Advertisement

Responsive Advertisement

সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার জন্য ৫৬৪ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর


আগরতলা, ৬ সেপ্টেম্বর: বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির কারনে আগামী দুই মাস রাজ্যের ৯.৮ লক্ষ রেশনকার্ডধারী নাগরিকদের রেশন কার্ড প্রতি অতিরিক্ত ১০ কেজি চাল বিনামূল্যে প্রদান করা হবে। এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার জন্য ৫৬৪ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ দেওয়া হবে। 
               শুক্রবার রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনের সমাপ্তি দিনে এই ঘোষণা দেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, এই পবিত্র বিধানসভার সকল সদস্য/ সদস্যাগণ অবগত রয়েছেন যে, রাজ্যের সাম্প্রতিক বন্যায় রাস্তাঘাট, সেতু, বিদ্যুৎ পরিবাহী লাইন, কৃষি ও উদ্যান, চাষযোগ্য কৃষিজমি, মৎস্য জলাশয়, পুকুর, বাঁধ, প্রাণী সম্পদ, ঘরবাড়ি ইত্যাদির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মহাসড়ক, রাজ্য সড়ক এবং গ্রামীণ রাস্তাগুলি বন্যায় ভেসে গেছে এবং পুকুর, জলাশয় ও কৃষিজমিগুলি পলি ও জলে প্লাবিত হয়েছে। বন্যার কারণে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক অনুমান প্রায় ১৪ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
                            মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জেলাশাসক এবং লাইন ডিপার্টমেন্টের জেলা আধিকারিকগণ ক্ষেত্রপর্যায়ে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করেছেন। প্রকৃত ক্ষতির মূল্যায়নের পর রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের অনুরোধসহ একটি স্মারকলিপি জমা দেবে। সেই সঙ্গে সাম্প্রতিক বন্যায় সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির তীব্রতাকে মাথায় রেখে রাজ্যের বিভিন্ন সেক্টর জুড়ে অবিলম্বে ত্রাণ ও পুনরুদ্ধারের কাজের জন্য একটি আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।                                মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত এই ত্রাণ এবং পুনরুদ্ধার প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে - খাদ্য ও জনসংভরণ দপ্তরের জন্য ৭০ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে পরবর্তী দুই মাসের জন্য প্রতি মাসে রেশনকার্ড প্রতি ১০ কেজি অতিরিক্ত চাল প্রদান করা। এর ফলে রাজ্যের প্রায় ৯.৮ লক্ষ রেশনকার্ডধারী জনগণ উপকৃত হবেন। কৃষি দপ্তরের জন্য ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দে খরিফ ও রবি শস্য উৎপাদনের জন্য বীজ ও সার প্রদান এবং অন্যান্য কৃষি সহায়তার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। হর্টিকালচার দপ্তরের জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দে শীতকালীন শাক-সবজি ও ফুল চাষ, পান বরজ মেরামত, সার জাতীয় উপকরণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত জমি থেকে পলি অপসারণের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। মৎস্য দপ্তরের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। মাছের উৎপাদনের জন্য মাছের পোনা ক্রয় করার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। এছাড়াও মৎস্য খামার এবং হ্যাচারী মালিকদের আর্থিক সহায়তা করা হবে।
                        এর পাশাপাশি প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের জন্য ৫ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্থ পশুদের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান, পশু খামারগুলিতে জল, ওষুধ সরবরাহ সহ পশু খাদ্যের ব্যবস্থা, পুনর্গঠন, ইনপুট ভর্তুকি এবং অন্যান্য কার্যক্রম করা হবে। শিক্ষা দপ্তরের জন্য ১২ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। মূলত, যারা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের বই সরবরাহ করা এবং স্কুল/কলেজ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। পূর্ত দপ্তর (পানীয়জল ও স্যানিটেশন) এর জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র এবং পরিবারগুলিকে পানীয়জল সরবরাহ এবং পাইপ লাইনের মাধ্যমে জলের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হবে। নগরোন্নয়ন দপ্তরের জন্য ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এর মাধ্যমে শহরের রাস্তা, ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের জন্য ৪০ কোটি টাকায় গ্রামীণ রাস্তা, ড্রেন এবং অফিস ভবনের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। স্বাস্থ্য দপ্তরের জন্য ১০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। জীবানুমুক্ত ও ডায়রিয়া প্রতিরোধে ২০০০ ব্যাগ ব্লিচিং পাউডার, ২ লক্ষ ও আর এস প্যাকেট, ২০ লক্ষ হ্যালোজেন টেবলেট, ১০ লক্ষ জিঙ্ক ট্যাবলেট, জ্বরের ঔষধ এবং চর্মরোগের ঔষধ ক্রয় করা হবে। পূর্ত (WR) এর জন্য ৩৫ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এতে বাঁধ, চ্যানেল, প্রধান প্রকল্পগুলির সংস্কার, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। বিদ্যুৎ দপ্তরের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিবাহী লাইন, ট্রান্সফরমার, কন্ডাক্টর, তার এবং আনুষঙ্গিক সামগ্রীর দ্রুত পুনরুদ্ধার, সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ গ্রহণ করা হবে। পূর্ত (R&B) এর জন্য ২০০ কোটি টাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ও ড্রেনের পুনর্নিমান, সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষণ কাজ করা হবে।
                     মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত মোট প্যাকেজের পরিমাণ ৫৬৪ কোটি টাকা। যা রাজ্য সরকারের তহবিল থেকে পূরণ করা হবে। ডাঃ সাহা আরো বলেন, রাজ্যকে এই ধাক্কা থেকে বেরিয়ে আসতে এবং উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে পরিকাঠামো পুনর্নির্মাণ করতে কয়েক মাস সময় লাগবে। তবে এই প্যাকেজ বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য ত্রাণ আনতে এবং আমাদের সরকার উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক দিশা দেখাবে।
              এদিন বিধানসভায় উপস্থিত সকল সদস্যদের এই অধিবেশন পর্বে গঠনমুলক আলোচনা রাখার জন্য ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ