আগরতলা, ২৩ মার্চ: যুবারা দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের চিন্তাধারা, বিবেক, বুদ্ধি জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। এলক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৯ সাল থেকে সারা দেশে বিকশিত ভারত যুব সংসদ আয়োজন করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এটা এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের সংবিধানের গরিমাকেই সমৃদ্ধ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা আজ ত্রিপুরা বিধানসভা ভবনে আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক বিকশিত ভারত যুব সংসদ প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের উদ্যোগে এবং ত্রিপুরা বিধানসভার সহযোগিতায় এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে সারা রাজ্যের বিভিন্ন মহাবিদ্যালয় থেকে ৩৮ জন ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়। এর আগে জেলাভিত্তিক প্রতিযোগিতায় প্রায় ৪০০ জন ছাত্রছাত্রী অংশ নিয়েছিল। রাজ্যভিত্তিক প্রতিযোগিতার বিষয় হলো ভারতীয় সংবিধানের ৭৫ বছর: অধিকার, কর্তব্য এবং অগ্রগতির যাত্রা এবং সংবিধান দিবসের ১১তম সংকল্প: ভারতের সাংবিধানিক মূল্যবোধকে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার। প্রতিযোগিতায় ছাত্রছাত্রীরা বাংলা, ইংরেজী এবং হিন্দি ভাষায় তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ার প্রয়াস নিয়েছেন। এলক্ষ্য বাস্তবায়ণে শুধু প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী নয় সকলকে এক সাথে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, রাজ্য বা দেশের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য যুবাদের চিন্তা, ভাবনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। কিভাবে যুব সমাজ দেশের গতিশীল শক্তি এবং ভবিষ্যতের স্থপতি হতে পারবে এলক্ষ্যেই দেশে এই যুব সংসদের আয়োজন করা হচ্ছে। এর ফলে যুবারা রাজনীতিতে আসার উৎসাহ পাবে। তিনি বলেন, জাতি গঠনের জন্য তরুণদের নিজস্ব চিন্তা, চেতনা ও উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ১৮ থেকে ২৫ বছরের যুবারাই দেশকে নতুন পথ দেখাবে। রাজ্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলনে, আমাদের রাজ্যের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা, সংস্কৃতি ইত্যাদির মাধ্যমে রাজ্যের সুনাম অর্জন করছে। বলাযায়, ত্রিপুরা আজ দেশের মধ্যে এক উজ্জ্বল স্থানে রয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অশান্তি বিরাজ করত। ত্রিপুরাও বাদ ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে আজ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শান্তি ফিরে এসেছে। জি-২০ সম্মেলনেও প্রধানমন্ত্রী দেশকে পৃথিবীর কাছে নতুন বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যুব সংসদের মাধ্যমে যুব সমাজের কাছে এক নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরী করেছেন। তিনি বলেন, আজকের যুবারা যদি ভবিষ্যতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে পবিত্র বিধানসভা ও লোকসভায় আসে তাহলে দেশ আরও উপকৃত হবে।o
বিশেষ অতিথির ভাষণে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী টিসু রায় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সকলকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, রাজ্যের ৮ জেলায় মাই ভারত পোর্টালের মাধ্যমে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী মোট ২৭০০ জন শিক্ষার্থী এই ইভেন্টের জন্য নাম নিবন্ধন করে। ৮ জেলায় ৪০০ জন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। আজ রাজ্যস্তরে অংশ নিয়েছে ৩৮ জন। আগামী এপ্রিল মাসে নতুন দিল্লির সংবিধান ভবনে অনুষ্ঠিতব্য যুব সংসদে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থানাধিকারীকে পাঠানো হবে। আমাদের আশা তারা রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করবে। তিনি বলেন, খেলাধুলা, সংস্কৃতি সহ বিভিন্ন ইভেন্টে রাজ্য দিন দিন এগিয়ে চলছে। পদ্মাশ্রী জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকার পৃথিবীর কাছে ত্রিপুরার নাম উজ্জ্বল করেছেন। আমাদের আশা দেশ গঠনে এই যুব সংসদ দেশের জন্য সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করবে।
সন্মানিত অতিথির ভাষণে ত্রিপুরা বিধানসভার সরকারি মুখ্যসচেতক কল্যাণী রায় বলেন, যুবারা দেশের ভবিষ্যৎ। এই যুব সংসদে যে সংখ্যায় যুবক-যুবতীরা অংশ নিয়েছে তা প্রশংসার দাবী রাখে। তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠান এক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান। আজ মেয়েরাও রাজনীতিতে পিছিয়ে থাকতে চায় না। সরকার মেয়েদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। প্রতিযোগিতায় প্রধান বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন। জুরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা, বিধায়ক অভিষেক দেবরায় এবং বিধায়ক অন্তরা সরকার দেব। উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক কিশোর বর্মণ, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের সচিব ড. প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী, অধিকর্তা সত্যব্রত নাথ সহ বিশিষ্টজনেরা। প্রতিযোগিতায় যথাক্রমে ১ম, ২য় এবং ৩য় স্থান অর্জন করেছে আরিয়ান সরকার, ইপ্সিতা ঘোষ এবং মিতকী মেস্কা। অতিথিগণ তাদের হাতে ট্রফি ও শংসাপত্র তুলে দেন। অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের হাতে অতিথিগণ শংসাপত্র তুলে দেন।
0 মন্তব্যসমূহ