আগরতলা সরকারি ডেন্টাল কলেজকে উত্তর পূর্বের মধ্যে সেরা ডেন্টাল কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে গুরুত্ব মুখ্যমন্ত্রীর
আগরতলা, ৬ জুলাই: রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবার উন্নয়নে ব্যাপক অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে রাজ্য সরকার। আগামী ৮ তারিখে রাজ্যের জিবি হাসপাতালে প্রথমবারের মতো হতে চলেছে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট। রাজ্যের একমাত্র সরকারি ডেন্টাল কলেজকে উত্তর পূর্বের মধ্যে সেরা ডেন্টাল কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস নিতে হবে।
শনিবার আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন ও ইন্ডিয়ান ডেন্টাল এসোসিয়েশনের যৌথ ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত ন্যাশনাল ওরাল হেল্থ প্রোগ্রামের রাজ্যভিত্তিক ডেন্টাল সার্জনদের দুদিনের প্রশিক্ষণ শিবিরের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
উদ্বোধকের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা চিকিৎসা শাস্ত্র নিয়ে পড়ার সময়ে তাঁর জীবনের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সেই সময়ে প্রযুক্তি ক্ষেত্র অনেকটা পিছিয়ে ছিল। সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে। এখন অনলাইনের মাধ্যমেই রোগীদের সঙ্গে কথা বলা যায়। আমাদের ডেন্টাল কলেজেও অনেক উন্নতমানের যন্ত্রপাতি এসে গেছে। ডেন্টাল সার্জনদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কিছু করার মানসিকতা থাকতে হবে। যার উপর যে দায়িত্ব ন্যস্ত থাকবে সেটা সঠিকভাবে রূপায়ণ করতে হবে। ত্রিপুরা রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। তিনি বলেছেন আমি সবসময় আপনাদের পাশে আছি। বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আমাদের অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন। কাজের বিকল্প হয় না। শুধু পোস্টিং আর ট্রান্সফার এসব নিয়ে থাকলে হবে না। রাজ্যে এখন যোগাযোগ ব্যবস্থাও অনেক সুন্দর হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, কারোর কোন সমস্যা হলে সেটা নিশ্চয় দেখা হবে। তবে কাজটা যথাযথ হতে হবে। ডেন্টাল সার্জনদের সুবিধার্থে এখন রাজ্যে ডেন্টাল কাউন্সিল হয়েছে। এরআগে আমাদের ছেলেমেয়েরা যারা বাইরে পড়াশুনা করতো তাদের সেখানকার রেজিস্ট্রেশন নিতে হতো। এতে অনেক সমস্যা হতো। বিশেষ করে আসা যাওয়া সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ক্ষেত্রে অনেক খরচ হতো। তাই আমরা ত্রিপুরায় ডেন্টাল কাউন্সিল খোলার সিদ্ধান্ত নিই। যে কারণে এখন অনেক সুবিধা হয়েছে। পাশাপাশি এখন রাজ্যে সমস্ত দপ্তরে ই - ফাইলের ব্যবস্থা হয়েছে। আর এই ব্যবস্থায় অনেক সুবিধা হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও প্রযুক্তিকে অন্যতম অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
রাজ্যে ডেন্টাল কলেজ গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কথা এদিন তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। তিনি জানান, বিরোধী দলের একজন নেতা নাকি প্রধানমন্ত্রীর অফিসে ডেন্টাল কলেজের ফ্যাকাল্টি সম্পর্কিত বিষয়ে নালিশ জানিয়েছেন। অথচ এই সম্পর্কে ওই নেতার কোন জ্ঞানই নেই। এরপর আমি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র বের করে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে পাঠাই। এরমধ্যে রাজ্যে আরো একটি মেডিকেল কলেজ হচ্ছে। আর সেটা নিয়েও নাকি সমস্যা আছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে। আমাদের কাছে এখন বিনিয়োগকারী আসছেন। কাজেই তাদের কাছে যাতে ভুল বার্তা না যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই প্রথমবার জিবি হাসপাতালে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট হতে চলেছে। খুব সম্ভবত আগামী ৮ তারিখ এই প্রক্রিয়া হতে যাচ্ছে। চিকিৎসা পরিষেবার উন্নয়নে আমরা একের পর এক উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছি। এখানে বড় বড় হাসপাতাল গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। প্রায় ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯টি সুপার স্পেশালিটি খোলা হয়েছে। রাজ্যের ডেন্টাল কলেজের সামগ্রিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রায় ২০২ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বিডিএস পড়ার জন্য এখন আমাদের ছেলেমেয়েদের বাইরে যেতে হবে না। আগামীতে এমডিএস কোর্সও খোলা হবে। ডেন্টাল কলেজের জন্য সেরা যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে। ডেন্টাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট নিজে এসে আগরতলা সরকারি ডেন্টাল কলেজের পরিকাঠামো নিয়ে প্রশংসা করে গেছেন। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে আমাদের ডেন্টাল কলেজ যাতে অন্যতম একটি হয় সেই চিন্তাভাবনা নিয়ে কাজ করতে হবে। এজন্য উদ্ভাবনী যা যা দরকার সেটা করতে হবে। স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে রাজ্য সরকার। সকলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা চালু করা হয়েছে। এছাড়া এদিন বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন অধিকর্তা রাজীব দত্ত, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ অঞ্জন দাস, মেডিকেল এডুকেশনের অধিকর্তা ডাঃ এইচ পি শর্মা, সরকারি ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ শালু রায়, ইন্ডিয়ান ডেন্টাল এসোসিয়েশনের সভাপতি ডাঃ সমীর রঞ্জন দত্ত চৌধুরী সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।
অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা স্টেট ডেন্টাল কাউন্সিল এবং আগরতলা গভঃ ডেন্টাল কলেজ ও আইজিএম এর দুটি ওয়েবসাইটের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পাশাপাশি ই - সঞ্জীবনী এর মাধ্যমে দন্ত চিকিৎসায় টেলি-কনসালটেশন সুবিধার শুভারম্ভ করেন তিনি।
0 মন্তব্যসমূহ