আগরতলা, ৪ নভেম্বর : ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের প্রেসিডেন্ট মলয় পীট সোমবার আগরতলা প্রেসক্লাবের এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন।
এই সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, শুরু থেকেই আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠেছে ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ। শুধুমাত্র এই রাজ্য নয় বাইরের রাজ্য থেকেও আগ্রহী ছাত্র- ছাত্রীরা এমবিবিএস পড়ার জন্য ত্রিপুরায় আসছেন। আগরতলার কাছেই ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজে এই বছর থেকেই এমবিবিএস কোর্স শুরু হয়ে যাওয়ায় রাজ্য তথা দেশের মেডিকেল পড়ার সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজ্য সরকারের সহযোগিতায়, Indira Gandhi Memorial Hospital (IGM) কে affiliated Teaching Hospital হিসাবে নিয়ে ত্রিপুরার আগরতলার অদূরে রাণীর খামারে গড়ে উঠেছে ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ। এখানে এই ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকেই ১৫০ আসন বিশিষ্ট এমবিবিএস কোর্স শুরু হয়েছে। National Medical Commission (NMC) থেকে তার প্রয়োজনীয় অনুমতি পেয়ে, NMC-র তত্ত্বাবধানে ও রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় এখানে ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। সূত্রের খবর সম্ভবত ৫ই নভেম্বর, সারা দেশে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হবে।ত্রিপুরাবাসী থেকে শুরু করে ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা ইতিমধ্যেই স্বীকার করছেন যে ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ গঠিত হওয়ার ফলে রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই একটা বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বহু মানুষ, এমনকি স্থানীয় বিধায়ক তথা ত্রিপুরা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার রামপ্রসাদ পাল বলেন, 'আমার বহু পরিচিতজনের ছেলে-মেয়েরা ডাক্তারি পড়াবার জন্য দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গিয়েছে বিশেষ করে দক্ষিনের রাজ্য গুলোতে। আর আজ আমার পরিচিতজনেরা রাজ্যের বাইরের কথা না ভেবে আমার কাছে ত্রিপুরায় মেডিকেল পড়াবার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে। বিশেষ করে ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজে। এটা তো একটা বড় পরিবর্তনই। গতবছর পর্যন্ততো এমনটা হয় নি।"
শুধুমাত্র ত্রিপুরা নয়, রাজ্যের বাইরে থেকেও ভর্তির এজেন্টরা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এখন আগরতলার বিভিন্ন জায়গায় এসে উপস্থিত হয়েছেন এই রাজ্যে মেডিকেল সিটে পড়াবেন বলে।
ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজে ইতিমধ্যেই আমরা প্রাথমিকভাবে এমবিবিএস ক্লাস শুরু করা হয়েছে। এখানে অভিনব পদক্ষেপ নিয়েছে নবনির্মিত ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ। এমবিবিএস এর সমস্ত ক্লাস অনলাইন মাধ্যমে লাইভ টেলিকাস্ট করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের ফেসবুক এবং ইউটিউব দেখে থেকে ক্লাস সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। ক্লাস লাইভ করার ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন উপকৃত হবে সেই সঙ্গে তাদের অভিভাবক সহ বাকীরাও ক্লাসের মান ও ধারা নিয়ে সাম্যক ধারণা পেতে পারবেন। দেশের এমবিবিএস পড়াশোনার ক্ষেত্রে এটা একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
কলেজের সভাপতি মলয় পীট বলেন, আমরা শিক্ষার মান নিয়ে কোন আপস করতে রাজি নই। ক্লাস অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচার করার ফলে পড়ুয়াদের অভিভাবকেরাও যেমন ক্লাসের মান নিয়ে সুনিশ্চিত হতে পারেন, একই ভাবে ছাত্রছাত্রীরাও ক্লাস পরবর্তী সময়ে এই সমস্ত ক্লাস দেখে নিজেদের পড়াশোনাকে আবারো ঝালিয়ে নিতে পারে। যেটা ক্লাসের পরেও তাদের বিষয়বস্তু বোঝা এবং মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক।
এই মেডিকেল কলেজে বিগত আগস্ট মাস থেকেই এখানে বহির্বিভাগ বা ওপিডি পরিষেবা শুরু হয়ে গেছে। এখানে সোমবার থেকে শনিবার প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা মাত্র দশ টাকার বিনিময়ে রোগী দেখছেন। রোগীরা যাতে সুচিকিৎসা পান তাই স্বল্প মূল্যে ডাক্তারবাবুদের কাছ থেকে পরামর্শ নেবার পাশাপাশি ওষুধ এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত সব রকম পরীক্ষাতে পাচ্ছেন আকর্ষণীয় ছাড়।
মেডিকেল কলেজের সভাপতি মলয় পীট জানান যে রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় আগামী এক বছরের মধ্যে ৬৫০ বেডের হাসপাতাল নির্মাণের যে লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, যা রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় দ্রুত বাস্তবায়িত হচ্ছে। তাছাড়াও এই মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসেই আগামী দুই বছরের মধ্যে, রাজ্য সরকারের সমর্থন ও পরামর্শে, ১১০০ বেডের মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে।
ত্রিপুরায় রাজ্য সরকারের ঐকান্তিক সহযোগিতায় সহমতের ভিত্তিতে ত্রিপুরায় 'ত্রিপুরা নলেজ সিটি' ও একটি অত্যাধুনিক ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি গড়ে উঠতে চলেছে। তাছাড়াও ২০২৫ সালেই এখানে, রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় কলেজ নির্মাণ করে হটিকালচারে ডিপ্লোমা ও ডিগ্রি কোর্স শুরু করা হবে। অদূর ভবিষ্যতে রাজ্যের স্বাস্থ্য, শিক্ষা সহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা নিতে চলেছে এই উন্নয়নমূলক পদক্ষেপগুলো।
0 মন্তব্যসমূহ