Advertisement

Responsive Advertisement

হাওড়া স্টেশনের ইতিহাস


উনিশ শতকের প্রথমভাগ। হাওড়ায় গঙ্গার ধারে ছিল একটি অনাথ আশ্রম। মূলত রোমান ক্যাথলিক ছেলেমেয়েদের জন্যই ছিল এই আশ্রম। পাশের ছিল একটি গির্জা। এর পুরোটার দায়িত্বে ছিলেন পর্তুগিজ মিশনারিরা। সব কিছুই ঠিক মতো চলছিল। কিন্তু বাঁধ সাধল ভয়ঙ্কর মহামারী। সেখানকার সমস্ত বাচ্চা, কর্মী, মিশনারিদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল কলকাতায়। সেখানেই আবার নতুন করে শুরু হল কাজকর্ম। ফাঁকা হয়ে গেল আশ্রম ও গির্জা চত্বর।
ফাঁকা জমিটি বিক্রি করার জন্য অনেক দিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন পর্তুগিজ মিশনারিরা। এক সময় তাঁরা জানতে পারলেন, ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কোম্পানি নাকি হাওড়ায় একটি জমির খোঁজে আছে। তখন তাঁরা আর সময় নষ্ট না করে রেলওয়ে কোম্পানির কাছে জমিটি বিক্রি করে দেন। রেলওয়ে কোম্পানি তখন হাওড়ায় একটি রেল স্টেশন বানানোর পরিকল্পনা করছিল। এই জমি সেই সম্ভাবনাকে আরও খানিকটা এগিয়ে দিল।
ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার জর্জ টার্নবুল ১৮৫১ সালে প্রথম হাওড়া স্টেশনের জন্য সরকারি দপ্তরে প্ল্যান জমা দেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সে প্ল্যান খারিজ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে ১৮৫২ সালে তিনি পুনরায় পরিমার্জিত প্ল্যান জমা দেন। এবারে সেই প্ল্যান গৃহীত হয় ও স্টেশন তৈরির জন্য টেন্ডার ডাকা হয়। চারটি টেন্ডার জমা পড়ে। হাওড়া স্টেশন তৈরির জন্য রেল কোম্পানি আনুমানিক খরচের হিসাব ছিল ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।
শুরু হল স্টেশন তৈরির কাজ। আর্মেনিয়ান ঘাটের কাছে তৈরি হল একটি লাল ইটের একতলা বাড়ি ও একটি মাত্র প্ল্যাটফর্ম বিশিষ্ট একটি রেল ট্র্যাক। ইটের বাড়িতে ছিল একটি ছোট্ট জানলা। সেখান থেকেই টিকিট সংগ্রহ করতে হত। ইঞ্জিন মেরামতের কারখানা হিসেবে তৈরি হল কয়েকটি টিনের ঘর। হল একটি স্টোর রুমের ব্যবস্থাও। এটাই ছিল আদি হাওড়া স্টেশন।
১৮৫৪ সালের ১৫ আগস্ট। সকাল ৮টা নাগাদ হাওড়া থেকে হুগলির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে একটি ট্রেন। ঐতিহাসিক এই যাত্রা দিয়েই হাওড়া স্টেশনের পথ চলা শুরু। শুরুর মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষা ছিল বহুমানুষের। তিন হাজার দরখাস্তের ভেতর থেকে মাত্র কয়েকশো মানুষই সুযোগ পেয়েছিলেন এই যাত্রারভাগিদার হিসাবে। প্রথম ট্রেন দর্শনের জন্য ছোট্ট হাওড়া স্টেশনে উপচে পড়েছিল সাধারণ মানুষের ভিড়।ট্রেনটিতে ছিল তিনটি প্রথম শ্রেণির কামরা, দু’টি দ্বিতীয় শ্রেণির কামরা, তিনটি তৃতীয় শ্রেণির কামরা এবং গার্ডের জন্য একটি ব্রেক ভ্যান। এগুলি সবই কলকাতায় তৈরি করা হয়েছিল। প্রথম যাত্রায়, হাওড়া থেকে হুগলি যেতে সময় লেগেছিল ৯১ মিনিট। হাওড়া-হুগলি যাত্রাপথের মাঝে ট্রেন থামত তিনটি স্টেশনে— বালি, শ্রীরামপুর ও চন্দননগরে। ট্রেনের প্রথম শ্রেণির ভাড়া ছিল ৩ টাকা ও তৃতীয় শ্রেণির ভাড়া ছিল ৭ আনা।
টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে রেল কোম্পানির লঞ্চে করে গঙ্গা পার হয়ে কলকাতা যাওয়া-আসা হত। লঞ্চের ভাড়া রেলের ভাড়ার সঙ্গেই জুড়ে থাকত। তখন তো আর হাওড়া সেতু ছিল না। রেল কোম্পানির লঞ্চই ছিল একমাত্র ভরসা। ১৮৮৬ সালে হাওড়া পন্টুন ব্রিজ তৈরি হবার পরে এই পদ্ধতি বন্ধ হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ