ধর্মনগর, ১৫ ফেব্রুয়ারী : বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এবং বিশেষ করে রতন লাল নাথ কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আলু চাষে রাজ্যকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলার ডাক দেন। এই মিশন সম্পূর্ণ করার জন্য তিনি রাজধানী আগরতলার পার্শ্ববর্তী নাগিছড়া এলাকার রাজ্যিক উদ্যান এবং বাগিচা ফসল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ডেপুটি ডিরেক্টর ড. রাজীব ঘোষকে এই দায়িত্ব তুলে দেন। দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ড. রাজীব ঘোষ দক্ষিণ আমেরিকার পেরুর রাজধানী লিমা শহরের আন্তর্জাতিক আলু গবেষণা কেন্দ্র'র উদ্ভাবিত এআরসি পদ্ধতির রাজ্যে নিয়ে আসেন। রাজ্যের আটটি জেলাতে এই পদ্ধতিটির আলু চাষ গত বছর থেকে শুরু হয়। রাজ্যের অন্যান্য কৃষি মহকুমাতে গত বছর থেকে শুরু হলেও উত্তর জেলার অন্তর্গত যুবরাজনগর কৃষি মহকুমার অধীনে এই বছর থেকে এআরসি পদ্ধতিতে আলু চাষ শুরু হয়। যুবরাজনগর কৃষি মহকুমার অন্তর্গত বিভিন্ন এলাকার চাষিরা মূলত আলুর দানা বীজ টিপিএস দিয়ে চাষ করতে অভ্যস্ত তাই তারা যখন এ আর সি পদ্ধতিতে আলু চাষের কথা শুনেন তখন কিছুটা সংশয়ের মধ্যে ছিলেন। কিন্তু এই কৃষি মহকুমার কৃষি আধিকারিক বিজন কান্তি শর্মা বিভিন্ন এলাকার মাঠে গিয়ে কৃষকদের এআরসি পদ্ধতিতে আলু চাষের বিভিন্ন সুবিধার কথা তুলে ধরেন। উনার পরামর্শে অবশেষে চাষিরা এআরসি আলুর টিউবার এবং চারা গাছ দিয়ে চাষ করতে রাজি হয়। বর্তমানে এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত আলু মাঠ থেকে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। আলুর আকার এবং ফলন দেখে চাষিরা আশঙ্কা ভুলে কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের আধিকারিকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছেন। তাদের বক্তব্য দপ্তরের আধিকারিকদের পরামর্শ অনুসারে আলু চাষ করে অনেক বেশি পরিমাণে ফলন পাচ্ছেন।
সম্প্রতি যুবরাজ নগর কৃষি মহকুমার অন্তর্গত যুবরাজনগর পঞ্চায়েতের এক নম্বর ওয়ার্ডের মাঠের ফসল আহরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান মীনা রানী নাথ, মহকুমা কৃষি আধিকারিক বিজন কান্তি শর্মা, সেক্টর অফিসার প্রগতি শর্মা, গ্রাম সেবক সহ সাধারণ কৃষকগন। এলাকার কৃষক অশ্বিনী কুমার নাথের জমির সামান্য পরিমাণ মাত্র ২৫ বর্গ মিটার অংশ থেকে আলু তোলা হয়। তিনিসহ উপস্থিত এলাকার অন্যান্য কৃষকরা এমনকি গ্রাম প্রধান নিজে আলু তুলার কাজে হাত লাগান। আলুর ফলন দেখে খুশি ব্যক্ত করেন কৃষক অশ্বিনী কুমার নাথসহ অন্যান্য চাষীরা।
অশ্বিনী কুমার নাথ জানান আলুর ফলনে খুশি। এই জন্য তিনি কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরকে ধন্যবাদ জানান। আগামী বছর আরো বেশি পরিমাণ জমিতে এই পদ্ধতিতে আলু চাষ করবেন বলেও আগাম জানিয়ে দেন। পাশাপাশি এলাকার অন্যান্য চাষীরা যাতে আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করে এই আলু চাষে এগিয়ে আসেন এই আহ্বান রাখেন।
মাঠে উপস্থিত পঞ্চায়েত প্রধান মীনা রানী নাথ আলুর ব্যাপক ফলন দেখে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, মাঠে এত পরিমান আলুর উৎপাদন দেখে কৃষকের সঙ্গে তিনিও খুশি। এজন্য রাজ্য সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরকে ধন্যবাদ জানান। এলাকার আরো বেশি সংকট চাষীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে সরকার এই এলাকায় যাতে আগামী বছর আরো বেশি করে আলু বীজ বিতরণ করে এই আহ্বান জানান।
যুবরাজনগর কৃষি মহকুমা আধিকারিক বিজন কান্তি শর্মা বলেন, এবছর প্রথমবার এই এলাকায় এআরসি পদ্ধতিতে আলু চাষ করা হয়। তাই প্রাথমিক ভাবে কৃষকদের মধ্যে আলু চাষ নিয়ে কিছুটা সংশয় তৈরি হয়েছিল, কিন্তু এআরসি পদ্ধতিতে আলু চাষের সুবিধা সম্পর্কে তারা কৃষকদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন। আগরতলা রাজ্যিক উদ্যান ও বাগিচা ফসল গবেষণা কেন্দ্রে আধিকারিকরা তাদের এই পদ্ধতিতে আলু চাষের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। এমনকি আগরতলা থেকে আধিকারিকরা নিজে এখানে এসে কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দিয়েছেন, যার ফল এখন চাষিরা পাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন যুবরাজনগরের মাঠে উদয় জাতের আলু বিঘাপিছু প্রায় ৮২ কুইন্টাল উৎপাদন হচ্ছে। এবছরের ফলন দেখে বুঝা যাচ্ছে আগামী বছর বিপুল সাড়া পাওয়া যাবে। আলু টিউবার এবং চারা গাছ দিয়ে চাষ করা হয়েছে বলে জানান।
0 মন্তব্যসমূহ