পৃথিবীর সবচাইতে জনপ্রিয় হাল্কা অ্যালকোহল যুক্ত ড্রিংক এবং সম্ভবত প্রাচীনতম পানীয় হচ্ছে বিয়ার। ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের আগে, সুমের এবং ব্যাবিলিয়নে বার্লি থেকে বিয়ার তৈরির প্রমাণ মেলে। ২৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মিশরীয় সমাধিগুলির উপহার সামগ্রীর মধ্যে বিয়ার জাতীয় সামগ্রী দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। যা সেই সময় বিয়ারের অত্যধিক জনপ্রিয়তার কথা প্রমাণ করে।
ভারতে বিয়ারের তৈরির ইতিহাসও বেশ প্রাচীন বলে ধারণা করা হয়। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণগুলিও এমন ইঙ্গিত বহন করে। সম্ভবত ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিন্ধু উপত্যকায় বিয়ার তৈরি করা হত। সেই ধারা অব্যাহত ছিল মধ্যযুগেও, তখন ভারতে বিভিন্ন ধরনের বিয়ার তৈরী করা হতো। এমন কি প্রাচীন ভারতে বেদ এবং রামায়ণেও বিয়ারের মতো পানীয়ের উল্লেখ রয়েছে, যাকে বলা হয়ত সুরা। আবার কৌটিল্য "মেদক" ও "প্রসন্ন" নামে চাল থেকে তৈরি দুটি নেশাকর পানীয়ের কথাও উল্লেখ করেছেন যা সম্ভবত বিয়ার জাতীয় কিছু হবে বলে ধারণা করা হয়।
আধুনিক সময়ে জার্মান বিয়ার এবং তাদের বিয়ার সেবন পৃথিবী বিখ্যাত। জার্মানিতে শুদ্ধতার আইন ১৫১৬ সালে প্রণীত হয়, যা জার্মানে বিয়ার তৈরিতে কেবল চারটি উপাদান ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয় যেমন বার্লি, হপস,জল এবং ইস্ট।
১৮ শতকে শিল্প বিপ্লবের ফলে বিয়ার উৎপাদনে যান্ত্রিকীকরণের সূচনা হয়। সেই সময় বড় বড় ব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে এবং বিয়ার বৃহৎ আকারে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদিত হতে থাকে। আবার ১৯ শতকে দিকে লাগার বিয়ারের উত্থান শুরু হয়। লাগার বিয়ার হচ্ছে হালকা রঙের, এবং হালকা কড়া স্বাদ যুক্ত উচ্চ কার্বনেটেড ধরনের বিয়ার। লেগার শব্দটি -গাঁজনকারী খামির থেকে উৎপাদিত বিয়ারকে বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। যা শীতল তাপমাত্রায় বোতলজাত করে রাখা হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে এই বোতলজাত বিয়ার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০শতক বিশ্বব্যাপী বিয়ারের নানা বৈচিত্র্য তৈরি বৃদ্ধি পায় যাকে বলে ক্রাফট বিয়ারের বৈপ্লবিক ধারা শুরু হয়।
আজকাল বিয়ার বিশ্ব বাজারে বিভিন্ন ধরনের পাওয়া যায়, যার প্রতিটির নিজস্ব অনন্য স্বাদ এবং নিদিষ্ট আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সারা পৃথিবীতে এই ক্রাফট বিয়ার হাজার রকমের বৈচিত্র্যে পাওয়া যায়। এর মধ্যে বিয়ারগুলিকে গাঁজন প্রক্রিয়া, উপাদান এবং স্বাদের প্রোফাইলের উপর ভিত্তি করে কয়েকটি প্রধান বিভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে। এই বিয়ারের মধ্যে রয়েছে যেমন:
লেগারস (Lagers): হালকা রঙের এই বিয়ার শীতল তাপমাত্রায় গাঁজন প্রক্রিয়াকরণ করা হয়, যার ফলে একটি সতেজ স্বাদের হয়।
অ্যালেস (Ales): উষ্ণ তাপমাত্রায় গাঁজন প্রক্রিয়াকরণ করা হয় যা তীক্ষ্ণ স্বাদযুক্ত হয়ে থাকে। উদাহরণ হিসেবে যেমন রয়েছে বিস্বাদ অ্যালেস, ইন্ডিয়া প্যাল অ্যালেস (আইপিএ), পোর্টার, স্টাউটস এবং গমের বিয়ার।
ল্যাম্বিকস (Lambics): বন্য খামির (Wild yeasts) এবং ব্যাকটেরিয়া দিয়ে গাঁজনকৃত টক বিয়ার।
পিলসনার (Pilsners): এটি বিয়ারের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্টাইল গুলির মধ্যে একটি যা হালকা, সতেজ এবং পান করা সহজ পানীয়ের মধ্যে একটি।
বিয়ার নানা সামাজিক অনুষ্ঠান, উৎসবে উদ্যাপন এবং হালকা পানীয়ের জন্য জনপ্রিয় পছন্দ। পৃথিবীর যেখানেই যান এই গরমের দিনে বিকেলের সান্ধ্য ভোজ হোক কিংবা রাতের খাবার যেখানে বিয়ার খাওয়া সামাজিক চল আছে তাদের জন্য এই পানীয় অত্যধিক জনপ্রিয়।
0 মন্তব্যসমূহ