Advertisement

Responsive Advertisement

পূজা প্যান্ডেলে মাইক ব্যবহার না করে নজির সৃষ্টি করল রাজধানীর বিজয়ী সংঘ


আগরতলা, ১২ অক্টোবর : দূর্গা পূজার সঙ্গে মাইক বাজানোর কোন সম্পর্ক নেই, কিন্তু যুগ যুগ ধরে সার্বজনীন দুর্গাপূজা উৎসব কমিটি গুলি মাইক বাজিয়ে আসছে। এই মাইকে পুরাতন ছায়াছবির গান গুলি বাজানো হয়ে আসছে, এর ফলে এটা যেন অঘোষিত একটি রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্গাপূজার প্যান্ডেলে পুরাতন সময়ের গান বাজানো। রীতিমতো এই বিষয়টা নিয়ে বিভিন্ন পূজা উদ্যোক্তাদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে মাইক সহ বিভিন্ন ধরনের তীব্র আওয়াজের লাউড স্পিকারের রমরমা এখন। আগে যেখানে পূজার সময় গান বাজানো নিয়ে সুস্থ সুন্দর প্রতিযোগিতা হত তা এখন রীতিমতো শব্দ দানবের রূপ নিয়েছে এবং যা হয়ে উঠেছে বেশিরভাগ মানুষের অস্বস্তির কারণ। আর ডিজে আসার পর তো দুর্গাপূজার বিসর্জন রীতিমতো কিছু কিছু মানুষের কাছে আতঙ্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। 
বিশেষ করে যাদের বাড়িতে অসুস্থ রোগী অথবা হৃদরোগে আক্রান্ত লোক রয়েছেন তাদের কাছে এই ডিজে তো রীতিমতো চূড়ান্ত অস্বস্তির এক কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিসর্জনে যাওয়া অনেক উদ্যোক্তারা এতটাই মত্ত থাকেন যে হাসপাতাল চত্বরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ও ডিজে বন্ধ করার প্রয়োজন মনে করেন না। 
এখন বেশিরভাগ পূজা উদ্যোক্তারা পঞ্চমী এমন কি চতুর্থীর দিন থেকে প্যান্ডেল দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন, সেই সঙ্গে শুরু হয়ে যায় মাইকের দৌরাত্ব। দিনের বেলা মাইকের আওয়াজ সাধারণ মানুষ মেনে নিলেও গভীর রাতে ফাঁকা প্যান্ডেলে যখন তীব্র স্বরে মাইক বাজতে থাকে, তখন ঘুমোতে যাওয়া এলাকার মানুষের কি অবস্থা হয় তা ভুক্তভোগিরাই জানেন। যদিও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকে মাইক বাজানো সর্বোচ্চ ডেসিবেল এবং সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, পূজা উন্মাদনায় সরকারি এই নির্দেশিকা কলাপাতায় পরিণত হয় প্রতি বছর। 
 এই পরিস্থিতিতে রাজ্য এবং বিশেষ করে রাজধানীর বেশ কিছু সচেতন মানুষ ডিজের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন। তাই প্রশাসন থেকে এবছর নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে বিসর্জনে ডিজে বাজানো যাবে না বলে। 
তবে পাড়ায় পাড়ায় পূজা মণ্ডপে মাইকের দৌরাত্ব এখনো অব্যাহত রয়েছে। সাধারণ মানুষ যখন মাইকের সাউন্ডে অতিষ্ঠ এই সময় মানুষের কথা চিন্তা করে এবার পূজা প্যান্ডেলে এবং আশেপাশে মাইক বাজানো থেকেই সরে দাঁড়িয়েছে রাজধানীর বনমালীপুর এলাকার বিজয়ী সংঘ। এই পূজা উদ্যোক্তার এক সদস্যা শ্রাবন্তী দাস জানান, মানুষের অসুবিধার কথা চিন্তা করে তারা এবছর পূজা প্যান্ডেলে কোন ধরনের মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম রাখেননি। শুধুমাত্র ঢাক এবং কাসা বাদ্যযন্ত্র হিসেবে রাখা হয়েছে। তাদের এই উদ্যোগের জন্য ইতিমধ্যে সচেতন মহল থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা কুড়াচ্ছে। 
ইতিমধ্যেই অনেকে দাবি করছেন তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এবং আগামী দিনে যাতে অন্যান্য ক্লাব উদ্যোক্তারাও তাদের দেখে পূজা প্যান্ডেলে মাইকের মোহ ত্যাগ করতে উৎসাহিত হন তার জন্য বিজয়ী সংঘকে আলাদা ভাবে সম্মানিত করা হোক। আগরতলা পুর নিগম, তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে প্রতিবছর শারদ সম্মাননা দেওয়া হয়ে থাকে বিভিন্ন বিভাগে। তাদের এই উদ্যোগের জন্য আলাদা ভাবে সম্মানিত করা উচিত। অন্য কেউ তাদের এড়িয়ে গেলেও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ তাদেরকে যেন বিশেষভাবে সম্মাননা জানায় এই দাবিও রাখছেন অনেকে। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ