তখন সারা দেশে প্রযুক্তিবিদদের রেল চালানোর অভিজ্ঞতা থাকলেও মাটির নীচে রেল চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল না। মেট্রোর ধরাবাঁধা সহজলভ্য প্রযুক্তিও ছিল না। ফলে বাধার পাহাড় অতিক্রম করতে সময় লেগেছে। সুড়ঙ্গ নির্মাণ থেকে ট্রেন চালানো— কিছুই নির্বিঘ্নে হয়নি। কাজ শুরু হওয়ার প্রায় ১১ বছর পর এসপ্লানেড থেকে ভবানীপুরে ছুটেছিল মেট্রো। কিন্তু দমদম থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত মেট্রো ছুটতে কাজ শুরুর পরে লেগেছে পাক্কা ২৩ বছর।
মেট্রোর চালকদের প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মস্কোয়। প্রায় চার মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন তাঁরা। ইতিহাস ছুঁয়ে গিয়েছেন প্রথম মেট্রোর দুই চালক সঞ্জয় শীল, তপন নাথ, সেই সময়ের ময়দান এবং এসপ্লানেড স্টেশনের দুই স্টেশন মাস্টার বিমলেন্দু রায় এবং এ কে শতপথীও।
তপনবাবু এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন সেই দিনের স্মৃতিকথা, “আগের দিন সন্ধ্যেবেলায় জানতে পেরেছিলাম পরদিন সকালে আমায় কলকাতার প্রথম মেট্রো (Metro Railway, Kolkata ) চালাতে হবে। শুরুতে যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারিনি। সারারাত ভাল করে ঘুমোতে পারিনি চিন্তায়। পরদিন রিপোর্টিং ছিল সকাল সাত’টায়। ময়দান স্টেশনে। ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে। সেখান থেকে এসপ্ল্যানেড (Esplanade) স্টেশনে নিয়ে আসা হল আমাকে আর অন্য মোটরম্যান সঞ্জয় শীলকে। আরপিএফ এসকর্ট করে নিয়ে গেলেন। প্রথম মেট্রোয় চড়ার জন্য সে কি হুড়োহুড়ি ভিড় সেদিন এসপ্ল্যানেড স্টেশনে। মাটির তলা দিয়ে ট্রেন ছুটবে। প্রথমদিন এসপ্ল্যানেড থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত ছুটেছিল ট্রেন।”
তপনবাবুর কথায়, “দিনটা ছিল বুধবার। প্রথম সেই অভিজ্ঞতার স্বাক্ষী হতে মানুষ সকাল থেকেই চলে এসেছিলেন স্টেশনে। এক টাকা দাম ছিল টিকিটের। কাগজের টিকিট। সেদিনের অভিজ্ঞতার কথা কী আর ভুলা যায়! প্রথম মেট্রো চলছে। আর তার প্রথম চালক আমিই। ভাবতেই তো এখনও গায়ের পশম খাঁড়া হয়ে যাচ্ছে। প্রথম ট্রেন চলার আগে প্রায় বছর দুয়েক ট্রায়াল চলে। কিন্তু আগে থেকে জানানো হয়নি যে আমরা দু’জন ছোটাবো ওইদিন মেট্রো। যেই মুহূর্তে জানতে পারলাম বুকটা ধরাস করে উঠেছিল। টেনশন হলেও ভয় করেনি কখনও। ভোরবেলা উঠে রেডি হয়ে লেক টাউনের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ে ছিলাম। তারপর এসে মোটরম্যানের ড্রেস পরে কেবিনে উঠে পড়া। এখনও সেই সব স্মৃতি চোখের মধ্যে ভাসছে।”
নন-এসি রেক ছুটবে না জেনেই খানিকটা মন খারাপ কলকাতা মেট্রোর প্রথম চালকের। তার কথায়, “যখন শুনছি আর নন-এসি রেক চলবে না। মন তো একটু খারাপ হবেই। তবে সবেরই তো একটা মেয়াদ আছে। এগুলোর মেয়াদ আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। যেহেতু নতুন রেক পর্যাপ্ত আসেনি। তাই এতদিন এগুলো চালাতে হতো। এবার থেকে যাত্রীরা সব এসি রেকেই চড়বেন। অনেক অনেক স্মৃতি রয়েছে কলকাতা মেট্রোকে নিয়ে। তা কোনওদিন ঝাপসা হওয়ার নয়। বছর কয়েক আগে আমি অবসর নিয়েছি। কিন্তু এখনও মেট্রোর সঙ্গে আমার নাড়ির যোগ রয়ে গিয়েছে। প্রথম দিনটা এখনও আমার চোখের সামনে ভাসে। চোখের কোনায় জল চলে আসে।”
এভাবেই এগিয়ে চলুক কলকাতা মেট্রো......জন্মদিনে শুভেচ্ছা !
0 মন্তব্যসমূহ