আগরতলা, ৬ জানুয়ারি: স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করছে রাজ্য সরকার। রাজ্যে একটি স্বাস্থ্য হাব গড়ে তোলার উদ্যোগ রয়েছে সরকারের। স্বাস্থ্য পরিষেবাকে গতিশীল করতে রোগীদের সেবাদানের পাশাপাশি রোগীদের পরিজনদের সঙ্গেও একটা ভালো সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে নার্সদের। সোমবার আগরতলার আইজিএম হাসপাতাল কমপ্লেক্সে আগরতলা সরকারি নার্সিং কলেজের দ্বিতীয় ব্যাচের প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। সেই সঙ্গে নার্সিং কলেজে আইটি ল্যাবের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, নার্সিংয়ের বিষয় আসলেই ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের কথা মনে আসে। নার্সিং পেশাকে পেশা হিসেবে না দেখে সেবার দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে গুরুতর আহত ও মুমূর্ষু সৈনিকদের নিজের সেবাদানের মাধ্যমে সুস্থ করে তুলেছিলেন তিনি। এই পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ জন্মগ্রহণ করেছিলেন যারা নিজের কাজের মাধ্যমে চির স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। এমনই একজন ছিলেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল, যিনি নার্সিংকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন। সারা বিশ্বে ১২ মে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিনে আন্তর্জাতিক নার্স (সেবিকা) দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আর আজকের দিনটিও এই মহিয়সী নারীকে শ্রদ্ধা জানানোর দিন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যেকোন প্রতিষ্ঠানের নার্সিং ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী হতে হবে। তাদের সাথে ডাক্তার বাবুরাও রয়েছেন। নার্সরা তাদের সেবাদানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নাম উজ্জ্বল করতে পারেন। কাজের কোন ধরণের বিকল্প নেই। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের আদর্শকে পাথেয় করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে এই নার্সিং প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের। মনে রাখতে হবে যে কাজ আমাকে দেওয়া হয়েছে সেই কাজটুকু একাগ্রতার সঙ্গে করে যেতে হবে। শুধুমাত্র রোগীদের সেবা দেওয়া নয়, রোগীদের পরিজনদের সঙ্গেও একটা ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। পেশাগত ক্ষেত্রে যাওয়ার সময় যে প্রতিজ্ঞা আপনারা করেছেন সেই প্রতিজ্ঞার প্রতিটি শব্দ যেন অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়। সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। এবার এই প্রতিষ্ঠানে ৪৯ জন শিক্ষার্থী যুক্ত হলো। এরআগের বছর ৪৮ জন শিক্ষার্থী ছিল। ত্রিপুরা রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরো সুদৃঢ় করার চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। ১৯৫০ সালে ত্রিপুরায় নার্সিং প্রতিষ্ঠান শুরু হয়েছিল। যেটা গৌহাটি নার্সিং কাউন্সিলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই নার্সিং প্রতিষ্ঠান সারা দেশের প্রশংসা কুড়িয়েছে। ১৯৯৪ এ এই প্রতিষ্ঠান ত্রিপুরা নার্সিং কাউন্সিলের অধীনে চলে আসে।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আগে একটা বিএসসি নার্সিং কোর্সের সিট পাওয়া বিশাল ব্যাপার ছিল। আর আজ প্রায় ৫০টি আসন নিয়ে কলেজ শুরু হয়েছে। আগে ডেন্টালের জন্য একটা, মেডিকেলের জন্য ৫/৭টা আসন ছিল। কিন্তু এখন প্রায় ৪০০টি এমবিবিএস আসন রয়েছে রাজ্যে। ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ আরো ৫০টি আসনের জন্য আবেদন করেছে। এটা হলে মেডিকেলে আসন সংখ্যা প্রায় ৪৫০ হবে। ডাক্তারি পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়লে আমাদেরও উপকার হবে। আজ এখানে আইটি ল্যাব উদ্বোধন হওয়ায় সুবিধা হবে ছাত্রছাত্রীদের। প্রায় ১৫টির মতো কম্পিউটার দেওয়া হয়েছে। স্মার্ট ক্লাশ থেকে সব ধরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এখানে। রাজ্যে একটি এইমস হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। ত্রিপুরায় কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টের কথা আগে কেউ ভাবতে পারেন নি। আর ইতোমধ্যেই দুজন রোগীকে সফলভাবে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়েছে। আগামীতে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেডিকেল এডুকেশনের অধিকর্তা ডাঃ এইচ পি শর্মা, এজিএমসির প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডাঃ অনুপ কুমার সাহা, স্বাস্থ্য দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব রাজীব দত্ত, স্বাস্থ্য দপ্তরের যুগ্ম অধিকর্তা ডাঃ সৌভিক দেববর্মা, আইজিএম হাসপাতালের মেডিকেল সুপার ডাঃ দেবশ্রী দেববর্মা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।
0 মন্তব্যসমূহ