Advertisement

Responsive Advertisement

কচু পুরাতন আগরতলার বহু চাষীর আর্থিক অবস্থার চাকা উন্নতির দিকে ঘুরিয়েছে


আগরতলা, ২৭ জুন: কচুকে সাধারণত অনেকেই অবহেলার চোখে দেখেন, কিন্তু রাজ্যের পুরাতন আগরতলা এলাকার বেশ কয়েকজন চাষী শুধুমাত্র কচু চাষ করেই আর্থিক ভাবে সাফল্যের মুখ দেখেছেন। তাদের এই সাফল্য দেখে নতুন নতুন চাষীরাও যুক্ত হচ্ছেন কচু চাষের সঙ্গে। তারা এখন রাজ্যের অন্যান্য জায়গার চাষীদের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। 
বাজারে অন্য সব সবজির সঙ্গে কচু ও কচুর লতি বিক্রি হয়। এই সবজিকে ঘিরে মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। কচুতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ থাকার জন্য একদিকে যেমন অনেকে এই সবজি খেতে খুব পছন্দ করেন, কিন্তু কচুতে থাকা ৱ্যাফাইডের কারনে অনেক সময় গলায় চুলকায়, তাই অনেকে একে এড়িয়ে চলেন। তবে বাঙ্গালীদের মধ্যে কচুর বিশেষ চাহিদা রয়েছে তাই বাজারে চড়া দামে কচু বিক্রি হয়ে থাকে। ত্রিপুরা রাজ্যের অনেক কৃষক কচু চাষ করে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন, দিন দিন কচু চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।  
ত্রিপুরার পশ্চিম জেলার অন্তর্গত পুরাতন আগরতলা কৃষি মহকুমার অধীনে বিভিন্ন জমিতে এবছর ৩৫জন চাষী প্রায় ৫ হেক্টর জমিতে কচু চাষ করেছেন বলে জানানো হয়েছে কৃষি তত্ত্বাবধায়কের অফিস থেকে। একই ভাবে রাজ্যের অন্যান্য জায়গাতেও প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে কচু চাষ হয়। 
পুরাতন আগরতলা কৃষি মহকুমার অন্তর্গত চম্পামুড়া এলাকার কৃষক নারায়ণ নন্দী জানান, বাজারের চাহিদার বিষয়টি চিন্তা করে ১৯৮০ সাল থেকে কচু চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি। এলাকাতে তিনিই প্রথম কচু চাষ শুরু করে ছিলেন, তাকে দেখে এখন এলাকায় কচু চাষীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার মতে অন্য সকল ফসলের তুলনায় কচু অনেক বেশি লাভ জনক। তাই বহু চাষি কচু চাষ করে আর্থিক ভাবে সফল হয়েছেন। এমনকি তিনি নিজেও আর্থিক ভাবে সফল হয়েছেন, প্রথমে তার কোন জায়গা ছিল না পরের জমিতে কচু চাষ করতেন। এখন তিনি ছয় বিঘা জমি কিনেছেন কচু চাষ করে পাওয়া অর্থ দিয়ে। এবছর মোট সাড়ে তিন বিঘা জমিতে তিনি কচু চাষ করেছেন। 
মূলত পৌষ মাসে জমি থেকে ধান তুলে নেওয়ার পর কচু গাছ লাগানো হয়, ফাল্গুন মাসের শেষ অথবা চৈত্র মাসের শুরুতে মাঠ থেকে কচু তুলে বাজারে বিক্রি শুরু হয়। এভাবে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত চলে কচু চাষ। তারপর এই জমিতে ধান চাষ করেন। সপ্তাহে লতি এবং কচু বিক্রি করে প্রায় কুড়ি হাজার টাকা মত আয় করছেন বলেও জানান তিনি। 
মানিক লোধ নামে এই এলাকার আরো এক চাষী জানান, তিনি এবছর এক বিঘা জমিতে কচু চাষ করেছেন। কচুর পাশাপাশি কলমি লতা, কুলেখাড়া ইত্যাদিও চাষ করে থাকেন। বাজারে এইসব সবজির চাহিদা রয়েছে তাই এগুলো চাষ করেন। কচু চাষে রাসায়নিক সার খুব কম প্রয়োজন হয় এমনকি কচু চাষের পর জমিতে ধান চাষ করলে অনেক ভালো ফলন হয় বলেও জানান তিনি। 
দিলীপ পাল নামে আরো এক চাষী জানান এবছর তিনি দুই বিঘা জমিতে কচু চাষ করেছেন, তাদের জমির উৎপাদিত কচু এবং লতি গুলি রাজধানী আগরতলার অন্যতম বড় মহারাজগঞ্জ বাজার, খয়েরপুর বাজার, রানীর বাজার সহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যান। 
 কচু চাষের জমিতে বহু শ্রমিক কাজ করে তাদের পরিবারও পালন করছেন। কচু চাষীদের রাজ্য সরকারের কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের তরফে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয় বলেও জানিয়েছেন চাষীরা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ