Advertisement

Responsive Advertisement

এলোমেলো বাড়ি -জীবন গুছিয়ে নিন...

(ডা.কনক চৌধুরী, রাজ্যের বিশিষ্ট চিকিৎসক ও লেখন )

ইন্টারনেট আর মোবাইলের এই জমানায় দরকার বুঝে বাজার করেন কয়জন ? হোম-ডেলিভারীর পর-ই আমরা ভাবি,এটা তো দরকার ছিলো না! বাড়ির আনাচে-কানাচেতে শুধুই অদরকারী জিনিসের স্তুপ। দায়িত্ব নিতে লাগে সবাইকেই। দাদামনি-দিদিমনি বা খোকা-খুকী।সবাই ঘর অগোছালো করার দৌড়ে অনেক ব্যস্ত। অথচ, আগের দিকে আমাদের মা-মাসিমাদের দেখেছি পুরনো কাপড়ের বদলে ঘরের জন্য নতুন করে জিনিস নিতেন ফেরিওয়ালার কাছ থেকে।সেটা প্রায় হারিয়ে গেছে। 
যাইহোক, ঘরের বিশৃঙ্খলা বা এলোমেলো ভাবের সাথে বোধহয় মনের অবস্থারও একটা যোগাযোগ রয়েছে। মনের স্থিরতা ও অস্থিরতার সাথে ঘরের পরিবেশের একটি নিশ্চিত যোগাযোগ আছেই। মনে পড়ে যায় মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র জীবনকে।প্রতিটি ফাইনাল পরীক্ষার আগে নিজেদের রুম একবার হলেও গুছিয়ে নিয়ে পড়াশোনা জোরদার করতাম। বড়োদের দেখে শিখেছি। মনের একটা শান্তি পেতাম। 
একটা এলোমেলো ঘরের পেছনে দায়ী কে ? আমরাই। সেই জিনিসগুলো,যা আপনি আর ব্যবহার করবেন না।পোশাক পরিচ্ছদ যেগুলো আপনি এখন আর পছন্দ করেন না অথবা বিগত কয়েক বছরেও ব্যবহার করেননি।আমাদের ঘরে কতো ভাঙ্গা জিনিস!অরিয়েন্ট চৌমুহনীর পুরোনো কার্ড। আর্চিজ গ্যালারি।মনে পড়ে? মরে শুকিয়ে আসা গাছ।কিছু রসিদ, খাটের নিচে পুরাতন পত্রিকা।অসংখ্য নষ্ট হয়ে যাওয়া বা অব্যবহৃত জুতা,স্যান্ডেল।আপনার বাচ্চার অনেক খেলনা বা পুতুলগুলো যেগুলি আর সে ব্যবহার করে না।এই জিনিস গুলোকে নিয়ে সপ্তাহের একটি দিন বসুন। সময় নিয়ে বসুন।এই কাজে আপনার ঘরের অদরকারী জিনিসগুলো যেমন কমে আসবে,নতুন জায়গা বেড়িয়ে আসবে, সেই সাথে নিজেদের স্বাস্থ্য ভালো হয়,ব্যাক্তিগত সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়,মন ভালো থাকে,মেজাজটা ফুরফুরে হয় এবং অবশ্যই ঘরকে আরো বড় দেখায়।কাজ শুরু করার আগে আমি সাধারণত নিজেকে প্রশ্ন করি --যে জিনিসগুলো আমি রেখে দিচ্ছি দিনের পর দিন, সংরক্ষণ করছি তাতে আমার কি লাভ হচ্ছে? ক্ষতিই বা কি হচ্ছে? একটু পরিবর্তন করে দিলে বা সরিয়ে দিলে কেমন লাগবে? তিনটি কাজ করতে পারি।দান করা।বিক্রি করা বা ফেলে দেয়া। ঘরের ভিতরকার পরিষ্কার রাখলে বা পরিবর্তন করলে তা বাইরেও প্রতিফলিত হয়,যেমন --ঘরে অতিরিক্ত শব্দ,শোরগোল এড়িয়ে চলুন.অতিরিক্ত উজ্জ্বল আলো এড়িয়ে চলুন,দেয়ালের রঙ কম স্যাচুরেটেড রাখা ও মাঝেমধ্যে বদলে দেয়া, কম রাসায়নিক গন্ধ বা উগ্র পারফিউম এড়িয়ে চলা,দুঃখের স্মৃতি যতটা কম সামনে আনা,অসমাপ্ত কাজের দিকে লক্ষ্য রাখা।আপনার বাড়িতে একটা ইতিবাচক প্রবাহ যেন থাকে।ঘরকে সাধারন ভাবেই পরিষ্কার করুন এবং গোছানো থাকার জন্যে বাক্স বা অর্গানাইজার ব্যবহার করুন। কাঠের ড্রয়ার না ওয়ারড্রব নিয়ে ভাবুন এবং প্রতিটি অংশ গুছিয়ে নিন। সময় নিয়ে সবকিছু করুন।এই কাজ গুলো করতে গিয়ে দেখবেন,অনেক আবর্জনা বের হবে।নতুনভাবে সাজানো ও গোছানোর ব্যবস্থা হবে।কিছু জিনিসের নতুন হবে। ভাবছেন, কিছু জিনিসের আর ব্যবহার হবে কি হবেনা? উপহার দিন বা দান করুন অথবা বিক্রি।আপনি যখন এইভাবে ঘরকে পরিষ্কার করছেন,আপনার মধ্যে কি পরিবর্তন হচ্ছে তা ভেবে দেখুন।আমরা শুধু পরিশ্রম দিয়ে ঘর পরিষ্কার করি যে তা নয়, একইভাবে আমরা আমাদের মন ও হৃদয়কেও চালনা করি অবচেতন মনে! যা অপ্রয়োজনীয় এমন পার্থিব বস্তুর সাথে বিচ্ছিন্নতার অনুশীলন বা এড়িয়ে চলার অভ্যাস করুন - যা কেবলমাত্র আপনার ঘরকে আবর্জনাময় করে তুলে এবং আপনি দেখতে পাবেন কিভাবে আপনি আরও গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে ধীরে ধীরে একই কাজ করতে সক্ষম হবেন।নিজের বা কর্মস্থলের ঘর গোছানোর মাঝেই কখন যে আপনি জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে গোছানো হয়ে যাবেন, নিজেই ভেবে অবাক হবেন ।
নিজের হৃদয়ের বোঝ কমান,
ভিতরে ও বাইরে... চলতে অনেক আরাম।
হ্যাপি গোছা গুছি ! 
১৮/০৭/২০২৪,
কনক চৌধুরী, 
ত্রিপুরা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ