আগরতলা, ৫ অক্টোবর: কৃষি ক্ষেত্রের সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে রাজ্যের বর্তমান সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশিত দিশায় কৃষকদের কল্যাণে কাজ করা হচ্ছে। সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে কৃষকদের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা।
শনিবার আগরতলার অরুন্ধুতিনগরের রাজ্য কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পিএম-কিষান এর ১৮তম কিস্তি বরাদ্দের ভার্চুয়ালি প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আজ ২০ হাজার কোটি টাকার ১৮তম কিস্তি হস্তান্তর করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানাই। এই প্রকল্পে ত্রিপুরার জন্য ৪৭ কোটি ৬৮ হাজার টাকা প্রদানের জন্যও রাজ্যের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এরআগে ১৭তম কিস্তি সম্পূর্ণ হয়েছিল। সেখানে প্রায় ২ লক্ষ ৫৯ হাজার ৪৯৯ জন কৃষক সহায়তা পেয়েছেন। ত্রিপুরাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৩৭ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষকদের জন্য প্রতি বছরে ৬ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে কৃষকরা ধান, বীজ, সার ইত্যাদি উপাদানের চাহিদা মেটাতে পারবেন। আগে ভারতকে গরীব দেশ হিসেবেই সারা বিশ্বের মানুষ জানতো। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশ দ্রুত উন্নতির দিশায় এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশ মূলত কৃষি প্রধান দেশ।কৃষকদের উন্নয়ন না হলে দেশ কোনদিন সামনের দিকে এগিয়ে যাবে না। কোভিডের সময়ে অন্যান্য দেশের আর্থিক ব্যবস্থা দোদুল্যমান অবস্থায় পড়েছিল। কারণ সেখানে শিল্পের উপর ভিত্তি করে তাদের অর্থনীতি দাঁড়িয়েছিল। সেই জায়গায় কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায় আমাদের দেশে তেমন কোন সমস্যা হয়নি। আর্থিক দিক দিয়ে ভারত এখন ১১তম স্থান থেকে ৫ম স্থানে চলে এসেছে। তৃতীয় স্থানে চলে আসার জন্য চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ প্রধানমন্ত্রীর একটা বোতাম টিপে ২০ হাজার কোটি টাকা ডিবিটির মাধ্যমে একাউন্টে চলে গেলো। আর তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী বলেছিলেন ১ টাকা তিনি যদি পাঠাতেন তবে ২৫ পয়সা এসে পৌঁছাতো। ১০০ টাকা পাঠালে ২৫ টাকা আসতো। কিন্তু এখন মিডলম্যান নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবাইকে জনধন প্রকল্পে জিরো ব্যালেন্সে একাউন্ট খুলতে বলেছিলেন। এনিয়ে কত হাসাহাসি হয়েছে। আর আজ আমরা বুঝতে পারছি মিডল ম্যান না থাকায় কত সুবিধা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনায় রাজ্যে ১৩ হাজার ১৩ লক্ষ ৮৯ হাজার কৃষক উপকৃত হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী ইন্টিগ্রেটেড ক্রপ ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম (MICMP) এ আমন চাষের সময় ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে টার্গেট করা হয়েছে। এটার মধ্যে স্কিমেটিক এসিস্ট্যান্স প্রদানের চেষ্টা হচ্ছে। ৫,৬৫০ করে সহায়তা প্রদান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মার্গ দর্শনে সেটা করা হচ্ছে। এজন্য বাজেট রাখা হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। কৃষকদের সংখ্যা জানার জন্য একটা ডাটা তৈরি করা হয়েছে। এতে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার ৫০০ কৃষক এখন পর্যন্ত এই পোর্টালে আপলোড হয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, এখন ডিজিটাল যুগে সবকিছুই ডিজিটালি চিন্তাভাবনা করতে হবে। এতে ল্যান্ড রেকর্ড সহ বিভিন্ন ব্যবস্থাদির তথ্য থাকবে। রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেন্টার অফ এক্সেলেন্স গড়ে তোলার। আগে কথায় কথায় কোলকাতা থেকে ফুল আনতে হতো। কিন্তু এখন ত্রিপুরাতেই কৃষকরা এখন ফুল উৎপাদন করছেন। আমরা তাদেরকে ইন্দো - ডাচ প্রজেক্টে প্রায় ১২ কোটি টাকা সহায়তা করা হয়েছে। লেম্বুছড়া, বীরচন্দ্র মনু এলাকায় সেন্টার অফ এক্সেলেন্স গড়ে তুলে সবজি উৎপাদনের ব্যবস্থা হচ্ছে। সেখানে রোগ মুক্ত ও টাটকা সবজি উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্প উদ্যান প্রকল্পে ৩৯০.৩০ হেক্টর জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে মেরি গোল্ড, রোজ ইত্যাদি ফুলের ফলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে ওয়েল পাম্পের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এর পাশাপাশি লেবু, লিচি, আপেল, গোয়াভা, নারকেল ইত্যাদি ফলমূল উৎপাদনের জন্য কৃষকদের সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া ধলাই জেলার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে পুরস্কৃত করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, কৃষি দপ্তরের অধিকর্তা শরদিন্দু দাস, পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান, নগর পঞ্চায়েত ও ব্লক এডভাইজার কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, জিলা পরিষদের সদস্য, পুর কর্পোরেটর সহ কৃষি দপ্তরের অন্যান্য আধিকারিকগণ।
0 মন্তব্যসমূহ