাই মেনেও নিল। চলল ঘণ্টাখানেক উদোম নাচ তারপর পবিত্র "ম" নেশায় একসময় ক্লান্ত হয়ে একে একে অনেকেই ঘুমিয়ে পড়লেও বিবেকসহ তিনজন জেগেছিল। তবে তপতী তেমন নেশা না করলেও যথেষ্টই ঘোরে ছিল। ঘোরে থাকার ফলেই তার পরনের বেশভূষার শালীনতা অনেকটাই খর্ব হয়েছিল।
ইতিপূর্বেই তপতীর যৌবন নামক একককে উপভোগ করবার জন্য পাড়ার অনেকেই লালায়িত হলেও এমন কাছ থেকে যৌবনকে উপভোগ করা হয়তো কারোরই সম্ভব হয়নি। যেটা এই রাতে বিবেকসহ তিনজনের যে সুযোগ হয়েছে। হঠাৎই বিবেকসহ তিনজনের এক আদিম পৌরুষতা জাগ্রত হল। সে সময় এক রকম ঘোরেই ছিল তপতী। জেগে থাকলেও অনেকটাই বাহ্যিক জ্ঞান হারানো। সজাগ হলো, যখন সে যন্ত্রণা থেকে মুক্তির পথ খুঁজছিল। কিন্তু বিবেকসহ তিনজনের পৌরুষতাকে রোধ করার মত বিবেক তাদের মধ্যে আর ছিল না। তারা ভুলে গিয়েছিল তারা একই ঠেকের একে অপরের বন্ধু কিংবা বান্ধবী। যৌনতার লালসা তাদের ক্ষণিকের জন্য অন্ধ করে তুলল। তপতী এক সময়ে করুন স্বরে হাত জোড় করে তাদের কাছে বারবার ভিক্ষে চাইতে লাগল আমাকে এবার তোমরা মুক্তি দাও, আমি মরে যাব। কিন্তু কোন কাতর আবেদন তারা কেউ শুনলো না। তপতী প্রতিবাদীও হলো। বলল তোমরা তো পিকনিকের জন্য আমাকে ডেকেছিলে, তবে এ কোন পিকনিক? বিবেক, রূঢ় হাসি হেসে বললো কত দিন ধরে তোমার এই যৌবনের সাধ গ্রহণ করব বলে, আমরা কত পরিকল্পনা করেছি আজ আমরা পরিতৃপ্ত। তুমি আমাদের সাথে আবার আড্ডা দেবে তো? নেশাগ্রস্ত হলেও শারীরিক যন্ত্রণায় কাতর হয়েও ভেতর থেকে একটা কান্না তাকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলল । হঠাৎই চায়ের দোকানের বকুলদার কথা তার মনে পড়ল। বারবার তার মনে প্রশ্ন জাগলো তাহলে কি এই খেলার কথা বকুলদা জানতো? তবে কেন বকুলদা তাকে আরো বিস্তারিত জানালো না। আবার এও মনে জাগলো তাকে তো বকুলদা সাবধান করেছিল। তবে কি সেই সাবধানতাটাই বিশেষভাবে প্রয়োজন ছিল! তপতী প্রথম চেষ্টা করল একবার উঠে বসবার। পারলো না। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখল তার পরনের বসন যা দিয়ে তার ২২ বছরের যৌবনকে এত ঘাত প্রতিঘাতেও যত্নে রেখেছিল এতদিন; আজ হয়তো আনন্দ, হয়তো ভুল, চিরতরে হারাতে হল তাকে । রক্তের রক্তাক্ত রঙে কালো রঙের প্লাজোর রঙও পাল্টে গেছে। ভুলে গেল সে পিকনিকের খাওয়া দাওয়া। সেই অনাচার নিকৃষ্ট বেড়াজাল থেকে নিজেকে মুক্ত করবার জন্য আকুতি জানাতে লাগলো বার বার। শেষে একটা সময়ে প্রতিপক্ষরা যখন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল তখন উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করল তপতী আবার।
অনেক কষ্টে উজ্জ্বল আলো থাকা সত্ত্বেও সেই অন্ধকার এদোঁ গলি অতিক্রম করে ক্লান্ত দেহটাকে টানতে টানতে এসে দাঁড়ালো তার বাড়ির সামনে । বাড়িতে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে মা হয়তো এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। কারণ ভোরের আলো তখনো দেখা যায়নি। কোনরকমে হাতের হাতঘড়ি দেখে বুঝতে পারলো ঘড়িতে এখন সাড়ে তিনটে। এই ফ্ল্যাটের একটি চাবি তার কাছে আগাগোরাই থাকে। তাই দিয়েই ফ্ল্যাট খুলে হাতের ব্যাগটিকে নামিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো তপতী। উল্টোদিকে ক্লান্ত অবিচ্ছিন্ন অপরজনকে দেখে বারবার এ কথা বলতে লাগলো তোরা বলতি, কিছু পয়সা লাগবে; আমি দিয়ে দিতাম। বিশ্বপিতার কাছে প্রশ্ন করলো ওই ক্লান্ত একই অবয়বের, একই দর্শনের আয়নায় সেই মেয়েটিকে দেখে; হে ঈশ্বর, তুমি আমাকে এত সুন্দর করেছো কেন? তুমি তো আমাকে যৌবন আরেকটু কম দিতে পারতে। হে ঈশ্বর আমার অপরাধ আমার জন্ম এই মেয়ে হয়ে। তার থেকেও বড় অপরাধ আমি এই সুন্দর যৌবন নিয়ে বেঁচে আছি! হঠাৎই এক অজানা আওয়াজ কানে ভেসে ওঠে। তপতী তুমি আর শুধু যুবতী নও তুমি অনেকের, হয়তো আগামীতে আরো অনেকে তোমাকে এভাবেই ছিঁড়ে খাবে।
খুব অল্প বয়সেই হারিয়েছিল তপতী, তার বাবাকে। কখনো লোকের বাড়িতে কাজ করে, কখনো ঠিকা কাজ করে, কখনো কারখানায় ফোরণের কাজ করে মা তাকে বেশ কষ্ট করেই মানুষ করেছে। কুমারী বয়সে পা দিয়েই তপতী অনেক আগেই বুঝেছিল লোভাতুর ওই পুরুষের চোখ তাকে গ্রাস করছে; তবে তাকে নয়, তার যৌবনকে। অল্প বয়সে নিজেকে স্বতন্ত্র রেখেও মজা পেতো তাদের ওই লালসা দেখে। কিন্তু আজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তপতী অঝোরে কাঁদতে থাকে নিজের মনেই ; অজানা কিছু কথা ভেসে ওঠে মনে । তপতী তুমি যদি তোমাকে সরিয়ে নিতে পারো, একদম চিরতরে ; তাহলে ওই লোভাতুর পুরুষের দল তারা ঠকে যাবে। পাবে না কোনদিন তাদের কাছে আপন করে নিতে তোমার যৌবনকে। এক অজানা নেশা, না কথা! জানিনা সে চেপে বসে তার মাথায়। তপতী নিজের মনেই বলতে থাকে," আমাকে ওই লালসা পুরুষের দলকে ঠকাতেই হবে"। খুঁজতে থাকে তার প্রিয় রঙের ওড়নাটিকে।
তারপরের ঘটনা, সেটা তো অঙ্কের মতোই মিলিয়ে ফেলা যায়। ভোরবেলা যথারীতি মা ঘুম থেকে উঠে ঘরের অন্যান্য কাজ সারতে সারতেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ঘড়িতে প্রায় দশটা। হঠাৎই মায়ের মন আঁতকে ওঠে। সকাল দশটা পর্যন্ত কোনদিন আমার মেয়েটা তো ঘুমিয়ে থাকেনি! তবে কি ও অসুস্থ! ছুটে যায় মেয়ের ঘরের দিকে। দরজা ঠেলতেই বিনা বাধায় খুলে যায় মেয়ের ঘরের দরজা। আঁতকে উঠে চিৎকার করতে থাকে সে। পাশাপাশি এ ফ্ল্যাট ও ফ্ল্যাট এর লোক ছুটে আসে তাদের ফ্ল্যাটের দিকে। সকলেই তপতীর মায়ের মতই আঁতকে ওঠে। একসময় খবর যায় স্থানীয় থানায়। পুলিশ আসে। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে পাশাপাশি ফ্লাটের অনেককে।
পুলিশ পুলিশের কাজে যথেষ্টই তৎপরতা দেখায়। তবে মৃত্যুর কারণ খোঁজার জন্য যা যা করা দরকার তা তো তাকে অর্থাৎ পুলিশকে করতেই হবে। পাশাপাশি ফ্ল্যাটের কেউবা বলে এ ফ্ল্যাট সকলেরই জানা। মা আর মেয়েই থাকতো। মেয়ে টেলি আর্টিস্ট তবে ফ্ল্যাটে ছেলের আনাগোনা না থাকলেও চালচলনে যথেষ্ট সাহসের পরিচয় দিত। হয়তো তারই পরিণতি। তবে কেউ কেউ ভালোও বলেছিল মেয়েটিকে নিয়ে। খুব মেধাবী ছাত্রী ছিল। অনেক ছোট থেকে জানি। কিন্তু কি এমন হলো সারা জীবনের মতো, এত লড়াই করে বেঁচে থাকার দৌড় থেকে চিরতরে বিদায় নিতে হল কেন তাকে?
চিরতরে বিদায় নিতে হল কেন? তার উত্তর খোঁজার ভার এখন পুলিশের হাতে। পুলিশ ইতিমধ্যেই ডেডবডি টিকে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে। অসহায় মাকে থানার অফিসার জিজ্ঞাসা করেছে সন্দেহ ভাজনদের নাম। মা, কারো নাম বলতে পারেনি। পুলিশ জানতে পেরেছে তপতীর আড্ডা চায়ের দোকানে ছিল। পুলিশ চায়ের দোকানের বকুলের সাথে কথা বলেছে।
বকুলও সেদিনের বিস্তারিত ইতিহাস যতদূর পর্যন্ত জানা ছিল তাও বলেছে। পাড়ায় মৃত্যুর হেতু হিসেবে অনেক ট্রোল তৈরি হয়েছে। তা নিয়েও হয়তো আরও অনেক গল্প হবে। তপতীর মা হৃদয় হারানো কে হারিয়ে, কেবলই কেঁদে চলেছে, আর বলছে; আমার এত বছরের লড়াইকে শূন্য করে দিয়ে চলে গেলি।
কি কারনে তপতী নিজেকে চিরতরে এই পৃথিবীর থেকে সরিয়ে দিল তার কারণ অনুসন্ধানের জন্য পুলিশ দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। তদন্ত চলছে। সাথে আরো অনেক গল্প। সিনেমা পাড়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাড়িতে এসে ঘুরে গেছে গুটিকয় টেলি আর্টিস্ট। কিন্তু রহস্য, রহস্যই থেকে গেছে। কারণ প্রথমত ময়না তদন্তের রিপোর্ট এখনো আসেনি। আর এলেও তার সঠিক কারণ কিছু বোঝা যাবে কিনা তাও জানা নেই। তবে স্থানীয় পাড়ায় ট্রোল বন্ধ হয়নি। চলছে। চলছে চায়ের দোকানেও। আর কষ্ট করে যে মা সবকিছু হারিয়ে এই মেয়েটিকে নিয়ে বেঁচে ছিল তার শূন্য কোল শূন্যই থেকেছে। আগামীকাল খবরের কাগজের কোন পাতায় খবরটা দেখা যাবে। কারণ সাংবাদিক খবর সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসেনি এখনও; আসবে।
0 মন্তব্যসমূহ