Advertisement

Responsive Advertisement

সৃজনশীল শহুরে কৃষি - ভাবনা


                 ডঃ দেবব্রত পাল ও ডঃ জুঁই রায়

ইট, কংক্রিট, জঞ্জালের আবর্তে নগরায়নের আঙ্কলন, কৃষি জোতে অকৃষির ব্যবহার গ্রাম থেকে শহরমুখী জনস্রোত, লাগামছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধি এর সাথে প্রকৃতির ব্রুকুটি অনিশ্চিত খাদ্য ও পুষ্টি যোগানের ভবিষ্যৎ ইঙ্গিত করে আর এই প্রেক্ষাপটে সমাধান সূত্রের দিশায় সৃজনশীল শহরে কৃষি ভাবনার কথা বিভিন্ন স্তরে পুনঃউচ্চারিত হচ্ছে।
শহুরে কৃষি ভাবনা একটি বহুমাত্রিক অনুশীলন যা শহরে পরিবেশের মধ্যে সুস্থায়ী ও সৃজনশীল কৃষি শাক সবজি উৎপাদন ব্যবস্থা, নার্সারীকরা, হাঁস মুরগি, মৌপালন, মৎস চাষ বা বদ্ধ অবস্থায় পশু পালন, স্বল্প পরিসরে মাশরুম চাষ, কৃষি পণ্যের সংরক্ষণ, নান্দনিক কৃষি চর্চা ও অন্যানো কৃষি অনুসারী ক্রিয়া কর্মকে উল্লেখ করে।

প্রথাগত চাষাবাদের বিপরীতে, যা প্রধানত গ্রামীণ পরিবেশে দেখা যায়, শহুরে চাষ শহরগুলিতে অবস্থিত স্থানগুলির ব্যবহার করে, যেমন ছাদ, বারান্দা, সম্প্রদায়ের বাগান, এবং খালী জায়গাগুলি। শহুরে কৃষি হলো নগরায়ন, সীমিত জমির এবং এরদ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য একটি উদ্ভাবনী পদ্ধতি।

শহুরে কৃষি যে কেবলমাত্র শহরে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাই নয়, একই সাথে নাগরিকদের সুস্বাস্থ নিশ্চিত করতেও ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে বাগান করার অনুশীলনগুলো দ্রুত ক্যালোরি পোড়াতে সহায়তা করে, মানুষকে সুস্থতা প্রদান করে, (মাটি খনন ও স্থানান্তরের মাধ্যমে ২৫০ ক্যালোরি, আগাছা পরিষ্কার ১০৫ ক্যালোরি এবং অন্যানো কাজে ১০০ ক্যালোরি পোড়ে)। এর মাধ্যমে স্কুলতা, ডায়াবিটিস ও হৃদ রোগ কমে। তাছাড়া কৃষিকে গ্রাহকদের কাছাকাছি নিয়ে আসার মাধ্যমে, এটি দূরদূরান্তের পরিবহনের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করে, যার ফলে কার্বন নিঃস্বরণ হ্রাস করে এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বকে উন্নত করে। এই চাষ আমাদের প্রকৃতির সাথে পুনঃসংযোগের সুযোগ প্রদান করে, সম্প্রদায়ের বোধ জাগিয়ে তুলে এবং একটি স্বাস্থকর জীবনধারায় অনুপ্রাণিত করে অধিকন্তু, শহরে কৃষি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে সমর্থন করে অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদান করে।
বিভিন্ন জনপ্রিয় শহরে চাষ পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটি হলো ছাদে চাষবাস। ছাদে প্রায়শই অব্যবহৃত স্থান ব্যবহার করে, এই শহরে চাষ পদ্ধতিতে মাটির পাত্রে বা উত্থাপিত মাটির বিছানায় ফসল ফলানো জড়িত। ছাদের খামারগুলি কেবল সবুজ বা তাজা পণ্য সরবরাহ করে না বিশেষ করে তাপনিয়ন্ত্রণ, কার্বন নির্গমণ হ্রাস করে বাতাসের মানও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালীন ছাদবাগান সংশ্লিষ্ট দালান কক্ষের তাপমাত্রা ১০০-১.২৫০০ কমায় এবং বিদ্যুতের চাহিদা ও কমায়। এছাড়া ছাদবাগান এলাকায় co2 এর পরিমান 90 ppm পর্যন্ত কমায়।
শহরে কৃষির আরেকটি অন্যতম উপাদান হলো কমিউনিটি গার্ডেন। এটি হলো সহযোগিতা মূলক স্থান যেখানে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সম্মিলিত ভাবে গাছপালা চাষ করতে জড়ো হয়। এই বাগানগুলি সাধারণত শেয়ার্ড জমিতে অবস্থিত, যেমন পার্ক বা খালি জায়গা, এবং সম্প্রদায়ের সদ্যসদের তাদের খাদ্যবৃদ্ধি, সামাজিক সংযোগ ও পরিবেশ সচেতনতায় প্রচারের সুযোগ প্রদান করে।

শহর ও শহরতলিতে আজকাল ইনডোর ফার্মিংও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইনডোর ফার্মিং বলতে বোঝায় আবদ্ধ কাঠামোর মধ্যে ফসল চাষ করা, যেমন গুদাম বা শিপিং পাত্রে। তাপমাত্রা; আলো এবং আদ্রতার মতো পরিবেশগত কারণগুলি নিয়ন্ত্রণ করে, আভ্যন্তরীন খামারগুলি বাহ্যিক আবহাওয়ার অবস্থা থেকে স্বাধীন, সর্বোত্তম ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি তৈরী করতে পারে। এই শহুরে চাষ পদ্ধতি বৎসরব্যাপী ফসল উৎপাদনের নিশ্চয়তা দেয়।

আবার, হাইড্রোপনিক ফার্মিং হলো এক ধরণের শহুরে চাষ যেখানে মাটি ছাড়াই গাছপালা জন্মানো হয় যেখানে জলে পুষ্টিকর খাবার যোগ করা হয় যে গাছগুলি ডুবিয়ে রাখা হয় এবং নিয়মিত সেই গাছগুলির শিকড় ধুইয়ে ফেলা হয়। এই পদ্ধতিতে জলের পরিমান কম লাগে কারণ এই পদ্ধতিতে জল পুনঃব্যবহার করা হয়। তাছাড়া, আজকাল মাইক্রোগ্রীন, অ্যাকোয়াপোনিক্স, মতন শহুরে চাষবাস পদ্ধতিগুলিও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

আমাদের রাজ্যেও এই চাষের সম্ভাবনা অপরিসীম। আমাদের রাজ্যে নগরায়ন অব্যাহত থাকায় স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত, টেকসই খাদ্যের চাহিদা বাড়বে। যদিও শত্রুরে চাষবাষে অনেক অসুবিধাও রয়েছে। সীমিতস্থান, সচেনতার অভাব, এবং অপর্যাপ্ত অবকাঠামো শত্রুরে কৃষির ব্যাপক প্রসারকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কিছু বাধা।
আর যাইহোক, শহুরে চাষের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ছাদে চাষবাষে, সম্প্রদায়ের বাগান এবং এই শিক্ষামুলক কর্মসূচির মতো উদ্যোগের মাধ্যমে এই শহুরে কৃষি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা যেতে পারে। উপরন্‌তু, নীতিপ্রণয়ন এবং আর্থিক সরকারি সহায়তা শহরে চাষাবাদ অনুশীলনের প্রচারে একটি গুরত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ