আগরতলা, ১ ডিসেম্বর: এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে জন সচেতনতার উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষ করে যুব সমাজকে এইচআইভি/এইডস বিষয়ে সচেতন করার লক্ষ্যে আরও বেশি করে কর্মশালা ও আলোচনাচক্রের আয়োজন করা প্রয়োজন। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে রেড রিবন ক্লাবের মাধ্যমে এইচআইভি/এইডস ও শিরাপথে মাদক ব্যবহারের বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করার উপরও গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। রবিবার প্রজ্ঞাভবনে রাজ্যভিত্তিক বিশ্ব এইডস দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতো এইচআইভি আক্রান্তদেরও বাঁচার অধিকার রয়েছে। তাই এইচআইভি আক্রান্তদের বিরুদ্ধ কোন ধরণের বৈষম্যমূলক আচরণ করা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুযোগ রয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৯ সালে রাজ্যে এইচ আই ভি/এইডস কর্মসূচি চালু হয়। এই কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য ২০০০ সাল থেকে রাজ্যে ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি কাজ করে চলেছে। এইচ আই ভি/এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, কাউন্সেলিং এবং পরীক্ষার জন্য রাজ্যের ২৪টি হাসপাতালে ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং এবং টেস্টিং সেন্টার, ১৩৩টি হাসপাতালে ফেসিলিটি ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং এবং টেস্টিং সেন্টার, তিনটি টিপিপিপি ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং এবং টেস্টিং সেন্টার এবং একটি মোবাইল ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং এবং টেস্টিং সেন্টার ভ্যান কাজ করছে। মা থেকে শিশুতে এইচ আই ভি/এইডস সংক্রমন রোধে আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ এবং জিবিপি হাসপাতালে একটি প্রিভেনশান অফ পেরেন্ট টু চাইল্ড ট্রান্সমিশন (PPTCT) সেন্টার চালু করা হয়েছে। এ বছর মোট ৫৬৬৩ জন মহিলা যৌনকর্মী, ৯৭৮ জন সমকামী, ৭৭১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিক, ৩৮০৪ জন ট্রাক চালক, ১৩২ জন ট্রান্সজেন্ডার এবং ৮৭৪৮ জন শিরাপথে মাদক ব্যবহারকারীদের নিয়ে ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির অধীনে ১৩টি টি আই এনজিও এবং ২টি লিঙ্ক ওয়ার্কার স্কিম এবং ৪টি ওয়ান স্টপ সেন্টার কাজ করছে। শিরাপথে মাদক ব্যবহারকারীদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে এবং ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির পরিচালনায় জম্পুই পাহাড়ের ভাঙমুন হাসপাতাল, কুমারঘাট হাসপাতাল, কৈলাশহর জেলা হাসপাতাল, ধলাই জেলা হাসপাতাল, জিরানীয়া সিএইচসি, অভয়নগর আরবান পিএইচসি এবং দামছড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওপিওড সাবস্টিটিউশন থেরাপি সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া রাজ্যে আরও ১৮টি স্যাটেলাইট ওপিআইওডি সাবস্টিটিউশন থেরাপি সেন্টার যেমন, মনুঘাট হাসপাতাল, কাঞ্চনপুর মহকুমা হাসপাতাল, গন্ডাছড়া মহকুমা হাসপাতাল, ত্রিপুরাসুন্দরী হাসপাতাল, বিশ্রামগঞ্জ প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, করবুক মহকুমা হাসপাতাল, অমরপুর হাসপাতাল, সাবুম হাসপাতাল, খোয়াই জেলা হাসপাতাল, তেলিয়ামুড়া হাসপাতাল, মোহনপুর হাসপাতাল, শান্তিবাজার জেলা হাসপাতাল, ধর্মনগর জেলা হাসপাতাল, কলাছড়া হাসপাতাল ও ছৈলেংটা হাসপাতাল, ওয়ানস্টপ সেন্টার বোরাখা, ওয়ানস্টপ সেন্টার টাকারজলা এবং আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ-এর মাধ্যমে ড্রাগ ব্যবহারকারীদের পরিসেবা দেওয়া হচ্ছে। এইচ আই ভি/এইডস আক্রান্তদের চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজে এবং জিবিপি হাসপাতালে অ্যান্টিরেট্রো ভাইরাল থেরাপি প্লাস, ধর্মনগরে জেলা হাসপাতাল এবং ধলাই জেলা হাসপাতালে ফেসিলিটি ইন্টিগ্রেটেড অ্যান্টিরেট্রো ভাইরাল থেরাপি সেন্টার, কৈলাশহরে ঊনকোটি জেলা হাসপাতাল, উদয়পুরে গোমতী জেলা হাসপাতাল, শান্তিবাজার মহকুমা হাসপাতাল, তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতাল এবং সাব্রুম মহকুমা হাসপাতালে লিঙ্ক অ্যান্টিরেট্রো ভাইরাল থেরাপি সেন্টার কাজ করছে। এখান থেকে এইচ আই ভি/এইডস আক্রান্তদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বর্তমানে ২১৮৩ জন এইচ আই ভি/এইডস আক্রান্তকে রাজ্য সরকার মাসিক ২ হাজার টাকা করে ভাতা দিচ্ছে। মোবাইল ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং এবং টেস্টিং সেন্টার ভ্যান এর মাধ্যমে রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিনামূল্যে এইচ আই ভি নির্ণায়ক পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসচিব কিরণ গিত্যে বলেন, দেশব্যাপী এইচআইভি/এইডসের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। এইচআইভি আক্রান্তরা যাতে তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন অতিবাহিত করতে পারেন সে লক্ষ্যে রাজ্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে। এইচআইভি আক্রান্তদের চিকিৎসার অধিকার প্রদানে ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করার লক্ষ্যে প্রতিটি বিদ্যালয়ে রেড রিবন ক্লাব গঠন করার উপরও গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির প্রকল্প অধিকর্তা ডা. সমর্পিতা দত্ত। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা ডা. অঞ্জন দাস, ত্রিপুরা হেলথ সার্ভিসের অধিকর্তা ডা. সঞ্জীব দেববর্মা, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা তপন কুমার দাস এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব রাজীব দত্ত। এইচআইভি/এইডস বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি রূপায়ণে ভালো কাজ করেছে এমন দুটি এনজিওকে অনুষ্ঠানমঞ্চে পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কার স্বরূপ এনজিও'র প্রতিনিধিদের হাতে ট্রফি ও শংসাপত্র তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও বিশ্ব এইডস দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক রেড রান দৌড় প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করা হয়। পুরুষ ও মহিলা বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীকে যথাক্রমে ২০ হাজার, ১৫ হাজার ও ১০ হাজার টাকা সহ মেডেল তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
0 মন্তব্যসমূহ