Advertisement

Responsive Advertisement

নীতি আয়োগের সভায় অংশগ্রহণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী


আগরতলা, ২৭ জুলাই: নীতি আয়োগের বৈঠকের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে আরো শক্তিশালী করে আরো অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। শনিবার নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নীতি আয়োগের বৈঠকে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এর পাশাপাশি রাজ্যের উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন বিষয় এবং পদক্ষেপ সম্পর্কে গভর্নিং কাউন্সিলকে অবহিত করেন মুখ্যমন্ত্রী।
                           মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, রাজ্য সরকার 'লক্ষ্য ২০৪৭' রূপায়ণে কাজ করছে। যা ত্রিপুরা রাজ্যকে একটি সম্পূর্ণ উন্নত রাজ্যে রূপান্তর করার জন্য একটি ভিশন ডকুমেন্ট। এই উদ্দেশ্যে আমরা প্রধানমন্ত্রীর HIRA+ মডেলের মাধ্যমে ত্রিপুরাকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার করে যোগাযোগ  বাড়ানো সহ বেশ কিছু উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এতে মূলধন ব্যয় বৃদ্ধি, ব্যবসা করার সহজতর পদ্ধতির পাশাপাশি জীবনযাত্রার সহজতা আনতে, ই-অফিস গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত প্রবর্তন, সরকার পরিচালিত কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির জন্য DBT সুবিধার্থে BMS (বেনিফিসিয়ারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) চালু করা হয়েছে। 
                          মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন যে ত্রিপুরা সরকার নীতি আয়োগের নির্দেশনা অনুসারে সুশাসন বিভাগ এবং এস.আই.টি( স্টেট ইন্সটিটিউট অফ ট্রান্সফরমেশন)  প্রতিষ্ঠা করেছে। শিল্প ও বিনিয়োগ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা কৃষির উপর শ্রমশক্তির নির্ভরতা ৫০% কমানোর উপর জোর দিচ্ছি, বাংলাদেশ ও ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মাধ্যমে বাণিজ্য ১ লাখ কোটি টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করছি। ২০৪৭ সালের মধ্যে জি.এস.ডি.পিতে পর্যটনের অবদান ১৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হবে”। তিনি বলেন, পরিকাঠামো, যোগাযোগ ও লজিস্টিক সেক্টরে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে ও সেচের আওতায় ৮০% কৃষি জমি নিয়ে আসা, সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৪ লেন সড়ক সংযোগ প্রদান করা।
                       সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন সেক্টরে আমরা বনজ উৎপাদনের মূল্য পাঁচগুণ বৃদ্ধি করতে চাই। যা অত্যন্ত ঘন বনের গঠনকে ৪০% এ উন্নীত করবে, যার ফলে জিএসডিপি ২৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। আগর-কাঠ অর্থনীতি থেকে ১০,০০০ কোটি টাকা সংগৃহীত হবে। 
                               ডাঃ সাহা বলেন যে গভর্নেন্স সেক্টরে রাজ্য সরকার ত্রিপুরাকে একটি ডিজিটাল সোসাইটি করার উপর জোর দিচ্ছে। এক্ষেত্রে নীতি আয়োগের ৮ম সাধারণ পরিষদের সভায় আলোচিত সব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যার মধ্যে "ত্রিপুরা শিল্প বিনিয়োগ প্রচার সংক্রান্ত প্রকল্প" চালু করে, অনলাইনের মাধ্যমে 'ব্যবসা করার সহজতা' নিশ্চিত করে শিল্প বিনিয়োগের প্রচার সহ একক স্বাগত পোর্টাল সহ পর্যটনের প্রসারে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
                         মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা  ও দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামীণ কৌশল যোজনা (DDUGKY) এর মাধ্যমে শিল্পের বিকাশের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ১৯টি শিল্প প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি রাজ্য সরকার মহিলাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন রাজ্য সরকারি চাকরিতে মহিলাদের জন্য ৩৩% সংরক্ষণ, মহিলাদের স্টার্ট-আপগুলির জন্য বন্ধক-মুক্ত ঋণ ও সম্পত্তির নিবন্ধনে স্ট্যাম্প শুল্ক হ্রাস, কোনও টিউশন-ফি  না রাখার সিদ্ধান্ত। এছাড়া মহিলা ছাত্রীদের জন্য সরকারি ডিগ্রী কলেজ ফি মুকুব সহ ৪.৭১ লক্ষ গ্রামীণ মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে সংগঠিত করা হয়েছে এবং বর্তমানে রাজ্যের গ্রামীণ অঞ্চলে ৮৩,৪২৪ জন ‘লাখপতি দিদি’ রয়েছেন। 
               মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শহরাঞ্চলে নারী ও কন্যা শিশুদের জন্য ‘পিঙ্ক টয়লেট’ চালু করা হয়েছে।  জলজীবন মিশনের অধীনে ৮২% পরিবার বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ পেয়েছেন। ৪৭১টি উদ্ভাবনী প্রকল্প দুর্গম অঞ্চলে চালু করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এম.বি.বি.এস আসনের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে আগরতলা সরকারি ডেন্টাল কলেজ এবং আগরতলা সরকারি নার্সিং কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। রাজ্য সরকার ৯টি সুপার-স্পেশালিটি বিভাগ শুরু করেছে। প্রথমবারের মতো কিডনি প্রতিস্থাপনের সুবিধা করা হয়েছে , প্রায় ১৫ লক্ষ সুবিধাভোগী আয়ুষ্মান ভারত কার্ড পেয়েছেন। সেই সঙ্গে ৪ লক্ষের অধিক নাগরিক মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা কার্ড পেয়েছেন। এছাড়া ২৫টি জন-ঔষধী কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত ৮টি জন-ঔষধী কেন্দ্র প্রস্তাব করা হয়েছে।
                   শিক্ষাক্ষেত্র সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বোর্ড পরীক্ষায় অকৃতকার্য প্রার্থীদের জন্য 'বছর বাঁচাও' প্রকল্প চালু হয়েছে, সি.এম-সাথ স্কিম, 'সুপার-30' স্কিম 'নিপুন', 'অটল টিঙ্কারিং ল্যাবস', 'স্কুলে আইসিটি' এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু হয়েছে স্কুলে।
 "পাওয়ার সেক্টরের জন্য, ত্রিপুরা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন স্ট্রেংথেনিং অ্যান্ড জেনারেশন এফিসিয়েন্সি প্রজেক্ট' বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, পি.এম-জনমন-এর অধীনে, রিয়াং সম্প্রদায়ের ৩৬১৮টি পরিবারের জন্য ইতিমধ্যেই বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে এবং ব্রু সেটেলমেন্ট প্রোগ্রামের অধীনে ৪৫১২ ঘরে বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে।
                        মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভূমি ও সম্পত্তি সেক্টরে ত্রিপুরায় ইতিমধ্যেই সমস্ত প্লটের ক্যাডাস্ট্রাল ম্যাপ এবং অনলাইন সম্পত্তি রেকর্ড (খতিয়ান) রয়েছে। ডাঃ সাহা বলেন, আমি নিশ্চিত যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুযোগ্য নেতৃত্বে এবং নির্দেশনায় আমরা ‘বিকশিত ভারত’ এবং এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো। আমি নিশ্চিত যে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আলোচনা ও সিদ্ধান্তগুলি আমাদের দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করে আরো অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ