আগরতলা, ৩০ মার্চ: মানুষের কল্যাণে এবং মানুষের পাশে থেকে কাজ করাই হচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। মানুষ আমাদের নির্বাচিত করে জনপ্রতিনিধি করেছে। তাই মানুষের জন্য কাজ করতে আমরা সংকল্পবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সবসময় মানুষের কল্যাণে চিন্তাভাবনা করেন। আসন্ন নির্বাচনে রাজ্যের দুটি আসনে রেকর্ড ভোটে বিজয়ী হবেন ভারতীয় জনতা পার্টি মনোনীত প্রার্থীরা।
শনিবার সিপাহীজলা জেলার ধনপুরে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিম ত্রিপুরা আসনে ভারতীয় জনতা পার্টি মনোনীত প্রার্থী বিপ্লব কুমার দেবের সমর্থনে ধনপুর মন্ডলের উদ্যোগে এই জনসভার আয়োজন করা হয়।
সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা সবাই অবগত রয়েছেন যে আগামী ১৯ এপ্রিল পশ্চিম ত্রিপুরা ও আগামী ২৬ এপ্রিল পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পশ্চিম ত্রিপুরা আসনে ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যসভার সদস্য বিপ্লব কুমার দেব এবং পূর্ব ত্রিপুরা আসনে রাজ পরিবারের মহারাণী কৃতি সিং দেববর্মা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। গত ২৭ মার্চ পশ্চিম ত্রিপুরা আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করাকে কেন্দ্র করে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার লোকের জমায়েত হয়। একইভাবে পূর্ব ত্রিপুরা আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়েও প্রচুর পরিমাণে কর্মী সমর্থক হাজির ছিলেন। আগে ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে আইপিএফটি ছিল। এখন তিপ্রা মথাও আমাদের দলে সামিল হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বার বার বলছেন সবাইকে একসাথে নিয়ে চলতে হবে। ২০১৯ সালে এনএলএফটির সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়। প্রধানমন্ত্রী বলছেন উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি শান্তিতে না থাকলে ভারত সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারবে না। যে কারণে তিনি অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির মাধ্যমে উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আগে আমরা দেখতাম উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে উগ্রপন্থীদের হামলা। ডিনামাইটের আওয়াজ আর অপহরণের ঘটনায় এই গোটা অঞ্চলে একটা অস্থির পরিস্থিতি কায়েম হয়ে থাকতো। এরপর ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পর ধীরে ধীরে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি দ্রুত বিকাশের দিশায় এগিয়ে চলছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক হলে তারা বলতেন এতদিনে মনে হচ্ছে আমরা ভারতবর্ষের সঙ্গে আছি। আগে মনে হতো কোথায় যেন আছি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উন্নয়নের গ্যারান্টি দিচ্ছেন। সেটা শুধু মুখে নয়। গ্যারান্টির বাস্তবায়নেও গ্যারান্টি দিচ্ছেন তিনি।
নির্বাচনী সভায় মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, সাধারণ মানুষের সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মানুষের স্বার্থে যেসকল জনমুখী প্রকল্প করা হয়েছে সেগুলি যাতে ফাইল বন্দী না থেকে মানুষের যথাযথ উপকারে আসে সেজন্যই বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রা শুরু করেছেন তিনি। এজন্য তিনি ত্রিপুরাতে প্রায় ১৬টি প্রচার গাড়ি পাঠিয়েছেন। যারা এখনো এসকল জনমুখী প্রকল্পের সুবিধা পান নি তাদের সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে প্রত্যেকেই এর সুফল পান সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করা হচ্ছে। ২০২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্মদিনে প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযান শুরু করেছিল রাজ্য সরকার। যাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের সুযোগ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। এবারও বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রার সাথে দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযান করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষের দ্বারা নির্বাচিত সদস্য আমরা। সংখ্যাধিক্যের কারণে আজকে আমরা সরকার গঠন করেছি। কিন্তু এটা ভাববার অবকাশ নেই যে এই সরকার মানুষকে দূরে সরিয়ে শুধু মসনদে বসে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী মন কি বাত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের শিখিয়েছেন কিভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করতে হয়। সারা পৃথিবীতে এই মন কি বাত কর্মসূচি নিয়ে চর্চা চলছে। আমার মনে হয় না কোন দেশের রাষ্ট্র প্রধান এরকম কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারন মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। প্রতি মাসের শেষ রবিবারে মন কি বাত করে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। হর ঘর তিরঙ্গা, মেরি মাটি মেরি দেশ, ৭৫ সীমান্ত গ্রাম ক্রান্তি বীরো কা নাম - - এসকল ভাবনার মাধ্যমে দেশবাসীর মধ্যে দেশাত্মবোধের চিন্তাভাবনা ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলছেন মে চৌকিদার হু। অর্থাৎ সব জায়গায় আমি নজরদারি রাখছি। তাই দেশকে শক্তিশালী করতে হলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি নিশ্চিত যে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের দুটি আসনে ভারতীয় জনতা পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হবেন। এর পাশাপাশি সারা দেশে ভারতীয় জনতা পার্টি ও সহযোগী দলগুলি ৪০০ এর অধিক আসন পেয়ে জয়ী হবে।
জনসভায় উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক বিন্দু দেবনাথ, জেলা সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত, সিপাহীজলা জেলার ভারতীয় জনতা পার্টির জেলা সভাপতি দেবব্রত ভট্টাচার্য, সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি বিল্লাল মিঞা, জেলা প্রভারী জসিম উদ্দিন, এডিসি সদস্য পদ্মলোচন ত্রিপুরা, যুব নেতা নবাদল বনিক সহ দলের অন্যান্য নেতৃত্ব।
0 মন্তব্যসমূহ