কমলপুর, ২২ ডিসেম্বর: রিয়াং শরণার্থীদের সমস্যা সমাধানে ত্রিপুরায় আগে যে সরকার ছিল তারা কোন উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি আগেকার সরকার ব্লু রিয়াং শরণার্থীদের উন্নয়নেও কোন কাজ করেনি। ত্রিপুরায় বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ব্রু-রিয়াং শরণার্থীদের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আজ আমবাসার হাদুকলাউ পাড়াতে ৬৬৮ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৬টি নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৭টি নতুন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী অমিত শাহ একথা বলেন। অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ব্লু-রিয়াং শরণার্থীদের আর্থ সামাজিক মানোন্নয়ন ও পুনর্বাসন এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ব্লু-রিয়াং শরণার্থীদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। তাদের আর্থ সামাজিক মানোন্নয়নে পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলিতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয়জল ও বিদ্যুৎ পরিষেবার সুযোগ সম্প্রসারিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, পুনর্বাসনপ্রাপ্ত ব্লু-রিয়াং শরণার্থীদের প্রতিটি পরিবারকে জমি দেওয়া হয়েছে। আবাস নির্মাণের জন্য ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ৪ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায়মন্ত্রী অমিত শাহ আজ ধলাই জেলা সফরে এসে হাদুকলাউ পাড়ায় ব্লু-রিয়াং শরণার্থীদের পুনর্বাসন এলাকা পরিদর্শন করেন। এই পুনর্বাসন এলাকায় রাজ্যে প্রায় ২৩ বছর ধরে শরণার্থী জীবন কাটানো ব্লু-রিয়াং শরণার্থীদের সাথে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মতবিনিময় করেন। পরিদর্শনকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী অমিত শাহ আজ ধলাই জেলার আমবাসার হাদুকলাউ পাড়ায় এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যে ৬টি নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন সেগুলি হল-ধলাই জেলার ব্লুহাপাড়াতে ১ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসবি স্কুল, ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে হেলথ এবং ওয়েলনেস সেন্টার, ১৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাজারশেড, ৪ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ধলাই জেলার বিরাশিমাইল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন, ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত উল্টাছড়াতে হেলথ এন্ড ওয়েলনেস সেন্টার এবং আগরতলা আখাউড়া রোডে স্মার্ট সিটি প্রকল্পে ২৫ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট।
তাছাড়া অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী ভার্চুয়ালি যে ৭টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন সেগুলি হল-আগরতলায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেন্ট্রাল ডিটেকটিভ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ১২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আমবাসা মহকুমা শাসকের নতুন অফিস বিল্ডিং, ১৯ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গন্ডাতুইসায় মহকুমা হাসপাতাল, ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে জিরানীয়ায় অ্যাপ্রোচ রোড সহ ২টি রেলওয়ে ওভারব্রিজ, ৪০ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে খোয়াইয়ের পদ্মবিল আরডি ব্লকের অধীন দেবেন্দ্র চৌধুরী পাড়া (বেলছড়া) থেকে ছনখলা পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ, ১১টি শহরে ৮৮ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট নির্মাণ এবং আগরতলায় ৩১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬ কিমি প্রধান রাস্তার উন্নতিকরণ।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, রাজ্যের ১২টি স্থানে ব্লু- রিয়াং শরণার্থীদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। ভারত সরকার, ত্রিপুরা সরকার, মিজোরাম সরকার ও ব্লু-রিয়াং শরণার্থী প্রতিনিধিদের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৬ হাজার ৯৫৯টি পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। এই পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলিতে ৩৭ হাজার ১৩৬ জন ব্লু-রিয়াং শরণার্থী বসবাস করছেন। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, পানীয়জল প্রভৃতি সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুখ্যসচিব জে কে সিনহা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব, সাংসদ কৃতীদেবী দেববর্মণ, বিধায়ক চিত্তরঞ্জন দেববর্মা ও অন্যান্য অতিথিগণ।
0 মন্তব্যসমূহ