Advertisement

Responsive Advertisement

খুব দ্রুত রাজ্যকে আলু বীজ উৎপাদনে স্বয়ংভর করা হবে : রতন লাল নাথ


আগরতলা, ২০ ফেব্রুয়ারী : আমি ভগবানকে সরাসরি দেখিনি, ভগবানের বয়স জানি না তবে কৃষকদের দেখেছি তারা মাঠে সোনার ফসল ফলায় এবং আমাদের মুখে ভাত তুলে দেয়, ফলে তারা আমাদের অন্নদাতা, তাই তাদেরকে প্রণাম। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ জেলার বেতাগা এলাকায় আয়োজিত মাঠ দিবসের অনুষ্ঠানে এই অভিমত ব্যক্ত করেন রাজ্যের কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথ। 
গত তিন বছর ধরে রাজধানী আগরতলার পার্শ্ববর্তী নাগিছড়া এলাকার রাজ্যিক উদ্যান এবং বাগিচা ফসল গবেষণা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে রাজ্যের ৮জেলাতে দক্ষিণ আমেরিকার পেরুর রাজধানীর লিমা শহরের আন্তর্জাতিক আলু গবেষণা কেন্দ্রের উৎপাদিত এ আর সি চারা দিয়ে আলু চাষ হচ্ছে। রাজ্যিক উদ্যান এবং বাগিচা ফসল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ডেপুটি ডিরেক্টর ড. রাজীব ঘোষ নিজে এই এই পদ্ধতির আলু চাষকে রাজ্যব্যাপী ছড়িয়ে দিতে এবং রাজ্যকে আলোবীজ উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। যার ফলে এআরসি পদ্ধতিতে আলু চাষ করে জাতীয় ঘর থেকে প্রায় তিনগুণ পরিমাণে আলু উৎপাদিত হচ্ছে বর্তমানে রাজ্যে। এই রেকর্ড স্পর্শ করতে সক্ষম হয়েছে বেতাগা এলাকার কৃষক সজল ভৌমিক। তিনি সর্বোচ্চ ৬.১ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই এদিন অনুষ্ঠান মঞ্চে মন্ত্রী রতন লাল নাথ সজল ভৌমিককে সংবর্ধিত করে তার পা ছুঁয়ে প্রণাম করে এই অভিমত ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি তিনি আরো বলেন চাষী সজল ভৌমিক তার চেয়ে বয়সে ছোট হলেও কাজের জন্য তিনি অনেক মহান। পাশাপাশি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন গোপাল ঠাকুর ছোট হলেও সকলের আদরের এবং তাকে সবাই প্রণাম করে। তাই অন্নদাতাদের প্রণাম করতেও কোন দ্বিধা নেই। 
 বৃহস্পতিবার এআরসি পদ্ধতিতে উৎপাদিত আলু তোলার মাঠ দিবসের অনুষ্ঠানটি হয় বেতাগার সবুজ মাঠের মধ্যে। এদিনের এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথ, সেই সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক প্রমোদ রিয়াং, দক্ষিণ আফ্রিকার নাইরোবি শহর থেকে আগত আন্তর্জাতিক আলু গবেষণা কেন্দ্রের দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অঞ্চলের প্রধান ড কল্পনা শর্মা, রাজ্যিক উদ্যান গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ড. রাজীব ঘোষ সহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ এবং স্থানীয় লোকজন। 
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, ধানের বীজ উৎপাদনে বর্তমানে রাজ্য স্বয়ংভর, একই ভাবে প্রথমে রাজ্যকে আলো বীজ উৎপাদনে স্বয়ংভর করা হবে পরবর্তী পর্যায়ে ধীরে ধীরে আলু উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা হবে। তাই প্রাথমিক অবস্থায় আলুর এআরসি বীজের পাঁচটি প্রজাতিকে রাজ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। এর ফলে আর্থিক ভাবে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। তিনি আরো বলেন প্রথম বছর সারা রাজ্যের মোট ১০৪ জন কৃষককে পরীক্ষা মূলক ভাবে এই আলু চাষ করতে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বছর ৪০০ জন কৃষককে আলু চাষ করতে দেওয়া হয়। আগামী দিনে ৪ হাজারেরও বেশি কৃষককে এই আলু চাষ করতে দেওয়া হবে। এয়ারসেল আরো নতুন কিছু জাতের আলু রাজ্যে পরীক্ষা মূলক ভাবে চাষের জন্য নিয়ে আসার আহ্বান রাখেন মন্ত্রী। 
দক্ষিণ আফ্রিকার নাইরোবি শহর থেকে আগত আন্তর্জাতিক আলু গবেষণা কেন্দ্রের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান ড কল্পনা শর্মা বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, মানুষের খাদ্যের নিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন, মানুষের পুষ্টি, জীবনযাপনের কথা চিন্তা করে আন্তর্জাতিক আলু গবেষণা কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে। আলুর উৎপাদন বাড়লে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হন। এখানে আলু যে সকল চাষিরা চাষ করেন তাদেরকে নতুন প্রজাতি দেওয়ার উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে তা দেখে গবেষণা কেন্দ্র সন্তুষ্ট বলেও জানান তিনি। আগামী দিনেও রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ ভাবে তাদের প্রতিষ্ঠান কাজ করার বিষয়ে আগ্রহী বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। 
অপরদিকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ড রাজীব ঘোষ বলেন, রাজ্যে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধিকে লক্ষ্য রেখে এআরসি পদ্ধতি পরীক্ষা মূলক ভাবে শুরু করা হয়েছিল। মাত্র ১০০ জনকে নিয়ে তা শুরু হলেও এখন রাজ্যের প্রতিটি কোণায় কোণায় পৌঁছে গিয়েছে। আগামী দিনে আরো বেশি জায়গায় আলু চাষ করা এবং আলুর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে রাজ্যিক উদ্যান এবং বাগিচা ফসল গবেষণা কেন্দ্রের এআরসি ইউনিট কাজ করছে বলেও জানান। 
অনুষ্ঠান মঞ্চে কৃষকরা এ আর সি আলু চাষের বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতার কথা উপস্থিত সকলের সামনে তুলে ধরেন। চাষবাস সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কিছু দাবিদাবাও মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন কৃষকরা। তাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে জল সেচের ব্যবস্থা সহ প্রয়োজনীয় যাবতীয় ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন মন্ত্রী। 
সবশেষে কৃষকের মাঠে গিয়ে আলুর আকার কি পরিমান উৎপাদিত হচ্ছে এক একটি গাছ থেকে তার সরে জমিনে খতিয়ে দেখেন মন্ত্রিসহ উপস্থিত অন্যান্য জনপ্রতিনিধি এবং আধিকারিকরা। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে মন্ত্রী কৃষকদের সঙ্গে মাঠে বসে মধ্যাহ্ন ভোজন হিসেবে খিচুড়ি খাবার খান।
ফেরার পথে তিনি বিলোনিয়া মহকুমার মাইছড়া এলাকার সবজিবীজ উৎপাদন কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন। সেখানে কর্মরত আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন। দীর্ঘ বছর এই কেন্দ্রটিতে তেমন বিশেষ কোনো কাজ হচ্ছে না। তাই এই কেন্দ্রটিকে আবার নতুন করে সাজিয়ে উৎপাদনশীল করে তোলার লক্ষ্যে বেশ কিছু পরামর্শ দেন মন্ত্রী। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এই কেন্দ্রটিকে নতুন করে সাজিয়ে তোলার বিশেষ করে আর্থিকভাবে লাভবান করে তোলার জন্য কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ