Advertisement

Responsive Advertisement

ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তনের পর সমবায় ক্ষেত্রে এক নতুন দিশা এসেছে: শাহ






আগরতলা, ২২ ডিসেম্বর: মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে ত্রিপুরা পশ্চিমবঙ্গকেও ছাপিয়ে গেছে। এক সময় এ রাজ্যের মাথাপিছু বার্ষিক গড় আয় যেখানে ছিল ৯৮ হাজার টাকা, এখন তা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকার উপর। একেই বলে সুশাসন। আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে সমবায় সম্মেলন- ২০২৪ উপলক্ষে 'সহকার-সে-সমৃদ্ধি' শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দেশের স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী অমিত শাহ একথা বলেন। রাজ্যের বর্তমান সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, ২০১৭ সাল পর্যন্ত ত্রিপুরায় ৩ শতাংশেরও কম বাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানীয়জল পৌঁছে ছিল। আজ এই সংখ্যাটাই ৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, রাজ্যে এখন ৮০ শতাংশের উপর বেশি মানুষ ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা পাচ্ছেন। সম সংখ্যক মানুষ গ্যাসের সংযোগ পেয়েছেন। এর আগে ত্রিপুরায় যারা রাজ্য সরকারে ছিল তারা শুধু কমিউনিস্ট ক্যাডারদের জন্যই কাজ করত। ক্যাডারদের ছাড়া তারা অন্য কারোর কথা চিন্তাও করত না। এতে ত্রিপুরা একটি পিছিয়ে পড়া রাজ্য হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল। ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তনের পর সমবায় ক্ষেত্রে এক নতুন দিশা এসেছে। শুধুমাত্র সমবায় ক্ষেত্রের জন্যই নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের জন্যেও এ রাজ্যে কৃষকদের সামনে এক নতুন দিগন্ত খুলে গেছে।
অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় পরম্পরাগতভাবে জৈবিক চাষ হয়ে থাকে। এ রাজ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি কৃষক জৈবিক চাষের সঙ্গে যুক্ত। এটা খুবই ভাল দিক। কিন্তু তারা জৈবিক চাষ করে থাকলেও এ বিষয়ে তাদের সার্টিফিকেশন নেই। কোন ন্যাশনাল অর্গানিক কো- অপারেটিভ লিমিটেডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সার্টিফিকেট পাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এতে দুই তিন বছরের মধ্যেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সামগ্রীর মূল্য কম করে ৩০ শতাংশ বেশি পাবেন। জৈবিক চাষের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, জৈবিক চাষ শুধুমাত্র পরিবেশবান্ধবই নয়, মানুষের স্বাস্থ্যের উপকারিতার জন্যেও সবাইকে জৈবিক চাষের দিকে মনোনিবেশ করা উচিৎ। জৈবিক চাষের উৎপাদিত ফসল অনেক শারীরিক সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে। আরও বেশি করে মাছ চাষ করার জন্য কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কৃষকদের অবস্থার উন্নয়নের জন্যে তিনটি সোসাইটি গঠন করা হয়েছে।
উন্নতমানের বীজ তৈরি, জৈবিক ফসল বাজারজাত করা এবং সামগ্রীকভাবে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এই সোসাইটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ত্রিপুরায় ৩, ১৮৩টি পৃথক পৃথক সমবায় সমিতি রয়েছে। ডেয়ারি, পশুপালন এবং আরও অনেক বহুমুখী কাজে এই সমিতিগুলি যুক্ত রয়েছে। আগে রাজ্যে সমবায় সমিতি থাকলেও ক্যাডারদের কারণে এই সমিতিগুলি লাভের মুখ দেখত না। তারা এখন পরিবারের সমৃদ্ধির জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, ত্রিপুরায় সমবায়ের ভিত্তিতে ২ হাজার মেট্রিকটন ক্ষমতাসম্পন্ন গোডাউন গড়ে তোলা হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ পেলে রাজ্যের এমন কোন তহশিল থাকবেনা যেখানকার ফসল গোডাউনে রাখা যাবে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গরিব মানুষের উন্নয়নের জন্যই অনেক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। এগুলির সুবিধা সবাইকে নিতে হবে। অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর্থিক সমৃদ্ধির দিক দিয়ে ভারতবর্ষকে একাদশ থেকে পঞ্চম স্থানে নিয়ে এসেছেন। এখন একে আরও উপরে তুলে তৃতীয়স্থানে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে কাজ হচ্ছে। তবে এতে সব অংশের মানুষের সহযোগিতার প্রয়োজন। সবার সহযোগিতা পেলে ভারতবর্ষ বিশ্বের তৃতীয় আর্থিক সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে। তবে শুধু সংখ্যার দিক দিয়ে নয় কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্য সমস্ত সুযোগ সুবিধা সব অংশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এক্ষেত্রে সমবায় একটি বড় ভূমিকা নিতে পারে। সমগ্র দেশে ৮ লক্ষেরও বেশি সমবায় সমিতির মাধ্যমে ৩৫ কোটি মানুষ সমবায়ের সঙ্গে যুক্ত। সকালের চা থেকে শুরু করে রাত্রের খাবার পর্যন্ত সবকিছু সরবরাহে সমবায় একটি বিরাট ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, ত্রিপুরায় নাবার্ডের মাধ্যমে মোবাইল গ্রামীণ মার্ট চালু করা হয়েছে। ৫ জেলায় এই মার্ট আপাতত কাজ করছে। এর মাধ্যমে চাল, আটা ইত্যাদি সুবিধাভোগীদের কাছে সস্তায় পৌঁছে যাবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ সকালে ধলাই জেলায় ব্লু-রিয়াৎ জনজাতিদের পুনর্বাসন এলাকা সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ঐ এলাকায় চারশোর মত পরিবার খুব ভালভাবে আছে দেখে ভাল লাগছে। কিন্তু ঘটনা হল ৩৮ হাজারের মত পরিবার ২৫ বছর ধরে পশুর চেয়েও খারাপ অবস্থায় ছিল। এখানে তখন এমন একটা সরকার ছিল যাদের গরিব, আদিবাসী, বঞ্চিতদের সরকার হিসেবে অভিহিত করা হত। কিন্তু তারা ব্লু-রিয়াং শরণার্থীদের জন্য কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ২০১৮ সালে রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যার পরিনতিতে ২০২০ সালে ৩৮ হাজারেরও বেশি পরিবারকে ভালভাবে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। তাদের জন্যে পাকা ঘর, রাস্তা, পানীয়জল ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়। সমস্ত শিবিরে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। সব ঘরে শৌচাগার যেমন তৈরি করা হয়েছে, তেমনি রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারও পৌঁছে গেছে। তারা যেমন প্রতি মাসে ৫ কেজি করে বিনামূল্যে চাল পাচ্ছেন, তেমনি ৫ লাখ টাকার স্বাস্থ্য সুরক্ষার বীমাও ভোগ করছেন।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা বলেন, সমবায়কে সামনে রেখে রাজ্যের জিএসডিপি এবং গড় মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজ্য সরকার কাজ করছে। বর্তমানে রাজ্যের জিএসডিপি ৮.৯ শতাংশ এবং গড় মাথাপিছু আয় হচ্ছে ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ৭৭৩ টাকা। যা ২০২৩ সালের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। জিএসডিপি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উত্তর- পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির সঙ্গে আমাদের রাজ্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এরজন্য সমবায়ের সঙ্গে যুক্ত সকলকে আরও পরিশ্রম করতে হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রীর উপস্থিতিতে আজকের এই অনুষ্ঠানে রাজ্যের সমবায়কে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দিক নির্দেশিকা পাওয়া যাবে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ভিলেজ কাউন্সিল এলাকায় একটি করে দুগ্ধ ও মৎস্য সমবায় গঠন করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সমবায় দপ্তর কাজ করছে। এছাড়াও আগামী পাঁচবছরে রাজ্যে ৭৪১টি বহুমুখী প্যাকস এবং ২১৯টি দুগ্ধ ও মৎস্য সমবায় গঠন করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এরফলে গ্রামীণ এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থা শক্তিশালী যেমন হবে তেমনি কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সমবায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনানুসারে রাজ্যের প্রতিটি ল্যাম্পস ও প্যাক্সে কম্পিউটার প্রদান করা হয়েছে। রাজ্যের সমস্ত প্যাক্সগুলোকে জাতীয় ডাটাবেসে আনার কাজও সম্পন্ন করা হয়েছে। ল্যাম্পস ও প্যাক্সগুলোতে ই-পরিষেবা আরও ভালভাবে প্রদানের লক্ষ্যে কমন সার্ভিস সেন্টারগুলোকে সমবায়ের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও পেট্রোলপাম্প খোলার জন্যও প্যাক্সগুলোকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের সমবায় সমিতিগুলিকে আরও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে আয়কর ছাড় দেওয়ার বিষয়েও রাজ্য সরকার চিন্তা ভাবনা করছে। পাশাপাশি সমবায় সমিতিগুলির পরিকাঠামোর উন্নয়নেও সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে মুখ্যসচিব জে কে সিনহা বলেন, কেন্দ্রীয় সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অমিত শাহের দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলে সমবায় ক্ষেত্রের গতি অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সমবায় সমিতিগুলির আর্থিক প্রবৃদ্ধিও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন রাজ্য সরকারের সমবায় দপ্তরের সচিব তাপস রায়। অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, লোকসভার সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার এবং কেন্দ্রীয় সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আশীষ কুমার ভুটানি। সমবায় সম্মেলন-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত আজকের এই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র তথা সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অমিত শাহ বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এরমধ্যে রয়েছে ধলাই জেলার হাদুকলাউস্থিত ব্লু সেটেলমেন্ট এলাকায় কতা ব্লু বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের কনজিউমার স্টোর, মোহনপুর মহকুমার কাতলামারাস্থিত দলদলী ল্যাম্পসে সার বিক্রয় কেন্দ্র, অরুন্ধতীনগরস্থিত ত্রিপুরা রাজ্য সমবায় ইউনিয়নের অন্তর্গত স্মার্ট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং উদয়পুরের ছনবন এলাকায় ত্রিপুরা স্টেট কো-অপারেটিভ কনজিউমার্স ফেডারেশন দ্বারা নির্মিত নতুন পেট্রোলপাম্প। এছাড়াও সমবায়মন্ত্রী অমিত শাহ ৫০টি প্রাথমিক সমবায় সমিতিকে মাইক্রো এটিএম প্রদান করেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ