আগরতলা, ২৮ফেব্রুয়ারী: রাজ্য সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গঠন করা। তাই সব ধরনের নাগরিক পরিষেবা শুধু শহর এবং শহরতলিতে বসবাসরত মানুষের মধ্যে পৌঁছে দিলেই সরকারের এই লক্ষ্য পূরণ হবে না। সরকারের কাজ হচ্ছে রাজ্যের একেবারে প্রান্তিক এবং প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসরত মানুষের মধ্যেও সরকারি সকল পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া, যদি সরকারি পরিষেবা গুলো প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে দেওয়া না যায় কখনোই প্রকৃত অর্থে এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গঠন করা সম্ভব হবে না, এই অভিমত রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথের। শুক্রবার এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গন্ডাছড়া মহকুমার অন্তর্গত গঙ্গানগর এলাকার প্রত্যন্ত জনজাতি পাড়ায় বিনামূল্যে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
রাজ্যে বহু পাহাড়ি জনপদ রয়েছে যেখানে চিরাচরিত বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া এখনো অত্যন্ত কঠিন কাজ। কারণ এই এলাকাগুলিতে পাকা রাস্তা এখনো পৌঁছায়নি। ফলে দুর্গম এই এলাকাগুলোতে বৈদ্যুতিক খুঁটির মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছে দিলেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্ন হলে তা মেরামত করে পরিষেবা কে দ্রুত স্বাভাবিক করা কঠিন। তবে এই সমস্ত জটিলতার কারণে প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসরত মানুষদেরকে বিদ্যুৎ সহ পরিশ্রুত পানীয় জলপরী সেবা থেকে বঞ্চিত রাখা ঠিক নয়, এই বিষয়টি চিন্তা করে রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ দপ্তর জনজাতীয় অধ্যুষিত প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে সৌরভ শক্তির মাধ্যমে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার গঙ্গানগর এলাকার চারটি চারটি ছোট ছোট পাড়ায় সৌর বিদ্যুৎ পরিচালিত মাইক্রো গ্রিডের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন মন্ত্রী রতন লাল নাথ। পিতা কেটে এই গ্রিড গুলির সূচনা করেন তিনি।
পাহাড়-পর্বত পাড়ি দিয়ে একের পর একটি পাড়াতে ছুটে যান মন্ত্রী নিজে এবং আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এগুলোর। উদ্বোধন শেষে মন্ত্রী জানান, ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির কথা বিশেষভাবে চিন্তা করে "প্রধানমন্ত্রী ডিভাইন" স্কিম চালু করেছেন। ইসক্রিমের মাধ্যমে পাহাড়ি বিভিন্ন জনপদে সৌরশক্তি চালিত মাইক্রো গ্রিড স্থাপন করে এগুলো থেকে গ্রামীন এলাকায় বসবাসরত মানুষের বাড়িতে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ দপ্তর সারা রাজ্যের বিভিন্ন জেলা মিলিয়ে এমন ২৭৪টি গ্রামীন এলাকা চিহ্নিত করেছে যেখানে প্রায় ১০ হাজার পরিবারের বসবাস রয়েছে। এই পরিবারগুলোতে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে মোট ২৭৪ টি মাইক্রো গ্রিড স্থাপন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫৪টি পাড়ায় এমন মাইক্রো গ্রিড নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। বাকি জায়গাগুলোতেও খুব দ্রুত সৌর বিদ্যুৎ পরিষেবার জন্য পরিকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এর জন্য কেন্দ্র সরকার থেকে প্রায় ৮১কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, এর সঙ্গে রাজ্য সরকারও নিজেদের তরফে অর্থ বরাদ্দ করে কাজ সম্পন্ন করছে।
এ গ্রিড গুলো স্থাপনের ফলে গ্রামীণ এলাকার মানুষজন রাত্রিবেলাতেও তাদের প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করতে পারছেন যা তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক। ছেলেমেয়েরা রাতের বেলা বিদ্যুতের আলোতে পড়াশোনা করতে পারছে। বাড়ি ঘরের পাশাপাশি এলাকায় ঘরের বাইরে রাস্তায়ও আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরো জানান শুধুমাত্র বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছে দিয়েই সরকার বসে নেই, সৌর বিদ্যুৎ পরিচালিত পানীয় জল প্রকল্প স্থাপন করে দেওয়া হচ্ছে এই সকল জনপদগুলিতে। যাতে করে গ্রামীণ এলাকার মানুষজন পরিশ্রুত পানীয় জল পান এবং আগের মত ছড়া বা অপরিষ্কার জলের উৎস থেকে জল পান করতে হবে না। এর ফলে তারা জল বাহিত রোগ থেকেও মুক্তি পাবেন। সেইসঙ্গে রাস্তা এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় তাদের পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এই সকল নাগরিক পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, যাতে গ্রামীণ এলাকায় বসবাসরত মানুষ জন সরকারি সকল সংযোগ সুবিধা পান এবং তাদের ঘরের ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা এবং আর্থিক ভাবে উন্নতি করতে পারে। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত মন্ত্রী এই প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করেন। এই সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় ডুম্বুরনগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়িকা সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা।
0 মন্তব্যসমূহ