Advertisement

Responsive Advertisement

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দ্রব্য আর্থিক সহায়তা প্রদানের দাবি জানালেন পবিত্র কর

উদয়পুর, ৫ সেপ্টেম্বর: এবারের বন্যায় গোমতী জেলায় কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন সারা ভারত কৃষক সভার ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির এক প্রতিনিধি দল। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ঘুরে দেখে তারা অভিযোগ করেন, সরকারের প্রতিনিধিরা অফিসে বসে ক্ষতিপূরণের তালিকা করছেন। বাস্তবের সাথে সে তালিকার মিল নেই। আরো বলেন, কৃষি না বাঁচলে মানুষ বাঁচবে না, ত্রিপুরা বাঁচবে না। সরকার সদর্থক ভূমিকা নিক, ভয়াবহ বন্যাকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষনা করতে হবে। কৃষি ও কৃষকের জন্য সরকার সঠিক ভূমিকা না নিলে মানুষকে নিয়ে রাস্তায় নামবে কৃষক সভা। ভয়াবহ বন্যা বিধ্বস্থ উদয়পুর ও অমরপুর মহকুমা এলাকা সরজমিনে পরিদর্শন শেষে উদয়পুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে কথাগুলো বলেন সারা ভারত কৃষক সভা'র রাজ্য সম্পাদক পবিত্র কর।
বুধবার উদয়পুর মহকুমা ও বৃহস্পতিবার অমরপুর মহকুমা পরিদর্শন করেন কৃষক সভা'র নেতৃত্বরা। তারা সরজমিনে মাঠে গিয়ে কৃষির ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের ছবি প্রত্যক্ষ করেন। কথা বলেন কৃষকদের সাথে। কোন সরকারী দপ্তরের লোক ক্ষতির পরিমান নিরুপনের জন্য এখনও যে যায়নি সে কথাও শুনেন কৃষকদের কাছ থেকে। জনগণের দূর্বিসহ জীবনযন্ত্রনা কথা শুনেন তারা। 
দু'দিন পরিদর্শন শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে সিপিআই(এম) উদয়পুর মহকুমা অফিসে সাংবাদিক সম্মেলনে করেছেন পবিত্র কর। সাথে ছিলেন সংগঠনের গোমতী জেলা সম্পাদক নিতাই বিশ্বাস, উদয়পুর মহকুমা সম্পাদক নিখিল দাস।
উদয়পুর মহকুমায় ভয়াবহ বন্যায় কৃষি জমির চিত্র পাল্টে গেছে। যে জায়গায় এখন সবুজ ধানের ক্ষেত বাতাসে দোলা খাওয়ার কথা, সেখানে বন্যায় ধানের জমি আর নেই উদয়পুর মহকুমায়। হেক্টরের পর হেক্টর জমির ফসল জলে তলিয়ে গিয়েছিল। এখন জল নামতেই জমিতে থাকা ধান কিংবা পাতা সব্জির পচন অবশেষ ভেসে উঠেছে, সাথে চারিদিকে দূর্গন্ধময় পরিবেশ। পচে যাওয়া ফসলের জমির কাছাকাছি জায়গায় কৃষক অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকছেন আর ভাবছেন কবে এবং কিভাবে আবার উঠে দাঁড়াতে পারবেন। 
সারা ভারত কৃষক সভা'র রাজ্য সম্পাদক পবিত্র কর-সহ সংগঠনের রাজ্য নেতা নিতাই বিশ্বাস, বাবুল দেবনাথ, নিখিল দাস, শ্যামাপ্রসাদ গোস্বামী, তাপস পাল, শিপ্রা মজুমদার, অর্জুন দেবরায় বুধবার উদয়পুর মহকুমার হীরাপুর, ফোটামাটি, দক্ষিন মুড়াপাড়া, পূর্ব পালাটানা, লোলঙ্গা এলাকা পরিদর্শন করেন। পূর্ব পালাটানায় নেতৃত্বরা দেখতে পায় কানির পর কানি জমিতে পরিনত আখ জমিতে জলের পচনে শুকিয়ে যাচ্ছে। কথা বলেন আখ চাষীদের সাথে। এক আখ চাষী কৃষক নেতৃত্বদের জানায়, পূর্ব পালাটানায় প্রায় দেড়শ কানি জমিতে আখ চাষ করছে কৃষকরা। কিন্তু বন্যায় সব শেষ। এক কানি জমির আখ প্রায় দেড় লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারতেন। এমনকি ইতিমধ্যে অধিকাংশ আখ চাষী আগরতলার মালিক থেকে অগ্রীম টাকাও নিয়ে এসেছেন। এখন বন্যায় আখ নষ্ট হয়ে পড়ায় আখ দিতে পারবেন না, উপরন্তু অগ্রীম নেওয়া টাকা এখন কিভাবে ফিরিয়ে দেবেন তা নিয়ে দূশ্চিন্তায় রয়েছে।
পূর্ব পালাটানার ২০-২৫ জন কৃষকের সরবি কলার বাগান ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়ে বন্যায়। হীরাপুরের জমিতে কোথাও বিন্দুমাত্র ফসলের দেখা নেই। এই হীরাপুরের জমিতে পাতা সব্জিতে এখন ভরপুর থাকার কথা। দক্ষিন মুড়াপাড়ার কান্দি এলাকায় ধানের জমি সুখসাগর জলার জলে তলিয়ে গেছে। সুখসাগর জলা এবারের বন্যায় উদয়পুরের মানুষদের কাছে দুঃখের জলায় পরিনত হয়েছে। শুধু এই এলাকাগুলিই নয়, গোটা উদয়পুর মহকুমায় কৃষি জমি মারাত্মক ক্ষতির সন্মুখীন।
বৃহস্পতিবার অমরপুর মহকুমার বামপুর-সহ আটটি পঞ্চায়েত এলাকার কৃষকদের দূর্দশার অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন। এখানে পবিত্র কর, নিতাই বিশ্বাস, বাবুল দেবনাথের সাথে ছিলেন কৃষক নেতা রনজিৎ দেবনাথ। অমরপুর পরিদর্শন শেষে উদয়পুর এসে সাংবাদিকদের সাথে মিলিত হয় কৃষক নেতৃত্বরা। এখানে সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক পবিত্র কর বলেন, সারা ভারত কৃষক সভা ইতিমধ্যে রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে ১৪ দফা দাবি সনদ তুলে দিয়েছে। সংগঠনের নেতা, সাংসদ আমরা রাম ও পি কৃষ্ণপ্রসাদ ত্রিপুরায় এসে সোনামুড়া, বিলোনিয়া মহকুমা এবং শান্তিরবাজার মহকুমার মুহুরিপুর পরিদর্শন করে দূর্গত কৃষকদের সাথে কথা বলেন। দিল্লী ফিরে গিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন এবং ত্রিপুরার বন্যাকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষনা করার দাবি জানান। 
পবিত্র কর বলেন, উদয়পুর এবং অমরপুরে প্রায় একশ শতাংশ ফসল ক্ষতি হয়েছে। গোটা রাজ্যে যা ক্ষতি হয়েছে তা পূরণে রাজ্য সরকারের পক্ষে সম্ভব না। রাজ্য সরকার, দেশের সরকারের কাছে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষনা করার দাবি জানাক, আমরা সবরকমের সহযোগিতা করবো। নির্দিষ্ট করে দাবি জানান, দলমত নির্বিশেষে ছয় মাসের জন্য সকলকে ফ্রি রেশন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পুনরায় কৃষিকাজ যাতে কৃষকরা করতে পারে জমিতে জমা পলি মাটি সরাতে বিশেষ প্যাকেজ হিসাবে রেগা প্রকল্পে ২০০ দিনের কাজ ও দৈনিক ৬০০ টাকা মুজুরির ব্যবস্থা করতে হবে। সেনিটেশনের পরিপূর্ন ব্যবস্থা, পরিশ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা দ্রুত করতে হবে। সরকার ধানের ১০-১২ দিনের চারা তৈরী করে কৃষকদের বিলি করতে হবে, কৃষকদের ঋন মুকুব করতে হবে এবং পরে বিনা সুদে ঋন দিয়ে কৃষকদের সাহায্য করতে হবে। 
তিনি বলেন, বহু ব্যক্তি, সংস্থা মুখ্যমন্ত্রীর হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন। সে টাকা মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকলে হবে না। বন্যাকবলিত মানুষের কাছে আসতে হবে। জেলা, মহকুমাস্তরের প্রশাসনিক আধিকারিকরা বসে আছে, টাকার অভাবে জনগণের জন্য কিছু করতে পারছেন না। ত্রান থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রেই সরকারের দেখা পাচ্ছে না দূর্গত মানুষ। সরকারকে দূর্গত মানুষদের পাশে দ্রুত সঠিক সাহায্য নিয়ে দাঁড়ানোর দাবি জানান পবিত্র কর।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ