Advertisement

Responsive Advertisement

রাজ্যের ত্রাস সৃষ্টির কারখানা অপরাধচক্রের আতুর ঘর ধুলায় মিশিয়ে দিলেন জেলাশাসক

আগরতলা, ১৭ জুলাই : বর্তমান সরকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কতটুকু কঠোর তার জল জ্যান্ত উদাহরণ বুধবার সাত সকালে দেখল আগরতলা সহ গোটা রাজ্যবাসী। রাজ্য সরকারের এই মনোভাবকে কঠোরভাবে পালন করে নিজের দৃঢ়তার পরিচয় দিলেন পশ্চিম জেলার জেলাশাসক ডা বিশাল কুমার। যে ক্লাবের নাম শুনলেই মানুষ কাঁপবে সেই ভারতরত্ন সংঘের বেআইনি ভাবে নির্মিত দালান বাড়ি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দিলেন জেলাশাসক। 
রাজধানী আগরতলার উষা বাজার এলাকায় সরকারি জমির উপর বেআইনি ভাবে নির্মাণ করা ভারতরত্ন সংঘের দ্বিতল ভবনটি তাসের ঘরের মতো গুঁড়িয়ে দিল পশ্চিম জেলা প্রশাসন। এদিন ভোর চারটা নাগাদ এই অভিযান শুরু করা হয়। অভিযান চলাকালীন সময়ে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম জেলার জেলাশাসক ডা বিশাল কুমার নিজে। পাশাপাশি জেলা শাসকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপার ডঃ কিরণ কুমার কে, সদর মহকুমা শাসক মানিক লাল দাস সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। 
অভিযান কালে দুটি বুলডোজার শতাধিক শ্রমিক নিযুক্ত ছিল। প্রথমে অবৈধ ভবন থেকে আসবাবপত্র সহ অন্যান্য সামগ্রী বের করে আনা হয়। তারপর সময়ে বেআইনিভাবে নির্মাণ করা দালানটি ভেঙ্গে ফেলার কাজ শুরু করা হয়। দুই দিক থেকে যখন বুলডোজার কাজ শুরু করে একে একে ভেঙ্গে পড়তে থাকে দ্বিতল দালানটি। এই সময় ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের আধিকারিক, ইঞ্জিনিয়ার অগ্নি নির্বাপক দপ্তর, ইমার্জেন্সি মেডিকেল টিম, প্রচুরসংখ্যক সিআরপিএফ টিএসআর বাহিনীর জওয়ান উপস্থিত ছিল। প্রশাসনের এই সাজ দেখে ক্লাব কর্তৃপক্ষ থেকে কেউ বাধা দিতে আসেনি। তাছাড়া আগেই জেলা প্রশাসন থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছিল ক্লাব কর্তৃপক্ষকে তাদের জিনিসপত্র সরিয়ে অবৈধ ঘরটি ভেঙ্গে সরকারি জমি ফাঁকা করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু লাভ কর্তৃপক্ষ কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করায় ৭ দিন পর বাধ্য হয়ে জেলা প্রশাসন নিজেই বেআইনি নির্মাণ ভেঙ্গে ফেলে। 
জেলাশাসক ডা বিশাল কুমার অভিযান চলাকালীন সময়ে নিজে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, এক বিঘার বেশি সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে ক্লাব চলছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নানা দুর্নীতি এবং অপরাধ মূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার অভিযোগ উঠতে থাকে ক্লাবের বিরুদ্ধে। সরকারি তদন্তে এই বিষয়গুলি উঠে আসার পর ক্লাব ঘর ভেঙ্গে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং অবশেষে তা করা হয়। তিনি আরো বলেন এই জায়গাটিতে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে এই ক্লাব ঘরটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার অন্য ক্লাব গুলি, জমি মাফিয়া নিগোসিয়েশন বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত যারা অবৈধ এবং অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে তাদেরকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে তারা যেন এই ধরনের অসামাজিক কাজ থেকে সরে আসে। অপরাধের বিরুদ্ধে সরকারের জির টলারেন্স নীতির অংশ হিসেবে এদিনের অভিযান বলেও জানিয়েছেন জেলাশাসক। 
অপরদিকে এদিনের এই অভিযানে উপস্থিত পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপার ডঃ কিরণ কুমার কে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এপ্রিল মাসে ভারতরত্ন সংঘের সম্পাদক কে খুন করা হয়। এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে ভারতরত্ন ক্লাবের বিভিন্ন সদস্য নানা অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত, তদন্তে আরো জানতে পারা যায় যে তাদের ক্লাব ঘরটিও সরকারি জমির উপর অবৈধ ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এই ক্লাব ঘরের ভিতর বসে নানা অপরাধমূলক কাজকর্মের পরিকল্পনা নেওয়া হয় তা। গোটা বিষয়টি রাজ্য প্রশাসনকে অবগত করা হয় পুলিশের তরফে। তারপরই ক্লাব ভেঙ্গে সরকারি জায়গা খালি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এয়ার পড়লে এলাকায় অপরাধমূলক কাজকর্ম কমবে বলে আশা ব্যক্ত করেন পুলিশ সুপার।
জেলা প্রশাসনের তরফে ক্লাব ঘর ভেঙ্গে দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করার পর অনেকেই আশঙ্কায় ছিলেন অবৈধ ঘরটি ভেঙ্গে ফেলা সম্ভব হবে কিনা এই ভেবে। কিন্তু জেলা শাসক ডা বিশাল কুমার তার কঠোর মনোভাব এর মধ্য দিয়ে সরকারি কাজটি দায়িত্ব সহকারে এবং সঠিক ভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন।
 রীতিমতো সাধারন মানুষের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই ভারতরত্ন সংঘ। প্রতিবছর জাঁকজমকপূর্ণ দূর্গা পূজার আড়ালে এখানে কিছু ক্লাব সদস্যদের মূল ব্যবসা ছিল সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী এবং কন্টাকটারের কাছ থেকে আবদুল্লাহ আদায় জমির দালালি বিভিন্ন ধরনের নেশা কারবারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোটি কোটি টাকা কামাই করা। এমনকি একের পর এক অপরাধী জন্ম হয়েছে তথাকথিত এই ক্লাব করে। রীতিমতো অপরাধীদের প্রতিযোগিতা এবং নিজেদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ঝামেলা লেগেই থাকতো। এমনকি তাদের কারণে বর্তমান সরকারের সময়ে রাজ্যে যে শান্তি সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল তা অনেকটাই কলঙ্কিত হয়েছে। ক্লাবের একাংশে মাফিয়া দের কারণে রাজ্য এবং বহি:রাজ্যের সংবাদ মাধ্যমে রাজ্যের নাম কলুষিত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সাধারন মানুষও চাইছিলেন এই সকল অপরাধীদের আসফালন বন্ধ হোক। যাতে চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয় এই ক্লাবটিকে। কিন্তু কেউ সাহস করতে পারছিলেন না। রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা মানিক সাহার প্রিয় মানসিকতার জন্যই পশ্চিম জেলার জেলাশাসক অনেকটা অনুপ্রাণিত হন এবং দীর্ঘ বছরের রাজ্যের জঞ্জাল ক্লাব সংস্কৃতির কলঙ্ক জগদ্দল এই পাথরটিকে উপড়ে ফেলা সম্ভব হয়েছে। এখন সাধারণ মানুষের দাবি মুখ্যমন্ত্রী যেন উদ্যোগ গ্রহণ করে ক্লাবটির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেন যাতে করে আর নতুন করে আস্তানা গেড়ে এই সকল অপরাধীরা মাথা তুলে না দাঁড়াতে পারে। সাধারণ মানুষের দাবি মেনে মুখ্যমন্ত্রী হয়তো এই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আসা অনেকের। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ