আগরতলা, ৫ ফেব্রুয়ারি: চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমান রাজ্য সরকার রাজনৈতিক রঙ বিচার না করে মেধা ও যোগ্যতাকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে। যোগ্য মেধাবীরা যাতে বঞ্চিত না হয় সেদিকে নজর রয়েছে সরকারের। চাকরির ক্ষেত্রে পিআরটিসি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বুধবার বিকেলে আগরতলার স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জেআরবিটি কর্তৃক মাল্টি টাস্কিং স্টাফ ও বিভিন্ন পদে অফার বিতরণ অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এই অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করে রাখতে দিল্লি থেকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য দপ্তরে ফার্মাসিস্ট, ল্যাব টেকনেশিয়ান পদে নির্বাচিত প্রার্থীদের হাতেও নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, জেআরবিটির তত্ত্বাবধানে ৩৭টি দপ্তরে আজ ২,৪৩৭টি মাল্টি টাস্কিং স্টাফ (গ্রুপ ডি) পদে অফার দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য দপ্তরে ফার্মাসিস্ট, ল্যাব টেকনেশিয়ান পদে আরো ৩৬৯ জনকে অফার বন্টন করা হচ্ছে। সর্বমোট ২,৮০৬টি পদে অফার বিলি করা হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যের ইতিহাসে এটা একটা উল্লেখযোগ্য বিষয়। রাজ্য সরকারের ঘোষিত নীতি অনুযায়ী বেকারদের সরকারি চাকরি প্রদান ও কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্বচ্ছ নীতির মাধ্যমে আমরা চাকরি প্রদান করছি। বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। আমরা টেট, জেআরবিটি এবং টিপিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ করছি। আমরা এমন একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়া নিশ্চিত করছি যেখানে চাকরিতে নিয়োগের বিষয়ে কাউকে বিচারের জন্য আদালতে যেতে হয় না। আমরা দেখেছি বিগত ৩৫ বছর ধরে কী হয়েছিল, যেখানে নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছিল। আর এখন আমরা রাজনৈতিক রঙ বিচার না করে যোগ্য ও মেধা সম্পন্ন ব্যক্তিদের চাকরিতে অগ্রাধিকার দিয়েছি।
ডাঃ সাহা আরও বলেন জেআরবিটি'র মাধ্যমে ২০২৩ সালে বিভিন্ন দপ্তরে প্রায় ১,৯৮০ জনকে গ্রুপ সি, এগ্রি এসিস্ট্যান্ট এবং অন্যান্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। গ্রুপ সি কর্মচারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। রাজ্যের যুবদের চাকরির সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য আমরা পিআরটিসি বাধ্যতামূলক করেছি। যা পূর্ববর্তী কোন সরকার কখনও করেনি। ২০১৮ থেকে ২০২৪ এর মধ্যে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে মোট ১৬,৪১১ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া আরো প্রায় ৫,৭৭১ জনকে চুক্তিভিত্তিক কিংবা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়েছে। আমরা আরও নিয়োগের জন্য বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগরতলা, ধর্মনগর এবং কৈলাশহরে মোট তিনটি মডেল ক্যারিয়ার সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। আমরা চাকরি মেলারও আয়োজন করছি। ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে এখন অবধি ৯৬টি জব ফেয়ারের মাধ্যমে বেসরকারী সংস্থাগুলিতে প্রায় ২,১৩৫ জনকে কর্মসংস্থান দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে ৫২,৪৬০টি স্ব সহায়ক গোষ্ঠী (এসএইচজি) রয়েছে। যেখানে প্রায় ৪,৭৩,০০০ সদস্য রয়েছেন। দক্ষতা উন্নয়ন দপ্তরের মাধ্যমে আমরা বেকার যুবদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ব্যবস্থা করেছি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মুখ্যমন্ত্রী দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প চালু করা হয়েছিল এবং গত পাঁচ বছরে প্রায় ২২,০০০ যুবক বিভিন্ন রাজ্যে চাকরির সুযোগ পেয়েছে। সমবায় উদ্যোগের মাধ্যমেও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে রাজ্যে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ও কর্মসূচী বাস্তবায়ন মন্ত্রকের উদ্যোগে হওয়া জরিপ অনুসারে ত্রিপুরার বেকারত্বের হার ২০১৮-১৯ -এ জাতীয় গড়ের চাইতে বেশি ছিল। তবে, গত চার বছরে রাজ্যে বেকারত্বের হার জাতীয় গড়ের নিচে নেমে এসেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ত্রিপুরার বেকারত্বের হার ১.৭% এ দাঁড়িয়েছে, তুলনায় যেখানে জাতীয় গড় ৩.২%। ডাঃ সাহা বলেন, কর্মচারীরা হচ্ছেন সরকারের মূল চালিকশক্তি। জনগণের জন্য বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে কর্মচারীরা অপরিহার্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন এবং আমরাও একই দিশায় কাজ করছি।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী প্রণজিত সিংহ রায়, বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ, খাদ্য ও পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্তনা চাকমা, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী টিংকু রায়, রাজ্য মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্য, বিধায়ক, অন্যান্য জনপ্রতিনিধি, রাজ্যের মুখ্যসচিব জে কে সিনহা সহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দপ্তরে মাল্টি টাস্কিং স্টাফ (গ্রুপ ডি) ও বিভিন্ন পদে চাকরি প্রার্থীদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা সহ অন্যান্য মন্ত্রী ও অতিথিগণ।
0 মন্তব্যসমূহ