আগরতলা, ২৭ অক্টোবর: কীর্তনের মতো কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও পরম্পরাকে অবশ্যই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আধ্যাত্মিক চিন্তা ভাবনার মাধ্যমে সব ধর্মকে সন্মান জানিয়ে হিন্দু ধর্মের প্রসার ঘটিয়েছেন স্বামী বিবেকানন্দ। যা আজকের দিনেও সমান প্রাসঙ্গিক।
রবিবার রাজধানীর মুক্তধারা প্রেক্ষাগৃহে তারক ব্রহ্ম কীর্তনীয়া শিল্পী সমিতির দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। নাস্তিকতা ইস্যুতে পূর্বতন সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আমি যতদূর জানি কীর্তন শব্দটা সংস্কৃত থেকে এসেছে। জন্ম থেকে মৃত্যু কীর্তন অপরিহার্য। জন্মের সময়ও কীর্তন শুনতে হয়, আর মৃত্যুর সময়ও কীর্তন শুনতে হয়। তাই তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া আমাদেরও কর্তব্য এবং সমাজেরও কর্তব্য। কীর্তন শুনলে মনের মধ্যে একটা আধ্যাত্মিক ভাব চলে আসে। সমস্ত দুঃখ, দুর্দশা ও ভালো লাগার ভাবকে ভুলে গিয়ে একটা ভালোবাসার জায়গা তৈরি হয় এই গান বাজনা ও কীর্তন শোনার মধ্য দিয়ে। আর কীর্তন মানেই একটা হারমোনিয়াম থাকবে। একটা ঢোল থাকবে, করতাল থাকবে, আর অবশ্যই একটা বাঁশি থাকবে। বাঁশির আওয়াজটা থাকলে মনে হয় পুরোদমে কীর্তন চলছে। এই যে কৃষ্টি, সংস্কৃতি, পরম্পরাকে অবশ্যই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমরা ৩৫ বছরের রাজত্ব এখানে দেখেছি। ৩৫ বছরে ত্রিপুরার যে সংস্কৃতি ছিল সেটা ভুলুন্ঠিত হয়েছে। কারণ তারা ঈশ্বর বিশ্বাস করতো না। নিজেরাও বিশ্বাস করতো না, অন্যদেরও বিশ্বাস করতে দিত না। নিজেরা বাইরে নাস্তিক মনোবৃত্তি দেখালেও চুপিসারে উনার ধর্মপত্নী মন্দিরে যান। এমনও ঘটনা আছে ত্রিপুরা বা পশ্চিমবাংলায়।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, এরআগেও আমরা কংগ্রেসের রাজত্ব দেখেছি। তাদের সময়েও একই অবস্থা। তারা নিজেরা জানে না কোন নীতি নিয়ে চলবে। ওরা বিদেশী নীতি ও আমাদের কিছু নীতি নিয়ে মিশ্র নীতিতে চলতো। সেই জায়গায় ২০১৮ সালে আমাদের সরকার ত্রিপুরায় গঠনের পর ২০১৯ এ আপনারা এই সংগঠন তৈরি করেছেন। আর এখন ত্রিপুরায় আস্তিকের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আমরা স্বাধীনভাবে যেখানে সেখানে যেতে পারি। আমরা সবাই মিলে এমন পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছি। কীর্তনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদেরও সমাজের জন্য দায়িত্ব রয়েছে। সমাজ পরিবর্তনের দায়িত্ব নিতে হবে আপনাদেরও। আপনারা কথার মাধ্যমে মানুষকে বুঝাতে পারবেন। একজন শিল্পী হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আছেন আপনারা। বিভিন্ন জায়গায় কীর্তন হলে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সামিল হয়। সমাজের কথা এবং কথার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেন কীর্তনের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরা।
সন্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, স্বামী বিবেকানন্দ যেভাবে আধ্যাত্মিক চিন্তা ভাবনা নিয়ে সব ধর্মকে সন্মান জানিয়ে হিন্দু ধর্মের প্রচার করেছেন সেটা বর্তমান সময়েও খুবই প্রাসঙ্গিক। আর এই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে সকলের সম্মিলিত প্রয়াস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সন্মেলনে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী টিংকু রায়, তফশিলি জাতি কল্যাণ মন্ত্রী সুধাংশু দাস সহ তারক ব্রহ্ম কীর্তনীয়া শিল্পী সমিতির চেয়ারম্যান জগমোহন নাথ, সাধারণ সম্পাদক বিমল নাথ, ভবতারণ ভট্টাচার্য সহ অন্যান্যরা। এদিন সন্মেলন শুরুর আগে আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে আগরতলা শহরের বুকে একটি শোভাযাত্রা করা হয়।
0 মন্তব্যসমূহ