আগরতলা, ১৮ ফেব্রুয়ারি: আগামী কয়েক বছরে চাষযোগ্য জমির ৮০% সেচ কভারেজ অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ত্রিপুরা সরকার। এর পাশাপাশি বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এরমধ্যে রয়েছে ৪৩টি বন্যা সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও নদীর তীরবর্তী এলাকা রক্ষণাবেক্ষণ করা।
মঙ্গলবার রাজস্থানের উদয়পুরে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় অল ইন্ডিয়া স্টেট ওয়াটার মিনিস্টার্স কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের অধীন জাতীয় জল মিশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আমি এই সম্মেলনে অংশ নিতে পেরে খুবই আনন্দিত। আমাদের ত্রিপুরা রাজ্য দেশের মধ্যে তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য। যা ১০,৪৯১ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে। এটা বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চল, যা ৭০ শতাংশ বনভূমি নিয়ে বিস্তৃত। মূলত, এখানকার অধিকাংশ মানুষ জীবনজীবিকার জন্য কৃষির উপর নির্ভরশীল। দ্রুত প্রবাহিত নদী ও সীমিত জল সঞ্চয় করার সুযোগের কারণে রাজ্যে জল-ভিত্তিক সেচ প্রকল্পের খুব কম সুযোগ রয়েছে। তাই কৃষি ক্ষেত্রের অধিক উন্নয়ন ও কৃষকদের আর্থিক অবস্থার মানোন্নয়নে উন্নত সেচ ব্যবস্থার উপর জোর দিয়েছে ত্রিপুরা সরকার। মোট ভৌগোলিক এলাকার নিরিখে ত্রিপুরায় চাষযোগ্য জমি রয়েছে ২৫ শতাংশ। এখন পর্যন্ত চাষযোগ্য জমির জন্য ৪৭ শতাংশের মতো সেচ ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা কয়েক বছরের মধ্যে চাষযোগ্য জমিতে ৮০ শতাংশ সেচ ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি। সেচের জন্য প্রয়োজনীয় জলের ব্যবস্থাপনা করার জন্য বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা, ছোট ছোট বাঁধ নির্মাণ করা ইত্যাদি ব্যবস্থাপনায় জোর দিয়েছে সরকার। আমরা ৯৮টি ক্ষুদ্র সেচ ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা চিহ্নিত করেছি, যা ৩০ হাজার হেক্টর জমিকে কভার করবে। এজন্য ১৪টি প্রকল্প চলমান রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ত্রিপুরায় ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডার রয়েছে। দীর্ঘ বর্ষাকাল ও বিস্তৃত বনাঞ্চল থাকায় আমাদের রাজ্যে প্রচুর ভূগর্ভস্থ জলের সংস্থান রয়েছে। আমরা জাতীয় গড়ের তুলনায় ভূগর্ভস্থ জলের মাত্র ৯.৪৮% ব্যবহার করি। সেচ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা ও পানীয়জলের সমস্যা নিরসনে ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনে জোর দেওয়া হয়েছে। জল শক্তি অভিযান সূচনা হওয়ার পর থেকে বৃষ্টির জল ধরে রাখা, বার্ষিক নিষ্কাশনযোগ্য ভূগর্ভস্থ জলের সম্পদ ২০২৩ সালে ১.০৬৩ বিলিয়ন কিউবিক মিটার থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ১.১৮ বিলিয়ন কিউবিক মিটার হয়েছে। রাজ্য সরকার জল সংরক্ষণ, বৃষ্টির জল সংগ্রহ, পুরনো জলাশয় সংস্কার, ওয়াটারশেড উন্নয়ন সহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জল শক্তি অভিযানের অধীনে ৪৫,০০০ এরও অধিক জলের পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। রাজ্যের ৮টি জেলায় ৯৭৫টি অমৃত সরোবর এবং ১৪শ শতকের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী জলের কাঠামো পুনর্জীবিত করা হয়েছে। ২০১৯ সালে জল জীবন মিশন (জেজেএম) এর সূচনা করার সময় শুধু ২৪,০০০ গ্রামীণ পরিবারে (৩.২৬%) নলের মাধ্যমে জলের সংযোগ ছিল। আর ২০২৫ এর ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬.৩৮ লক্ষ পরিবারে (৮৫%) নলের জলের সরবরাহ সুনিশ্চিত হয়েছে। পাহাড়ী অঞ্চলে যেখানে ভূগর্ভস্থ জলের অপ্রতুলতা রয়েছে সেখানে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে স্থানীয় উৎস সহ বিভিন্ন উদ্ভাবনী জল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা আরো বলেন, ৪,৩৪৭টি স্কুলে (৯৬%) এবং ৮৮,৪৩৫টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে (৯৬.১০%) নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সমস্ত গ্রামীণ এলাকায় ২০২৫ এর ৩১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১০০% কভারেজ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শহর এলাকায় আমরা ত্রিপুরার ১২টি শহরে ২৪x৭ পানীয়জল সরবরাহ নিশ্চিত করতে এডিবি থেকে সহায়তা নেওয়া হয়েছে। অমৃত ২.০ এর অধীনে আমরা ৮টি শহর জুড়ে পানীয়জল সরবরাহ প্রকল্প গ্রহণ করেছি। মুখ্যমন্ত্রী নগর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে আগরতলা এবং অন্যান্য জায়গায় থাকা জলের উৎসগুলি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরার ১০টি বড় নদী রয়েছে, যা দ্রুত প্রবাহিত হয়। বর্ষার সময় এসকল নদীর তীরবর্তী এলাকা ক্ষয়ের দরুণ বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। গত বছর ত্রিপুরা রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত প্রত্যক্ষ করেছিল এবং আমাদের বেশিরভাগ নদী অধিক বন্যার জলের রেকর্ড স্থাপন করেছিল। বন্যার ফলে রাজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। আমাদের সরকার বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ৪৩টি বন্যা সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও নদী তীরবর্তী এলাকায় রক্ষণাবেক্ষণ করা। ২০৪৭ সালের মধ্যে সুসংহত ও স্থায়ী জল সম্পদ পরিচালনার জন্য একটি বিস্তৃত ও নির্দিষ্ট অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করছি আমরা।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী সি আর প্যাটিল, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মা, উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি, ছত্তিশগড়ের উপ মুখ্যমন্ত্রী অরুণ সাউ, কেন্দ্রীয় জলশক্তি প্রতিমন্ত্রী ড. রাজভূষণ চৌধুরী, হিমাচল প্রদেশের উপ মুখ্যমন্ত্রী মুকেশ অগ্নিহোত্রী সহ বিভিন্ন রাজ্যের মন্ত্রী, মুখ্যসচিব, অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সহ অন্যান্য শীর্ষ পদাধিকারীগণ।
0 মন্তব্যসমূহ