Advertisement

Responsive Advertisement

’এক দেশ, এক নির্বাচন’ প্রক্রিয়ায় অর্থনীতি ও গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা অনেক সুদৃঢ় হবে: মুখ্যমন্ত্রী


আগরতলা, ২৬ ফেব্রুয়ারি: ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থনীতির পাশাপাশি গনতান্ত্রিক ব্যবস্থাও অনেক সুদৃঢ় হবে। আর এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আর্থিক ব্যবস্থা সমৃদ্ধির পাশাপাশি রাজনীতি ক্ষেত্রেও অনেক সুস্থিতি আসবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই প্রক্রিয়াকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। 
বুধবার আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। 
সভায় মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ সময়ের সঙ্গে খুবই প্রয়োজন। এটা খুবই একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা কিছুদিন আগেও জিএসটি নিয়ে কর্মশালা করেছিলাম। সেখানেও ব্যবসায়ীরা সম্পৃক্ত রয়েছেন। সবক্ষেত্রেই ব্যবসায়ীদের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পর ব্যবসায়ীদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের সম্মান দেওয়া হয়। গতকাল গুয়াহাটির এক অনুষ্ঠানেও সেটা প্রত্যক্ষ করেছি। বিগত ৩৫ বছরের রাজত্বে বা তার আগে ব্যবসায়ীদের শ্রেণীকে শত্রু মনে করা হতো। আর আজ এই কার্যক্রমে ব্যবসায়ীদের ডাকার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এক দেশ, এক নির্বাচন’ সম্পর্কে আরো সচেতন করা। 
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কথায় কথায় নির্বাচন আসলে মনে হয় যে আবার নির্বাচন! প্রতি বছরই কোন না নির্বাচনের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। নির্বাচন যখনই হয় তখন বিভিন্ন স্কুলের মধ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া হয়। এতে স্কুল বন্ধ থাকছে। সেক্ষেত্রে এক দেশ, এক নির্বাচন’ ভাবনা সঠিক হতে পারে। এতে ৫ বছরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়টা অন্তত স্বস্তি। প্রতি বছর বছর নির্বাচন হলে বিভিন্ন সমস্যা। আর ৫ বছরে নির্বাচন হলে ভোটের হারও বাড়বে। এতে অনেক মানুষ ভোট দানে সামিল হবেন। এর মাধ্যমে অর্থনীতির পাশাপাশি গনতান্ত্রিক ব্যবস্থাও অনেক সুদৃঢ় হবে। আর এটা অবশ্য সময়ের দাবি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এনিয়ে বার বার চেষ্টা করছেন। ২০১৯-এ তিনি এবিষয়ে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এবার ২০২৪-এ তিনি এবিষয়টি সংসদে নিয়ে আসেন। এরআগে কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির রিপোর্টও (১৮,০০০ পৃষ্ঠা) জমা পড়েছে। কত পরিশ্রম করে কতকিছু চিন্তাভাবনা করে সেই রিপোর্ট তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। 
আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, যখনই কোন নির্বাচন হয় তখন নির্বাচন কমিশনের আধিকারিক থেকে শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী সহ অন্যান্যদের যুক্ত হতে হয়। আর এসব করতে গিয়ে সব জায়গাতেই বিরাট অংকের অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ হলে আমাদের বেশকিছু ক্ষেত্রে সুবিধা হবে। এডমিনিস্ট্রেটিভ এন্ড ইকোনমিক এফিসিয়েন্সিতে আর্থিক খরচের পরিমাণ অনেক হ্রাস পাবে। শিক্ষক কর্মচারীদের সময় ব্যয়ের পরিমাণ অনেক কমে যাবে। উন্নয়নমূলক কাজে আরো গতি আসবে। বিশেষ করে নির্বাচনী প্রক্রিয়া জারি থাকলে কোড অফ কন্ডাক্টের কারণে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফাইলে সই করা যায় না। এতে ফাইলের পর ফাইল জমা হয়ে যায়। ক্যাবিনেটেও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। এতে সমস্যা হয় মানুষের। যেমন বিভিন্ন স্বশাসিত সংস্থার নির্বাচন, বিধানসভা নির্বাচন, লোকসভা নির্বাচন, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন, পুরসভার নির্বাচন ইত্যাদি নির্বাচনের জন্য কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। 
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ প্রক্রিয়ায় দুই পর্যায়ে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচন। আর ৩ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে লোক্যাল বডির নির্বাচন হবে। আমি এই প্রক্রিয়াকে সত্যিকার অর্থে সমর্থন করি। এতে দেশের গণতন্ত্র অনেক শক্তিশালী ও মজবুত হবে এবং ভোটারদের মধ্যেও অনেক উৎসাহ বাড়বে। আর্থিক ক্ষেত্রেও অনেক লাগাম টানা যাবে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ১৯৮৪ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির ম্যানিফেস্টোতে ৫ বছর অন্তর অন্তর এক দেশ এক নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তদানীন্তন কেন্দ্রীয় সরকার ও বামেদের চাপে এই প্রক্রিয়া সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যায় নি। কিন্তু আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বিষয়ে খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি যা ভাবেন সেটাই করেন। ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কস্ট এফিসিয়েন্সি, গভর্নেন্স এন্ড স্ট্যাবিলিটি, ফেডারেল স্ট্রাকচার এন্ড কো অর্ডিনেশন, ভোটার টার্ন আউট এন্ড এনগেজমেন্ট এবং ইকোনমিক বেনিফিট অনেক শক্তিশালী হবে। আর এটাই আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৫৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। অথচ এই অর্থ আমাদের কাছে থাকলে জিডিপির হারও বৃদ্ধি পেত। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রায় ১.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়াও এক একটি পার্টিকেও টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ হলে যারা কালো টাকা খরচ করে নির্বাচনের লড়াইয়ে সেটা কিন্তু বন্ধ হয়ে যাবে। হিসেব বিহীন তহবিলও মোকাবিলা করা যাবে। 
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে যে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়া হয়েছিল তাতে সদস্য হিসেবে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, গুলাম নবি আজাদ, হরিশ সালভে সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। আর ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। আমরা দেখেছি বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এধরণের ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ হয়। যেমন ব্রাজিল, সুইডেন, বেলজিয়াম, সাউথ আফ্রিকা, জার্মানি, জাপান, ইউএসএ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স সহ বিভিন্ন দেশে এক দেশ এক ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশে কেন হবে না? 
যারা আর্থিক সমৃদ্ধি চান আমি আশা করি তারা ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ এর স্বপক্ষে তাদের মত প্রদান করবেন। ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সরকার ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ নিয়ে একটি বিল লোকসভায় পেশ করে। ২৬৯ জন এই বিলের পক্ষে ভোট দেন। আর বিপক্ষে ভোট দেন ১৯৮ জন। 
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ তথা ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর সব্যসাচী দাশগুপ্ত, অল ত্রিপুরা মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রতন সাহা, ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ ত্রিপুরা প্রদেশ কনভেনর ড. জহর লাল সাহা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ