আগরতলা, ২১ ডিসেম্বর: উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিকাশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যাংকগুলি উত্তর পূর্বাঞ্চলকে শুধু ব্যবসার ক্ষেত্র হিসেবে দেখলে হবেনা। এই অঞ্চলের সার্বিক বিকাশে ব্যাংকগুলিকে দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।
আজ আগরতলার হোটেল পোলো টাওয়ারে উত্তর পূর্বাঞ্চল ব্যাঙ্কার্স সম্মেলন-২০২৪ এ প্রধান অতিথির ভাষণে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী অমিত শাহ একথা বলেন। সম্মেলনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ার জন্য সংকল্পবদ্ধ। উত্তর পূর্বাঞ্চলের সম্পূর্ণ বিকাশের মাধ্যমেই বিকশিত ভারত গড়ে উঠবে। বিকশিত ভারত গড়ার পাশাপাশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও উত্তর পূর্বাঞ্চল আগামীদিনে প্রবেশদ্বার হবে। এই বিকশিত ভারতের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের পাশাপাশি সমস্ত উত্তর পূর্বাঞ্চল রাজ্যগুলি এবং প্রত্যেক নাগরিকের আর্থিক সমৃদ্ধি। বর্তমানে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রয়েছে। দেশের উন্নয়নের মূল স্রোতের সাথে যুক্ত হয়েছে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি।
সম্মেলনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের পরিকাঠামো, কৃষি, এমএসএমই ও ব্যক্তিগত উদ্যোগীকে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলিকে আলাদাভাবে উত্তর পূর্বাঞ্চল রাজ্যগুলির প্রতি আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা তৈরী করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলের পরিকাঠামো, বিমান, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়নের ফলে এই অঞ্চলে বিকাশের ধারা উন্মোচিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন নামিদামী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিও উত্তর পূর্বাঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসছে। ভবিষ্যতে ব্যবসাবাণিজ্যের গন্তব্য হয়ে উঠছে উত্তর পূর্বাঞ্চল। উত্তর পূর্বাঞ্চলে ব্যাংক শাখা, এটিএম সহ ব্যাংকিং ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিষেবা বৃদ্ধির উপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। পাশাপাশি যেসমস্ত গ্রামে ব্যাংকিং পরিষেবা উপলব্ধ নেই সেইসব গ্রামগুলিকে ব্যাংকিং পরিষেবার আওতায় আনার জন্য তিনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি বর্তমানে বিকাশের পথে এগিয়ে চলেছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলিকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সম্পূর্ণ বিকাশে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
উত্তর পূর্বাঞ্চল ব্যাঙ্কার্স সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, রাজ্যের অধিকাংশ গ্রাম ব্যাংকিং পরিষেবার আওতায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনায় ১০ লক্ষাধিক জনধন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। রাজ্যের আর্থিক ব্যবস্থার উন্নতিতে কেন্দ্রীয় ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পসমূহ রূপায়িত হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষি, এমএসএমই, মুদ্রা ইত্যাদি ঋণদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশ ও রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশে সিডি রেশিওর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এক্ষেত্রে আগামীদিনে ব্যাংকগুলি সিডি রেশিও বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ডোনার মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বলেন, আগামী দিনে ভারতের অর্থনীতিতে উত্তর পূর্বাঞ্চল গ্রোথ ইঞ্জিন হয়ে উঠবে। এই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে সংকল্পবদ্ধ। তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদি দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর ভারতের অর্থনীতি বিশ্বের পঞ্চম স্থানে পৌছে গিয়েছে। এই উন্নয়ন দেশে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে ভারতের অর্থনীতিকে তৃতীয় স্থানে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ডোনার মন্ত্রী বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলের পরিকাঠামো, সড়ক, সেতু, জাতীয় মহাসড়ক, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা বিমান যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। প্রকৃতির আশির্বাদপুষ্ট উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। রয়েছে এখানে দক্ষ মানবসম্পদ। আগামী দিনে এই অঞ্চল দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার হয়ে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
উত্তর পূর্বাঞ্চল ব্যাঙ্কার্স সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ডোনার প্রতিমন্ত্রী ড. সুকান্ত মজুমদার, ফিনান্সিয়াল সার্ভিস দপ্তরের সচিব এম নাগারাজু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ডোনার মন্ত্রকের সচিব চঞ্চল কুমার। এছাড়াও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সচিব গোবিন্দ মোহন, ডাক সচিব বন্দিতা কল সহ ব্যাংকের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন। ডোনার মন্ত্রক এবং নর্থ ইস্টার্ন ডেভেলপমেন্ট ফিনান্স কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে এই উত্তর পূর্বাঞ্চল ব্যাংকার্স সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
0 মন্তব্যসমূহ