আগরতলা, ৬ ফেব্রুয়ারি: আজকের শিশুরাই আগামীদিনের ভবিষ্যত। ছোট থেকেই তাদের ভিত্তি মজবুত করে দেওয়ার কাজ করতে হবে শিক্ষক শিক্ষিকাদের। রাজ্য সরকারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচি তৈরি করা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে গুণগত শিক্ষাদান নিশ্চিত করা। যোগ্য ছাত্রছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য ঋণ ও স্কলারশিপের ব্যবস্থা করাও শিক্ষা ক্ষেত্রের অন্যতম উদ্দেশ্য।
বৃহস্পতিবার আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে রাজ্য স্তরের টিচিং লার্নিং মেটেরিয়াল (টিএলএম) প্রতিযোগিতা কাম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, বিল্ডিং নির্মাণের সময় ভিত মজবুত না হলে উপরের দিকে উঠা যায় না। তেমনি শিশুদের শৈশব থেকে ভিত্তি শক্ত করে তুলতে হবে। স্বল্প খরচে এধরণের লার্নিং মেটেরিয়ালের যে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা দপ্তর করেছে সেটা খুবই প্রশংসনীয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি বা জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছেন। আর জাতীয় শিক্ষা নীতির মধ্যে এধরণের টিচিং লার্নিং মেটেরিয়াল তৈরির ব্যবস্থাপনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন আগামীতে দেশ বা পৃথিবী তাদের হাতে থাকবে যাদের কাছে জ্ঞান রয়েছে। জ্ঞান ছাড়া কোন কিছু করা সম্ভব নয়। ভিত্তি কাঁচা হলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আগে আমরা যে সুযোগ পাই নি বা ব্যবস্থাপনা ছিল না, সেই জায়গাগুলি অনুসন্ধানের মাধ্যমে পূরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা দপ্তর।
২০২৬ - ২৭ সালের মধ্যে মৌলিক সাক্ষরতা ও সংখ্যা গোনার দক্ষতা অর্জন করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের ৫ জুলাই দেশব্যাপী নিপুণ মিশন শুরু হয়েছিল। ত্রিপুরায় ২০২২ এর ১৮ নভেম্বর নিপুণ ত্রিপুরা চালু করা হয়। আর সেটার সুফল এখন আমরা পাচ্ছি।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, অনেক সময় নিন্দুকেরা বলেন যে ত্রিপুরার ছাত্রছাত্রীরা ভালো ফলাফল করছে না। এক্ষেত্রে শিক্ষকরা ভালোভাবে পড়াচ্ছে না বলে দোষারোপ করে তারা। এসব নিয়ে অনেক কথা বলে তারা। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সমস্ত স্কুল যাতে ভালো ফলাফল করে। সেই দিশায় কাজ করছে সরকার। ত্রিপুরার মতো ছোট রাজ্যে নিপুণ মিশনের লক্ষ্যমাত্রায় দেড় লাখের মতো শিক্ষার্থী বয়সের মাপকাঠিতে রয়েছে। এতে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষক যুক্ত রয়েছেন। যাদের ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। নিপুণ ত্রিপুরা মিশনের আওতায় সরকারি ও সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্কুল রয়েছে ৪,২২৭টি। এই কর্মসূচির আওতায় ১০,১৮২ জন শিক্ষক এবং প্রাক প্রাথমিক স্তর থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় ৯০ হাজার শিক্ষার্থীর কাছে নিপুণ ত্রিপুরার বিষয়গুলি পৌঁছানো হচ্ছে। নিপুণ ত্রিপুরার সাফল্যের জন্য সিংহভাগ অবদান রয়েছে শিক্ষক শিক্ষিকাদের। তাঁরাই হচ্ছেন এই মিশনের মূল চালিকাশক্তি। আজ এই প্রদর্শনীতে বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন স্কুল অংশগ্রহণ করেছে। সবাই খুব ভালোভাবে প্রদর্শন করার চেষ্টা করেছে।
অনুষ্ঠানে ডাঃ সাহা বলেন, শ্রেণী কক্ষে উদ্ভাবনী শিক্ষাদান আগামীদিনেও ভালোভাবে চালিয়ে যেতে হবে। খুব ভালো লাগে ওয়ার্কশিটের মাধ্যমে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যখন তাদের কাজগুলো সম্পন্ন করে, তখন শিক্ষক হিসেবে আপনাদেরও একটা সন্তুষ্টি আসে। আর টিচিং লার্নিং মেটেরিয়ালগুলি শ্রেণী কক্ষে থাকলে ছাত্রছাত্রীদের জন্যও ভালো। এতে তারা বাড়িঘরের পরিবেশ অনুভব করতে পারবে। মূলত, ৩ থেকে ৭ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের মূল ভিত্তি ও মৌলিক দক্ষতা বিকাশের লক্ষ্যে আপনারা এই কাজটা করছেন। এমনও দেখা যায় শিক্ষক খুব ভালো, একাডেমিক কেরিয়ার ভালো, পণ্ডিত ব্যক্তি, কিন্তু ক্লাশের ভেতর ছাত্রছাত্রীরা ঠিকমতো বুঝতে পারে না। অপরদিকে অন্য শিক্ষক যার পিএইচডি ডিগ্রি নেই, কিন্তু খুবই সহজ সরলভাবে সুন্দরভাবে বুঝান, যারজন্য ছাত্রছাত্রীরা ওই শিক্ষকের অপেক্ষায় থাকে। এই বয়সটা তো তাদের গড়ে তোলার। যেভাবে মাটির প্রতিমা গড়ে তোলা হয়, তাদেরও এটাই সময়। আর টিএলএমের মাধ্যমে এখন যেটা করা হচ্ছে সেটা খুবই কার্যকরী হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের এধরণের টিচিং লার্নিং মেটেরিয়াল প্রদর্শনী জাতীয় স্তরেও খুবই প্রশংসিত হয়েছে। এধরণের ফাউন্ডেশনাল লিটারেসি ও নিউমেরিসিক গ্রেডেড শিক্ষকদের মধ্যে একটা সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা এখানেও প্রত্যক্ষ হয়েছে। আগামীদিনেও এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। বিভিন্ন ব্লক স্তরে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। প্রতিটি জেলা থেকে ২০টি করে টিচিং লার্নিং মেটেরিয়াল নির্বাচিত হয়েছে। এরমধ্যে ১০টি সাক্ষরতার জন্য এবং ১০টি সংখ্যা তত্ত্বের দিক থেকে। এধরণের টিচিং লার্নিং মেটেরিয়াল আরো ভালো করতে হবে। টেকসই যাতে করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এজন্য দপ্তর থেকেও আর্থিক সহায়তা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্লক স্তরে প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতায় সারা রাজ্যের প্রায় ৭ হাজারের অধিক শিক্ষক শিক্ষিকা অংশগ্রহণ করেছিলেন। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৩৩ শতাংশ বেশি। নিপুণ ত্রিপুরা মিশনের অন্যান্য কাজকর্মগুলিও প্রশংসার দাবি রাখে। রাজ্যে নিপুণ ত্রিপুরা মিশনের সঠিক বাস্তবায়নের জন্য ২০০ জন ব্লক রিসোর্স পার্সনকে মূল প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা পরবর্তীতে প্রায় ১০,১৮২ জনের অধিক প্রাথমিক শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, অধিকর্তা এন সি শর্মা, এসসিইআরটির অধিকর্তা এল ডার্লং, রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক শুভকারানন্দ মহারাজ সহ অন্যান্য আধিকারিকগণ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার ও সম্মাননা দেওয়া হয়।
0 মন্তব্যসমূহ