আগরতলা, ৬ ডিসেম্বর : শুধুমাত্র ত্রিপুরা রাজ্য সরকার ত্রিপুরার ভয়াবহ বন্যার পর জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার দাবি না জানানোয় কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। ফলে রাজ্যের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার হাতও গুটিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ সারা ভারত কৃষক সভার ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সম্পাদক পবিত্র করের।
তিনি আরো বলেন, যা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র রাষ্ট্রমন্ত্রী এক চিঠিতে কৃষক নেতা ও সাংসদ অমরা রামকে জানিয়েছেন। এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সারা ভারত কৃষক সভার ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি।আজ এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্য কৃষক সভার সম্পাদক পবিত্র কর এই কথা জানিয়ে বলেন,জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার দাবি থেকে কেন রাজ্য সরকার সড়ে এসেছেন সেটা শোনার জন্য ও ত্রাণ নিয়ে ব্যাপক দলবাজি সহ কৃষকদের ভয়াবহ অবস্থার কথা জানাতে রাজ্য কৃষক সভা গত ১২সেপ্টেম্ব ও ২৫ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে দেখা করতে চেয়েছিল। তিনি সময় দেননি, দ্বিতীয় চিঠির জবাবও দেননি। অথচ নিজেই বিধানসভায় ঘোষণা করেছিলেন ক্ষতির পরিমাণ ১৫হাজার কোটি টাকা। যদিও পবিত্র করের দাবি এই ক্ষতির পরিমাণ ১৮ হাজার কোটি টাকা।তবে রাজ্য কৃষক সভা বসে থাকে নি,জানিয়ে তিনি বলেন,১৫শ কৃষককে যেমন কৃষির প্রয়োজনীয় বীজ সহ অন্যান্য বিষয় দিয়ে সাহায্য করেছে রাজ্য কৃষক সভা তেমনি অন্নদাতাদের সমস্যা নিয়ে দেখা করেছেন রাজ্যের কৃষি মন্ত্রীর সঙ্গেও। পবিত্র কর বলেন তিনি আমাদের দাবি সাথে সহমত পোষণ করেছিলেন । পবিত্র কর বলেন কৃষিমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ীই আমরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম, উনি সময় দেননি, উনি নাকি ব্যস্ত আছেন। তিনি বলেন রাজ্য কৃষক সভা বসে থাকবে না, এই অন্যায় মেনে নেয়া হবে না।তাই আগামী ২০ তারিখের মধ্যে জেলা শাসক পর্যায়ে সমস্ত জেলায় যেমন ডেপুটেশন হবে তেমনি রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে মুখ্যসচিবের কাছেও ডেপুটেশন দেয়া হবে, জানানো হবে নির্লজ্জ দলবাজির কথাও। এরপরও কিছু না হলে জানুয়ারি মাস থেকে ব্যাপক আন্দোলনে নামবে রাজ্য কৃষক সভা।এক প্রশ্নের উত্তরে পবিত্র কর বলেন 'পার্লামেনট চলছে আমাদের তিন সাংসদ রাজ্যের কৃষকদের জন্য কোনো দাবি জানিয়েছেন বলে শুনিনি। তিনি বলেন ধান উৎপাদনের অবস্থা ভয়াবহ। রাজ্যের দুটো চাল কল গত ছ মাস ধরে ধান পাচ্ছেনা , যারঅর্থ ধান নেই। তিনি বলেন সরকার ২৩ টাকা দরে ধান কেনার কথা বলছেন রাজ্যে ১২ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে হাস্যকর ভাবে সরকার কিনবে ২০ হাজার মেট্রিক টন। তিনি প্রশ্ন তোলেন কেরালা ২৯টাকা প্রতি কেজিতে দিতে পারলে ডবল ইঞ্জিন সরকার পারেনা কেন? কোথায় যাবেন অন্নদাতারা? এই পরিস্থিতিতে প্রসঙ্গত পবিত্র কর বলেন
ত্রিপুরায় সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যার ঠিক পরেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সফর করে গিয়েছিলেন কৃষক নেতা তথা সাংসদ অমরা রাম কৃষক সভার কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ পি কৃষ্ণপ্রসাদ। দিল্লি ফিরে গিয়েই সাংসদ অমরা রাম ৩রা সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ত্রিপুরার বন্যার ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা করার দাবি জানিয়েছিলেন। ত্রিপুরার তিন সাংসদ কিন্তু এই ব্যাপারে নিরব। কিচ্ছু করেননি। পবিত্র কর বলেন ত্রিপুরার ঐ বন্যা পরিস্থিতিকে জাতীয় বিপর্যয় বলে ঘোষণা করতেও দাবিও করে ছিলেন সাংসদ অমরা রাম।সাংসদ ও কৃষক নেতা অমরা রামের ঐ চিঠির জবাব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের রাষ্ট্র মন্ত্রী নিত্যানন্দ রায় মহোদয় দিয়েছেন গত ১০ই নভেম্বর। পবিত্র কর বলেন নানা কৌশল করে লেখা ঐ জবাবে মন্ত্রী মহোদয় জানিয়েছেন যে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করা সম্ভব হচ্ছে না।কেন ? এর জবাবে মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্য এই সমস্ত ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার শুধু লজিস্টিক সাপোর্ট ও কিছু আর্থিক সহায়তা করে থাকে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্পষ্টই বলেছেন যে এই সমস্ত আপতকালীন অবস্থায় প্রাথমিক দায়িত্ব রাজ্য সরকারেরই থাকে। মানদন্ড অনুযায়ী SDRF এর অন্তর্গত ১২ টি বিষয়েই এই সাহায্য হয়ে থাকে সেখানে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার কোনো সুযোগ নেই। তিনি জানিয়েছেন ২০২৪-২৫এর জন্য এই SDRF খাতে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় অংশের ৬৩.২০কোটি ও রাজ্যের অংশের ৭.২০কোটি টাকা মোট ৭০.৪০কোটি দুই কিস্তিতে টাকা দেয়া হয়েছে। তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেছেন যে গত ৩১শে মার্চ ২০২৪এ ত্রিপুরা রাজ্য সরকার জানিয়েছিল যে তাদের SDRF ফান্ডে অব্যয়িত ২২৭.৯২ কোটি রয়েছে। সুতরাং বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত অর্থ ত্রিপুরা সরকারের SDRF ফান্ডে ছিল। পবিত্র কর বলেন মন্ত্রী মহোদয় জানিয়েছেন এছাড়া ত্রিপুরার প্রবল বন্যার কথা মাথায় রেখে গত ১লা অক্টোবর ২০২৪এ আরও ২৫ কোটি টাকা NDRF এর পক্ষ থেকে দিয়েছেন।
এছাড়া লজিস্টিক সাপোর্ট হিসেবে NDRF এর ১১টি দল,আসাম রাইফেলসের দুই কলাম, সেনাবাহিনীর তিন কলাম, বিমান বাহিনীর চারটি হেলিকপ্টার কাজ করেছে, যেখানে ৯৩৬জনকে উদ্ধার করেছে ও ৩৮ টি গবাদিপশুকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে যেটা মন্ত্রী মহোদয় উল্লেখ করেছেন। পবিত্র কর বলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী
চিঠিতে বলেছেন অপেক্ষা না করেই ত্রিপুরার বন্যার পরিপ্রেক্ষিতে ২৭আগষ্ট IMCT গঠন করেছে যারা ২৮থেকে ৩০ আগষ্ট ত্রিপুরার বন্যা প্রভাবিত এলাকা সফর করেছেন। ওদের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই নাকি পরবর্তী পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় সরকার গ্ৰহন করবে। পবিত্র কর প্রশ্ন তোলেন 'মন্ত্রী মহোদয়ের আশ্বাস কবে বাস্তবায়ন হবে?'
MNREGA , কৃষি ঋণ মকুব ও আবহাওয়া পূর্বাভাস সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে গ্ৰামীন বিকাশ দফতর, অর্থ দফতর ও মহাকাশ বিজ্ঞান দফতরের কাছে গত ২৮ অক্টোবরের সাংসদ অমরা রামের চিঠি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন বলে পবিত্র কর জানান। আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত রাজ্য কৃষক সভার সহ সম্পাদক রতন দাস, বলেন বন্যার্তদের পাশে রাজ্য সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে । এই বন্যায় আক্রান্তদের জন্য আসা ছিঁটেফোঁটা টাকাও দুর্নীতিবাজদের পকেটে চলে গেছে, দলের বাইরে একজনও কিছুই পায়নি। রাস্তায় নামা ছাড়া কৃষক সভার কাছে বিকল্প নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মতিলাল সরকার,নারায়ন দেব ও নিতাই বিশ্বাস।
পবিত্র কর
সম্পাদক
সারা ভারত কৃষক সভার
ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি।
0 মন্তব্যসমূহ